জলাধার হবে, জলবিদ্যুৎ হবে, উন্নয়ন হবে! সিকিম প্রাণে বাঁচবে কি?

Sikkim Flood and Power Projects : সিকিমের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকাংশই চান না সিকিমে তিস্তানদীর উপর মেগাপাওয়ার প্রজেক্টের নামে প্রকৃতিকে নিয়ে আর ছেলেখেলা হোক।

সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অংশে ভয়াবহ বন্যার প্রায় আড়াই মাস পূর্ণ হলো। যে সমস্ত পর্যটক মুখিয়ে ছিলেন শীতকালে সিকিম ভ্রমণের উদ্দেশ্যে, তাঁদের জন্য লাচেন যাওয়ার রাস্তা খুলে গেছে ১ অক্টোবর থেকেই। বিপর্যয়, ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর পরে সব জায়গাই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে। সেটাই সময়ের নিয়ম। সিকিমে সব কিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হ’তে শুরু করলেও, সিকিমবাসীর দৈনন্দিন জীবনে এখনও এই বিধ্বংসী বন্যার ছাপ বস্তুতই স্পষ্ট। সিকিমে এই মুহূর্তে কয়েকশো লোক বাস্তুহারা। এই রাজ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল চুংথাম, সিংথাম, এবং জোঙ্গুর নিম্নাঞ্চল। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডিকচুর বেশ খানিকটা অংশ। আমরা যারা এই বিভীষিকার কথা দূর থেকে শুনেছি এবং খবরের পাতায় পড়েছি, তাঁদের মন থেকে কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই ঘটনার বিবরণ ফিকে হয়ে এসেছে। তাহলে ঘটনার প্রায় আড়াই মাস বাদে, সেইদিকে ফিরে তাকানোর কারণ কী?

উত্তর একটাই। মানুষের স্মৃতি বড় ক্ষণস্থায়ী। যেমন ধরুন, আমরা একটা সর্বগ্রাসী মহামারীর আতঙ্ক, মৃত্যুর হাহাকার ইতিমধ্যেই প্রায় ভুলে গেছি। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা একান্ত কাম্য নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার পাশাপাশি যে কোনও বিপর্যয় থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই, কিংবা যে কারণে পূর্বে বিপর্যয় হয়েছিল, সেগুলি ভুলে গেলে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রয়েই যায়। যেমনটা ঘটে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে বেমালুম ভুলে গেলে কিংবা তাকে পাঠ্যক্রম থেকে আগাগোড়া বাদ দিয়ে দিলে।

বিপর্যয়ের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার উদাহরণ কী? ধরা যাক হিমাচল প্রদেশেরই কথা। ২০২২ ও ২০২৩, ঠিক পরপর দুই বছর হড়পা বান এবং ধস। তার আগে ২০১৩ সালে কেদারনাথের ঘটনা আমাদের অধিকাংশের স্মৃতি থেকে প্রায় মুছেই গেছে। হিমাচল হোক বা কেদারনাথ, কোথাওই মৃতের সংখ্যা কম ছিল না। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে প্রচুর। ধ্বংস হয়েছে জীববৈচিত্র্য। আর ঠিক একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে সিকিমেও।

আমাদের স্মৃতি ক্ষণস্থায়ী হওয়ার দ্বিতীয় সমস্যা হলো, আমরা ক’দিন বাদেই ভুলতে বসি বিপর্যয় কেটে যাওয়ার মাস খানেক পরে কেমন আছেন আক্রান্ত মানুষরা? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কতটা মাশুল তাদের এখনও গুনতে হচ্ছে? সবশেষে যে আরও একটি জরুরি প্রশ্ন থেকে যায় তা হলো, এই বিপর্যয়ের জন্য প্রকৃতির উপর ঠিক কতটা প্রভাব পড়েছে?

আরও পড়ুন- দেবতারা কি নিজেদের বাঁচাতে পারেন না? বিপর্যয় কীভাবে বদলে দিচ্ছে পাহাড়ের ধর্মীয় বিশ্বাস?

