ফের বিশ্বকে অতিমারীর অন্ধকারে ঠেলে দেবে চিন?
করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে চিনের সাংহাই শহরে। সংক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে সাংহাই। রেকর্ড পরিমাণ সংক্রমণের মধ্যেই বুধবারের মধ্যে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে তৎপর স্থানীয় প্রশাসন।
রিপোর্ট বলছে, কোভিডের এই নতুন ঢেউয়ে শনিবার পর্যন্ত সাংহাইতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ। পানীয় জল ও খাদ্যের অভাব, আয়ের পথ বন্ধ থাকার পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলির নিম্নমানের পরিকাঠামো নিয়ে নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছন। স্থানীয় অধিবাসীদের তীব্র প্রতিবাদ ও পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষের কারণে কিছুটা চাপা উত্তেজনাও রয়েছে শহরে। এই অবস্থায় দ্রুত সাধারণ জীবনে ফিরতেই বুধবারের মধ্যে সংক্রমণ কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, ২৮ মার্চের পর থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন জারি করা হয়েছিল শহরজুড়ে।
সরকারি তথ্য বলছে, সোমবার চিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ৬৪০ জন মানুষ।এর মধ্যে ২,৭৪২ জনের শরীরে কোভিডের উপসর্গ রয়েছে। মোট আক্রান্তের ৯৫ শতাংশ অর্থাৎ, ২২ হজার ২৫১ জন আক্রান্তই সাংহাই শহরের বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে ২,৪২০ জনের দেহে কিছু উপসর্গ রয়েছে এবং বাকিরা সকলই উপসর্গহীন। এই মুহূর্তে ৫০ হাজারের বেশি শয্যা-সহ ১০০ কোয়ারেন্টিন সেন্টার রয়েছে শহরের বুকে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এলেই তাঁকে পাঠানো হচ্ছে এই সেন্টারগুলিতে। শূন্য কোভিড সংক্রমণ নীতি অনুসরণ করে দ্রুত সংক্রমণের হার কমাতে চাইছে প্রশাসন। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, 'এক্ষুনি করোনা বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া সঠিক হবে না দেশের জন্য।'
মার্চের শুরু থেকে করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হতেই দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। দৈনিক সংক্রমণও ২৫ হাজার পার হয়ে যায়। সরকারি এক কর্তা সোমবার জানিয়েছেন, শহরে এই প্রথম তিনজনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। তাঁর কথা অনুসারে, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই এঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং সবরকম প্রচেষ্টার পরও তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মৃত তিনজনের মধ্যে দু'জন মহিলা (একজনের বয়স ৮৯ এবং অন্যজন ৯১) এবং একজন ৯১ বছর বয়সি বৃদ্ধ।
আরও পড়ুন: খাদ্যের অভাবে লুঠ করতে হচ্ছে মানুষকে, কেন এই অবস্থা হল চিনের?
প্রতিবাদের জেরে গত সপ্তাহ থেকেই বিধিনিষেধ খানিক আলগা করতে শুরু করেছে প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে যে, শহরের কিছু সুপারমার্কেট খুলে দেওয়ার হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। এই তথ্য অনেক শহরবাসীই মানতে নারাজ। তবে এখনও পর্যন্ত অফিসগুলো বন্ধই রয়েছে। সরকারি এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, বিধিনিষেধ কমলেও পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি, তাই কোনওরকম ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল এক্ষেত্রে।
শুক্রবার চিনের শিল্প অধিকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা ৬৬৬টি কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। এগুলির প্রত্যেকটি অটোমোবাইল এবং চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কোম্পানি।
সোমবারও শহরে যেভাবে মানুষ করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন এতে বুধবারের মধ্যেই সংক্রমণ কমানো সম্ভব কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে শুধু চিন নয়, ভারতেও বেড়েছে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯০% বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ। একদিনে সংক্রমণ ১১৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১৮৩। এখনই যে শেষ হয়ে যায়নি অতিমারী, এই সংখ্যা তারই প্রমাণ।