বঙ্গোপসাগরের ওপর ঘনাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় 'মান্ডাস'! কোন ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা?

Cyclone Mandous: একাধিক ঝড়ের কবলে বারবার আশঙ্কিত হয়েছে তামিলভূম। এবার ফের মান্ডাসকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছে সেই আশঙ্কায়।

ঝড় উঠিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যর দেশ কাতার। ফুটবলের উৎসবের কাতার-আমেজে মেতেছে বিশ্ব। কিন্তু সেই আনন্দ-ঝড়ের এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই এবার বিপদ বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আর এক দেশ। আরব আমিরশাহির দেওয়া সাধের নামের এক ঝড়ের ভয়ে এখন থেকে কাঁপছে ভারত! ফের বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে ভারতের উপকূল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু, একাধিক রাজ্যের প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ সৃষ্টি করেছে এই ঝড়।

মান্ডাস বা মানডাউস (Mandous Cyclone)। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ দিকে সজ্জিত হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়। এই সপ্তাহের শেষের দিকে আঘাত হানতেও প্রস্তুতি প্রায় সেরে ফেলেছে মান্ডাস!

কী এই ঘূর্ণিঝড়?
আবহবিদরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই বঙ্গোপসাগরের (Bay of Bengal) দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। যে নিম্নচাপটি ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। আর সেই সূত্রেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ওই নিম্নচাপ পরিণত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ে। যা শক্তি বাড়াচ্ছে ক্রমশ। এবং এগিয়ে আসছে উপকূলের দিকে।  আর এই অবস্থানই ভয়ংকর বিপদ সৃষ্টি করতে পারে কয়েক দিনের মধ্যেই।

আরও পড়ুন: চামড়ার রং শেষ কথা নয়! বর্ণবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাঁরা শাসন করেছেন পৃথিবী

'মান্ডাস'-এর অবস্থান
মূলত আগামী দু'দিনের মধ্যেই ওই নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা। অর্থাৎ, শক্তি বাড়িয়ে গভীর সমুদ্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে মান্ডাস। বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় রূপে উপকূলের দিকে এগোতে শুরু করবে এই ঝড়। যা সাধারণত, ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে শুক্রবার সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে। এই ঝড়ের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে পুদুচেরি এবং তামিলনাড়ুর একাধিক উপকূলবর্তী জেলায়। চেন্নাই (Chennai) থেকে শুরু করে একাধিক অংশে বিরাট ক্ষতি করতে পারে এই ঝড়। যার প্রভাব পড়তে পারে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলেও।

মান্ডাস ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে বলে অনুমান আবহবিদদের। যদিও শুক্রবার বিকেল থেকে দুর্যোগ কমবে। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কমে তা পরিণত হবে নিম্নচাপে। বৃষ্টিতে ভাসবে ওই সমস্ত এলাকা। প্রভাব পড়বে অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরলেও। এমনকী, এই সমস্ত এলাকায় ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ-সহ একাধিক এলাকার মৎস্যজীবীদের আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।

বাংলায় প্রভাব
মান্ডাসের তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না এই রাজ্যে। ঝড়ের যা গতিপথ তাতে আঁচ পড়ার সম্ভাবনা নেই বঙ্গের উপকূলে! যদিও সমুদ্র উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সতর্কতা জারি হয়েছে মৎস্যজীবীদের জন্য। ওই সময়ে উত্তরবঙ্গে হালকা বৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফে।  যদিও শুক্রবার থেকে কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলার আকাশ থাকবে হালকা মেঘাচ্ছন্ন। এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই দক্ষিণবঙ্গে।

আয়লা থেকে আমফান, ইয়াশ। বাংলার উপকূল ভেঙেছে বারবার। একাধিক বিপর্যয় শেষ করেছে রাজ্যের একাধিক জনপদ। মানুষের মৃত্যু থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি। এক লহমায় শেষ হয়েছে সবটা। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলা। ফের ঝড়ের ভ্রুকুটি সামলেই এগিয়ে গিয়েছে বারবার। ২০১৯-এর ফনি, ২০২০ সালের আমফান, ২০২১-এর ইয়াস-আতঙ্কের পরেও ২০২২-এও ভয় ধরায় অশনি। যদিও শেষ মুহূর্তে গতিপথ বদলে এই ঝড় আছড়ে পড়ে বাংলাদেশে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় বাংলা।

