শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি! কতটা বিপদের মুখে কলকাতা?

Cyclone Midhili Update : পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মিধিলির আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এই রাজ্যের দিকে ধেয়ে না এলেও ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাব পড়বেই।

কালীপুজো শেষ হলেই বৃষ্টি নামবে জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। শীত আসার আগের হালকা রোদ, পরিষ্কার আকাশ উধাও হয়ে বৃষ্টি নেমেছে, মেঘলা আকাশ দেখে পেরিয়ে আসা টানা বৃষ্টির দিন মনে পড়া স্বাভাবিক। এসবের নেপথ্যে রয়েছে মিধিলি। শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’-র নাম দিয়েছে মলদ্বীপ। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে সরে যাচ্ছে মিধিলি। যাচ্ছে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে। নভেম্বরে এই শীত আসার সময়ে ঘূর্ণিঝড় মধিলির প্রভাবে কী কী বদল হতে পারে এই রাজ্যের আবহাওয়াতে?

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, শুক্রবার ভোরে মিধিলি ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১৯০ কিমি পূর্বে, দিঘা থেকে ২০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। কয়েক ঘণ্টায় তা আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে গিয়েছে। এভাবে এগোতে থাকলে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে সেটি বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের মোংলা ও খেপুপাড়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল পেরনোর কথা মিধিলির। ফলে বাংলাদেশে এর প্রভাব হবে সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার এবং শনিবার খেপুপাড়া ও আশেপাশের এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।

আরও পড়ুন- আমফান, বুলবুল অথবা মোকা, কেন বারবার বঙ্গোপসাগরেই জন্ম নেয় মারণ ঘূর্ণিঝড়

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মিধিলির আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এই রাজ্যের দিকে ধেয়ে না এলেও ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাব পড়বেই। দক্ষিণবঙ্গে আগেই হলুদ সতর্কতা জারি ছিল। মিধিলির গতিপ্রকৃতি দেখে শুক্রবার সেই সতর্কতা কমিয়ে কমলা করা হয়েছে। এই রাজ্যে শুক্রবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়ার কিছু এলাকায়। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলা যেমন হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবারও ভোগাতে পারে এই বৃষ্টি।

বাংলাদেশে যেহেতু বেশি প্রভাব পড়তে পারে তাই মাঝসমুদ্র থেকে তীরে ফেরার আহ্বান জানানো হয়েছে মৎস্যজীবীদের। শুক্র ও শনিবার অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় হাজার হাজার ট্রলার ফিরছে পাড়ে। সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে মেঘলা আকাশ, থমথমে মেঘ, বৃষ্টিও শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই কুলতলি, সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ সহ একাধিক জায়গায় মৎস্যজীবীরা ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য বন্দরে ফেরা শুরু করেছেন। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকায় ত্রাণ শিবির প্রস্তুত হচ্ছে, মজুত হচ্ছে শুকনো খাবারও।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল মিধিলি। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বইছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিও হচ্ছে।

 

More Articles