তিস্তার উপর একের পর এক মেগাপাওয়ার প্রজেক্ট

উত্তরাখণ্ডই হোক কিংবা হিমাচল প্রদেশ বা সিকিম, বিপর্যয় তো কেবলই প্রকৃতির রোষানলের ফল নয়। এখানে প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ ও অতি-উন্নয়নের প্রভাবও রয়েছে। পাহাড় কেটে, পাহাড়ের গায়ে দেদার হোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠার মতো বিষয়টিরও গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলি মূলত গড়ে ওঠে পর্যটনের উদ্দেশ্যেই। সিকিমে গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে রয়েছে একাধিক জলাধার ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, তিস্তা নদীর উপর যেগুলি একের পর এক গড়ে তোলা হয়েছে।

এই জলাধারগুলি গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সিকিমের আদিবাসীরা, বিশেষ করে লেপচা জনগোষ্ঠী সরব হয়েছিল সেই ২০০০ সালের প্রথম থেকেই। সেই উদ্দেশ্যে ২০০৩-২০০৪ সাল নাগাদ “অ্যাফেক্টেড সিটিজেন অফ তিস্তা” বা “এসিটি” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলে লেপচার জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। হিমালয়ের কোলে বিশাল কোনও জলাধার নির্মাণ হলে, তা যেকোনও সময়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি গড়ে উঠলে বস্তুতই যে বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রকৃতি ও মানুষের উপর, তা বারবার জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানমহল এবং পরিবেশবিদরা। কিন্তু তারপরেও তৈরি হয়েছে একের পর এক জলাধার। সিকিমের উত্তরে আকস্মিক ও প্রবল ঝড়বৃষ্টির ফলে ভেঙে যায় দক্ষিণ লোনাক হ্রদ যা আসলে বরফগলা জলে তৈরি। দক্ষিণ লোনাক-সহ সিকিমে এই ধরনের কুড়িটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হ্রদ রয়েছে। এই হ্রদগুলি যে আকস্মিকভাবে ভেঙে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে, সে ব্যপারে বিজ্ঞানীরা বহুদিন আগেই সচেতন করেছিলেন। তিস্তার উপর একের পর এক জলাধার নির্মাণ তিস্তার দুই তীরের মানুষের জনজীবন এবং সিকিমের অত্যন্ত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক “এটিসি”-এর এক প্রাক্তন সদস্য জানাচ্ছেন, তিস্তায় একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজ ছাড়াও এই বিধ্বংসী বন্যার নেপথ্যে দায়ী অতি-উন্নয়ন। ব্যাঙের ছাতার মতো হোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে তোলা।”

লেপচা-সহ অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সঙ্কটে কেন?

তিস্তা নদী লেপচা জনজীবন, সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সিকিমের জোঙ্গু সরকারিভাবে 'লেপচা সংরক্ষিত অঞ্চল' বলেও ঘোষিত হয়েছে। যে কোনও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতোই লেপচাদেরও জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি এবং সার্বিক ভালো থাকা নির্ভর করে তাঁদের পরিবেশ-প্রকৃতির উপর। স্বাভাবিকভাবেই যে প্রাকৃতিক পরিবেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী বেড়ে ওঠে, জীবিকা নির্বাহ করে ও বেঁচে থাকে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁদের জীবন-জীবিকা ব্যহত হয়। দারিদ্র প্রকট হয়, সর্বোপরি সেই জনগোষ্ঠীর টিকে থাকাই সঙ্কটের মুখে পড়ে। বর্তমানে লেপচা জনগোষ্ঠী বিলুপ্তপ্রায়। লেপচা জনসংখ্যা, ভাষা ও সংস্কৃতি ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে দাঁড়িয়ে, তিস্তার উপর একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সূচনা এবং সাম্প্রতিক এই বন্যা লেপচা-সহ সিকিমের অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে।

আরও পড়ুন- জোশীমঠ নিয়ে মিডিয়াকে কোনও তথ্য না! কোন রহস্য ধামাচাপা দিতে চাইছে সরকার?