ঝড়-বিপর্যয়ে তামিল-ইতিহাস
বারবার দুর্যোগের কবলে পড়েছে ওড়িশা। বাদ যায়নি তামিলনাড়ুও। বঙ্গোপসাগরের উপকূলের এই রাজ্যে আছড়ে পড়েছে একের পর এক ভয়ংকর বিপদ।

সাইক্লোন গাঁজা (Ganja)
২০১৮ সালের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আছড়ে পড়ে এই ঘুর্নিঝড়। যার প্রভাব ছিল মারত্মক। তামিলনাড়ু থেকে পশ্চিমবঙ্গ। বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর একাধিক রাজ্যে প্রভাব ফেলে এই ঘূর্ণিঝড়। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ। ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালায় এই ঝড়।

সাইক্লোন বরদা (Vardah)
২০১৬-র এই ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব চালায় তামিলনাড়ু-সহ একাধিক রাজ্যে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ, পরে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে চেন্নাইয়ে। মুহূর্তেই প্রায় ধ্বংস হয় শহর। ক্ষতি হয় প্রায় ১০০০ কোটির সম্পত্তির।

সাইক্লোন নিলাম (Nilam)
২০২১-এর ২৮ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ ৩১ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের রূপে আছড়ে পড়ে উপকূলের রাজ্য তামিলনাড়ুতে। ঘণ্টায় প্রায় ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়া এই ঝড় ক্ষতির সম্মুখীন করে দেড় লাখের বেশি মানুষের।

সাইক্লোন থানে (Thane)
ভয়াবহতার বিচারে ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বরের এই ঘূর্ণিঝড় ছিল ভয়াবহ। ঘণ্টায় প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার বেগে তামিলনাড়ুর কুদ্দালোর জেলা এবং পুদুচেরির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আছড়ে পড়ে এই ঝড়। ক্ষতির মুখে পড়ে মহারাষ্ট্রের একাধিক জেলা। এই ঝড়ের উৎস ছিল ভারত মহাসাগর। মৃত্যু হয় একাধিক মানুষের। প্রাণ হারায় বহু গবাদি পশুও।

সাইক্লোন জল (JAL)
২০১০-এর এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তামিলনাড়ুর একাধিক জায়গায়। ক্ষতির মুখে পড়ে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন জেলা। দক্ষিণ চীন সাগরে তৈরি নিম্নচাপ ক্রমশ এগিয়ে আসে ভারত মহাসাগরের দিকে। ঘণ্টায় প্রায় ১১১ কিলোমিটার বেগে এই ঝড়ের রূপে চেন্নাইয়ের উপরে আছড়ে পড়ে জল। মৃত্যু হয় ৫৪ জনের। ক্ষতির সম্মুখীন হন প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ।

সাইক্লোন নিশা (NISHA)
ফানোজের পর ২০০৮-এর এই ঘূর্ণিঝড় বিপদ বাড়ায় তামিলনাড়ুর। মৃত্যু হয় রাজ্যের প্রায় ১৮৯ জন বাসিন্দার। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে এই রাজ্য।

ত্রিমুখী সাইক্লোন
পিয়ার, বাজ এবং ফানোজের ধাক্কায় ২০০৫ সালে বিপর্যস্ত হয় দক্ষিণের তামিলনাড়ু রাজ্যও। একাধিক রাজ্যের সঙ্গেই বিপুল ক্ষতি হয় এখানেও।

১৯৯৪ নাগাদ একটি ঘূর্ণিঝড় ক্ষতি করে তামিলনাড়ুর। মৃত্যু হয় প্রায় ২৪ জনের।

একাধিক ঝড়ের কবলে বারবার আশঙ্কিত হয়েছে তামিলভূম। বিপদের মুখে পড়েছে জয়ললিতা, করুনানিধির রাজ্য। এবার ফের মান্ডাসকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছে সেই আশঙ্কায়।

More Articles