CPI(ML): ৩৫ বছর পর পুনরুত্থান । বাংলায় লাল ফিরবে? যা জানালেন দীপঙ্কর...
Bihar Lok Sabha CPI(ML) seats: শেষবার সিপিআই(এমএল) প্রার্থী বিহার থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। সেবার রামেশ্বর প্রসাদ আরাহ থেকে জিতেছিলেন।
২০২০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বেশ ভালো অবস্থানে ছিল সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও বিহারে দু'টি আসন জিতেছে তারা। তবে দল দু'টি আসন জিতলেও বিরোধী জোট সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৮ টি আসন জিতবেন ভেবেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তাই নির্বাচনে সীমিত শক্তি নিয়ে লড়েও ফল যে খুবই আশাব্যাঞ্জক তা বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে দু'টি আসন জিতেও ৩৫ বছর পর এক রেকর্ড গড়ল এই দল।
লোকসভা নির্বাচনে বিহারে এবার সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থী সুদামা প্রসাদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বর্তমান সাংসদ আর কে সিংকে হারিয়ে বিজেপির কাছ থেকে আরাহ লোকসভা আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে কারাকাট থেকে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থী রাজা রাম সিং ভোজপুরি অভিনেতা ও গায়ক পবন সিংকে হারিয়ে জিতেছেন। সুদামা প্রসাদ মিষ্টির দোকান চালাতেন। সেখান থেকে তিনি হয়ে ওঠেন কৃষক নেতা। রাজা রাম রাজনীতিতে আসার আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। ১৯৮২ সালে দশম শ্রেণির পর স্কুল ছেড়ে দেন সুদামা এবং IPF-এর একজন পূর্ণ-সময়ের কর্মী হয়ে ওঠেন। লিবারেশন কমরেড ছাড়াও একজন ওবিসি নেতা হিসাবে তাঁর পরিচিতি আছে। তারারি বিধানসভা থেকে জিতে বিধায়কও হন তিনি।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) ১৯ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২টি জিতেছিল। শেষবার সিপিআই(এমএল) প্রার্থী বিহার থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। সেবার রামেশ্বর প্রসাদ আরাহ থেকে জিতেছিলেন। ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়ান পিপলস ফ্রন্ট (আইপিএফ), যা পরে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন হয়ে যায়, দু'টি লোকসভা আসনই জিতেছিল। ৩৫ বছর পর আবার দু'টি আসনেই জিতল দল।
আরও পড়ুন- বাংলার একপেশে রাজনীতি বিজেপিকে জায়গা করে দিল । মুখোমুখি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) আরাহ, নালন্দা এবং কারাকাট তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। নালন্দায়, জেডি(ইউ) প্রার্থী কৌশলেন্দ্র কুমার সিপিআই(এমএল) প্রার্থী সন্দীপ সৌরভকে পরাজিত করেছেন। কৌশলেন্দ্র এই আসনে টানা তৃতীয়বার জিতলেন। নালন্দা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেলা।
তবে সারা দেশের প্রেক্ষিতে লোকসভা ভোটের এই গণরায়কে স্বাগত জানিয়েছেন দীপঙ্কর। কলকাতায় দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, "মোদি সরকারের দশ বছরের অপশাসনের প্রতিবাদে মানুষ গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে রায় দিয়েছে। এনডিএ-র উচিত ছিল অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা। মোদি এবং শাহকে পুনর্বহাল করা বুঝিয়ে দেয় এরা গণরায়কে গুরুত্ব দেয় না।”
দীপঙ্করের মতে, এবারের নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জনমত সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ আর মহারাষ্ট্রে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিজেপি বিরোধিতা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এই রায়ে। ফলে এই রায় গণতন্ত্রের জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে যেহেতু সরকার পড়ে যায়নি, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়েও এনডিএ-র জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গড়তে সক্ষম হয়েছে তাই দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি যে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে যাবে তেমনটা দাবি করছেন না দীপঙ্কর। তবে "গণতন্ত্রের শ্বাস নেওয়ার জায়গা তৈরি হয়েছে", আত্মবিশ্বাসী তিনি।
আরও পড়ুন- ধ্রুব রাঠী, রভীশ কুমাররা পারেন, বাংলার ইউটিউবাররা পারেন না কেন?
নবগঠিত এই এনডিএ সরকার টিকবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ রয়েছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের। এই সরকারকে উৎখাত করতে গেলে ক্রমাগত গণচাপ তৈরি করে যেতে হবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। সংসদে বিহার থেকে ২ জন সাংসদ পাঠাতে পেরেছে তাঁর দল। সংসদে ফসলের ন্যূনতম দামের দাবি নিয়ে কথা বলা, যুবকদের স্থায়ী চাকরির কথা বলা, অগ্নিবীর প্রকল্প বাতিল করার কথা বলা, বার্ধক্য পেনশন স্কিম নিয়েই কথা বলবেন এই সাংসদরা।
কিন্তু বিহার থেকে দুই সাংসদ গেলেও, বামপন্থীরা সংসদে এবারও দুই সংখ্যায় পৌঁছতে পারল না। হতাশাজনক এই ফলের পাশাপাশি দীপঙ্কর মনে করিয়ে দিতে চাইছেন আগের চেয়ে সংখ্যায় বেড়েছেন বাম সাংসদরা, এটা আশার কথা। দেশে বামপন্থীদের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই কি হারাচ্ছে? দীপঙ্কর বলছেন, "পশ্চিমবঙ্গে গ্রামাঞ্চলে গরিব মানুষের থেকে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে বামেদের। পশ্চিমবঙ্গে সামগ্রিকভাবে যাতে বামপন্থীরা ভালো ফল করতে পারে, শক্তি বাড়াতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতেই হবে। এমনকী বিহারের ফলাফলও আশানুরূপ নয়। আমরা ১৮ থেকে ২২টা আসন পাব বলে ভেবেছিলাম। সব মিলিয়ে আমাদের আসন রফা, প্রার্থী বাছাই ইত্যাদি নানা প্রশ্নে কিছু ভুল থেকে গেছে। যেমন সিওয়াই আসনটা আমাদের দেওয়া হলে আমরা জিততাম।"
গোটা দেশে ৩২টি আসনে বিজেপি এবং তার বিরোধীদের ভোটের ব্যবধান খুবই কম। এসব আসনে বিজেপি কীভাবে জিতেছে তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করছেন তিনি।