হু হু করে বাড়বে মৃত্যু! কতটা মারাত্মক এই নয়া BF.7 কোভিড ভ্যারিয়েন্ট?

Covid-19 Alert in India: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোভিডের আশঙ্কা বাড়লেও, সামনে বড়দিন ও গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও বাধা থাকছে না।

চিনে আবারও আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে কোভিডের ঘটনা। দ্রুত বেগে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলি। বেড পেতে কালঘাম ছুটছে রোগীদের। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল তিন বছর আগে, যখন কোভিড-১৯ ত্রাস সৃষ্টি করেছে চিনে। কিন্তু মহামারীর রূপ নেয়নি তখনও। সম্প্রতি নোভেল করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্ট চিনে ত্রাস সৃষ্টি করেছে, সেই BF.7 ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেল ভারতেও। এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় অবধি সারা ভারতে মোট চারজন ব্যক্তি BF.7 ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’টি ঘটনা গুজরাতের এবং বাকি দু’টি ঘটনা ওড়িশার।

কী এই BF.7 ভ্যারিয়েন্ট এবং কতটা মারাত্মক এটি?

ওমিক্রোন BA.5 বা 22B সাব-লিনিয়েজেরই একটি ভ্যারিয়েন্ট এই BF.7। যার সংক্রমণের ক্ষমতা ওমিক্রোনের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি। শুধু তাই নয়, BF.7 ভ্যারিয়েন্টটি একবার আক্রমণ করার পর আবারও আক্রমণ (reinfection) করতে পারে। দেখা যাচ্ছে, কোভিডের টিকাকরণের পরে আমাদের শরীরে যে অনাক্রম্যতা তৈরি হয়েছে, তাকে হার মানিয়েই মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে BF.7। এই ভ্যারিয়েন্টটির ইকিউবেশন পিরিয়ড পাঁচ দিন। অর্থাৎ সংক্রমিত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই দেখা যাবে রোগের লক্ষণগুলি।

‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টটি মূলত শ্বাসনালির উপরিভাগকে আক্রমণ করে। লক্ষণ হিসেবে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, নাক থেকে জল পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। তবে উপসর্গযুক্ত (Symptomatic) রোগীদের পাশাপাশি উপসর্গহীন (Asymptomatic) রোগীও রয়েছে। সাম্প্রতিক একটি প্রি-প্রিন্টে (তথ্য সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া) জানানো হয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত এক মিলিয়নের কাছাকাছি মৃত্যু ঘটতে পারে। সেই গবেষণাতেই জানানো হচ্ছে, যদি কোভিডের টিকার চতুর্থ ডোজ় নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সংক্রমণের হার কমবে। লাভবান হবে ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ।

আরও পড়ুন- কোভিডের টিকাতেই ছিল মৃত্যুফাঁদ! বিস্ফোরক যে তথ্য আসছে প্রকাশ‍্যে

‘ইকোনমিক টাইমস’ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংক্রামিত হওয়ার পরে প্রথম সাতদিন হয়তো গুরুতর কিছু হবে না। তবে তারপরেই হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হতে পারে ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে। তবে চলতি বছর অক্টোবর মাসে এই BF.7 ভ্যারিয়েন্টটি গুজরাতে পাওয়া গেলেও, সেই সময় সংক্রমণ গুরুতর ভাবে বাড়েনি বলেই জানা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সন্ধ্যেতে একটি সাংবাদিক বৈঠকে দেশবাসীকে সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে সচেতন করে জানিয়েছেন, শরীরে কোভিডের লক্ষণ দেখা গেলে অতি অবশ্যই যেন পরীক্ষা করাই আমরা। এর পাশাপাশি উপযুক্ত কোভিডবিধি পালনের দিকে জোর দিয়ে আবারও মাস্ক ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মোদি জানিয়েছেন কোভিডের জন্য বিভিন্ন সতর্কতা নেওয়ার পাশাপাশি, কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলির জিন সিকোয়েন্সিংয়ের উপর জোর দেওয়া দরকার।

গতকাল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, স্বাস্থ্য এবং পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ড: মনসুখ মাণ্ডব্য, নীতি আয়োগের কর্ণধার শ্রী পরমেশ্বরণ আইয়ার প্রমুখ।

 

আবারও বন্ধ হচ্ছে স্কুল-কলেজ?