কেমন আছে সিকিমের বাকি অংশ?

চুংথাং, জোঙ্গুর নিম্নাংশ এবং সিংথাম মিলিয়ে কয়েক হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা একশোর কাছাকাছি হলেও, আদতে সংখ্যাটা তারও অনেক বেশি। বন্যা ও ধস আক্রান্ত সিকিমে পা রাখলে এখনও যেন মনে হয় কোনও যুদ্ধবিধ্বস্ত মাটিতে এসে পৌঁছেছি। তিস্তার দুই দিকে ভাঙাচোরা বাড়ি। চুংথাম এলাকার একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিহ্নমাত্র নেই বন্যার পরে। কিছু দূরেই তিস্তা উর্জা লিমিটেডের তৈরি তিস্তা তিন জলাধারের ধ্বংসাবশেষ।

সিংথাম জনবহুল এলাকা। সিংথামবাসীরা প্রধানত সিকিমের বাইর থেকে এসে জনবসতি গড়ে তুলেছেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানেই বাস তাঁদের। তিস্তার দুই তীরে গিজগিজ করছে পাকাবাড়ি। কোথাও কোথাও দুটো বাড়ির মাঝে রোদটুকুও ঢোকে না। পাহাড়ের গায়ে,পাথর কেটে অগুনতি বাড়ি বানালে পাথুরে মাটির ধারণ ক্ষমতা এমনিতেই কমে যায়। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই হুড়মুড়িয়ে ধস নামতে পারে। এসবের মাঝেই রয়েছে ন্যাশানাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন অর্থাৎ এনএইচপিসির তৈরি তিস্তা ছয় জলাধার।

সিংথাম অঞ্চলে নদীতে তলিয়ে গেছে কয়েকশো বাড়ি। গৃহহীন এবং বন্যায় বিপর্যস্ত জনগণ প্রাথমিকভাবে স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে তাঁরা ভাড়াবাড়িতে আশ্রয় উঠে গিয়েছেন।

তবে চুংথামে খাদ্য এবং বাসস্থানের জন্য বন্যাবিধ্বস্তদের কাছে এখনও খোলা রয়েছে নানকলামা গুরুদ্বারার দরজা। স্থানীয় বিদ্যালয়টি বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরা এই গুরুদ্বারার পেছনের বাঁধানো উঠোনেই বই-খাতা নিয়ে ক্লাসে বসে। গুরুদ্বারায় আশ্রয়গ্রহণকারী এক স্থানীয় ইনস্ক্রিপ্টকে জানিয়েছেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সরকারের পক্ষ থেকে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে।” তবে স্থানীয়দের অনেকেই জানাচ্ছেন, খাবার-দাবারের জন্য সরকারের তরফ থেকে বিশেষ কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। চুংথাংয়ের সাধারণ জনগণ এখনও গুরুদ্বারা এবং স্থানীয় ত্রাণ শিবিরের উপর নির্ভর করেই দিনযাপন করছেন।

চুংথাং এবং সিংথাম অঞ্চলে বন্যায় যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা এ যাবৎ সরকারের তরফ থেকে পরিবার পিছু এক লাখ তিরিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে এখনও দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকার কাছাকাছি ক্ষতিপূরণ পেতে বাকি। তবে জোঙ্গুর নিম্নাংশে যাঁদের বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, তাঁদের অনেকেই বন্যার এক মাস পরে ক্ষতিপূরণ পেতে শুরু করেছেন। বন্যায় গৃহহীন এক স্থানীয় জানাচ্ছেন, বন্যার দু’মাস পরেও সরকারি তরফে তাঁরা মাত্র তিরিশ হাজার টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাননি।

শিলিগুড়ি এবং গ্যাংটক শহর সংযোগকারী দশ নম্বর জাতীয় সড়ক বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিকিমের সাম্প্রতিক বন্যায়। তিনশো দশ নম্বর এবং তিনশো দশ এজি জাতীয় সড়ক উত্তর সিকিমের মাঙ্গন এবং চুংথাংয়ের মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ সদর শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। বন্যার পর ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই দুই জাতীয় সড়ক। তবে সিকিমের সড়ক ও সেতু দপ্তর এবং বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের তৎপরতায় দ্রুত চলছে রাস্তা মেরামত ও সেতু নির্মাণের কাজ।

ক্ষতিপূরণ দিলেই কি দায়িত্ব শেষ?