এখনই স্কুল-কলেজ বন্ধ করার কোনও প্রয়োজন হবে না বলেই জানা যাচ্ছে। কিন্তু যদি স্কুল-কলেজ বন্ধের প্রয়োজন হয়, সেই নির্দেশ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের তরফে স্কুল-কলেজগুলিতে পাঠানো হবে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা মাথায় রেখে স্কুল ও কলেজে কোভিড-সতর্কতা পালন করতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। যার মধ্যে অন্যতম স্কুল-কলেজ চলাকালীন সবার মাস্ক পরা, কোভিড টিকার সমস্ত ডোজ় নেওয়া এবং অবশ্যই ভিড় এড়িয়ে চলা।

বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্যে কী নিয়ম?

গতকাল অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর অবধি সারা দেশজুড়ে কোভিডে সংক্রমণের ঘটনা ক্রমশ কমতে দেখা গেলেও সারা বিশ্বে হু হু করে বাড়ছে কোভিডের ঘটনা। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে সারা বিশ্বে কোভিডে দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল গড়ে ৫.৯ লক্ষ। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে চিন তো বটেই, তার পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আশঙ্কাজনক ভাবে কোভিডের সংক্রমণ বাড়ছে।

সেই কথা মাথায় রেখেই কোভিডের জন্যে কড়া সতর্কতা পালন করতে আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, কোভিড এখনও অবলুপ্ত হয়ে যায়নি। সারা বিশ্বে কোভিড সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলিতেও সতর্কতা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- কোভিডের পর আবার বিশ্বজুড়ে হু হু করে ছড়াচ্ছে বিরল ভাইরাস! কতটা ভয়ংকর এই অসুখ?

বিদেশ থেকে ভারতে আসা যাত্রীদের জন্য গতকালই নতুন কোভিডবিধি জারি করা হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া টুডে’-এর সূত্রে জানা যাচ্ছে, নতুন কোভিডবিধি অনুযায়ী বিদেশ থেকে আসা কোনও যাত্রীর যদি কোভিডের লক্ষণ থাকে, তাহলে তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। এই ধরনের যাত্রীদের ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করা এবং বিমানের বাকি যাত্রীদের থেকে আলাদা থাকা বাধ্যতামূলক। যাত্রা শেষে বিমান থেকে নামার পরে উপযুক্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

এছাড়াও বিদেশ থেকে ভারতে আসা সমস্ত যাত্রীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের যে কোনও বিমানবন্দরে নামার পরে বিমানের দুই শতাংশ যাত্রীর ‘র‍্যান্ডম টেস্টিং’ করা হবে। নিজেদের নমুনা জমা দিয়ে তবেই তাঁরা বিমানবন্দর ছাড়তে পারবেন।

কোভিড ভ্যারিয়েন্টগুলিকে নজরে রাখতে কড়া পদক্ষেপ কেন্দ্রের

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিকে কোভিড রোগীদের সমস্ত নমুনা বাধ্যতামূলক ভাবে INSACOG Genome Sequencing Laboratory-তে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের পেছনে মূল উদ্দ্যেশ্য নোভেল করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলির উপরে নজর রাখা। এর ফলে নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট উদ্ভব হলে আগেভাগেই সচেতন হওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি কোন দেশ থেকে কোন কোন ভ্যারিয়েন্ট ভারতে এসে ঢুকছে, সে বিষয়েও সজাগ থাকা যাবে।

তবে কিছুক্ষণ আগেই আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোভিডের আশঙ্কা বাড়লেও, সামনে বড়দিন ও গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও বাধা থাকছে না।

More Articles