সেতু আর রাস্তা নির্মাণ করে জনজীবনকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনলে, কিংবা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সিকিমের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকাংশই চান না সিকিমে তিস্তানদীর উপর মেগাপাওয়ার প্রজেক্টের নামে প্রকৃতিকে নিয়ে আর ছেলেখেলা হোক। তাহলে যে এরকম ভয়াবহ বন্যা বারবার হবে, তা তাঁরা বহু আগেই জানতেন। সিংথাম শহর-সংলগ্ন সিরওয়ানির গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মনোজ
দর্জি বিরোধীদল সিকিম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্রন্টের নেতা। তিনি ইনস্ক্রিপ্টকে জানাচ্ছেন, “সিকিমের রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সিংথাম অঞ্চলে তিস্তার পাড় বরাবর সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হবে যাতে পরবর্তীতে বন্যা হলে নদীর দুই তীরে বসবাসকারী জনগণের ক্ষতি কম হয়।” তবে তিনি আরও জানাচ্ছেন, “নদীর দুই তীরে বাঁধ তৈরি করা কোনও স্থায়ী সমাধান নয় এবং এই ধরনের ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পরে আমরা ভবিষ্যতে তিস্তার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হোক চাই না।”

সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার বর্তমান সদস্য এবং অ্যাফেক্টেড সিটিজেন অফ তিস্তার প্রাক্তন সদস্য দাওয়া লেপচা ইনস্ক্রিপ্টকে জানিয়েছেন, “ভবিষ্যতে যদি চুংথামে কিংবা সিকিমের অন্য কোথাও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তাহলে সম্ভাব্য ক্ষতির কথা পর্যালোচনা করেই তা করা হবে।”

সব জায়গার মতোই তিস্তার দুই তীরের জনজীবন আবার সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। নদীর দুই পাড়ে শ'য়ে শ'য়ে ভাঙা বাড়ির চিহ্নও হয়তো আর থাকবে না কয়েক মাস বাদে। আমরাও হয়তো একের পর এক ঘটে চলা এই ভয়াবহ বন্যাগুলোর কথা ভুলে যাব। নদীমাতৃক এই দেশে নদী চুরি যায়। মূর্তি নদীর ধারে, ডুয়ার্স অভয়ারণ্যের সন্নিকটে বিলাসবহুল আবাসন গড়ে তোলে শ্রী বালাজী গোষ্ঠী। সিংথাম থেকে সামান্য এগিয়ে রংপোর দিকে গেলে দেখা যাবে,
তিস্তার কোলেই গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা, রিয়েল এস্টেট, রিসর্ট। তিস্তার দুই তীরে চলছে আকছার পাথর কাটা। বছরের পর বছর বিরোধের পরেও, বিজ্ঞানমহল ও পরিবেশবিদদের সাবধানবাণীর পরেও তিস্তার উপর বাঁধ তৈরি হয়।

সিকিমের আদিবাসী জনগোষ্ঠী সমেত, অন্যান্য সাধারণ মানুষ, সমাজ এবং পরিবেশ-প্রকৃতির উপর এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বাঁধ-জলাধারের প্রভাব কতটা পড়েছে, সাম্প্রতিক বন্যা তা অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও সমস্ত আশঙ্কা ও সাবধানবানীকে ফুৎকারে উড়িয়ে, আবারও নদীর উপর
জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হবে কিনা, তা সময়ই উত্তর দেবে।

More Articles