ভোটের দিনেই বাংলা দাপাবে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’? পণ্ড হতে পারে ষষ্ঠ দফার নির্বাচন?

Cyclone Remal: এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তাতে ২২ মে বুধবারের দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যা শক্তি বাড়াতে বাড়াতে ২৩ মে রাতের দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হবে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর।

লোকসভা ভোট প্রায় শেষের দিকে। তবে তীরে এসেই ভোটের তরী ডোবাতে পারে ঘূর্ণিঝড়। মে মাসের শেষে আছড়ে পড়তে পারে বড়সড় ঘূর্ণিঝড়, এমন একটা পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। এবার সেই আশঙ্কাতেই সিলমোহর দিচ্ছে একাধিক জাতীয়-আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা।

এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তাতে ২২ মে বুধবারের দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যা শক্তি বাড়াতে বাড়াতে ২৩ মে রাতের দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হবে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর। প্রাথমিক ভাবে হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছিল, ততটা শক্তিশালী হবে না এই ঘূর্ণিঝড়। তবে সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রে হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। যতদূর জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ সীমানা দিয়ে মূল ভূভাগে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। তবে সময় যত এগিয়েছে, তত পূর্ব দিকে সরেছে ঘূর্ণিঝড়ের পথ।

রবিবার বিকেলে একটি পূর্বাভাসে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, আগামী ২৫মে মধ্যরাতে ওড়িশার পারাদ্বীপের কাছাকাছি কোনও জায়গা দিয়ে ভূভাগে প্রবেশ করতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রটি। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আরও পূর্বদিকে প্রসারিত হসে পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি সরে আসতে পারে এই ঝড়ের গতিপথ। তবে আবহবিদেরা এ-ও জানাচ্ছেন, ঘূর্ণাবর্ত তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ঝড়ের গতিপথ পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়।\

আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’! ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে যা জানাল হাওয়া অফিস

এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি রেখেছে দেশ ওমান। 'রেমাল' শব্দটি আদতে আরবি। যার অর্থ বালি। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর, অর্থাৎ উত্তর ভারত মহাসাগরে তৈরি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দফতর (ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট)। ২০২০ সালে মৌসম ভবনের তরফে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা দেওয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তা হলে তালিকা অনুযায়ী সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘রেমাল’। তবে এখনও আবহাওয়া দফতরের তরফে এই নাম ঘোষণা করা হয়নি। তার জন্য ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তৈরি হতে হবে আগে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে জলের উষ্ণতা ২৬ ডিগ্রির অনেকটা বেশি আছে। ফলে সাগর থেকে নিম্নচাপ কতটা সময় ধরে শক্তি সঞ্চয় করে৷ আর স্থলভাগ থেকে কতটা বাতাসের প্রবাহ থাকে। সেই দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। মঙ্গলবার আবহাওয়া দফতরের সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে পূর্ব বাংলাদেশ এবং আশপাশের এলাকার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১.৫ থেকে ৫.৮ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। হরিয়ানা থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে পূর্ব বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। যা রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১.৫ কিলোমিটার উপরে। একই সঙ্গে, আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩.১ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে, বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বলয় তৈরি হতে পারে বলে আলিপুরের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে । পরে সেটি উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। আরও শক্তি বৃদ্ধি করে সেই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার মতো অনুকূল পরিস্থিতিও সাগরে তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।

এদিকে আগামী ২৫মে রয়েছে ষষ্ঠ দফার লোকসভা ভোট। বিহার, দিল্লি, হরিয়ানা, ওড়িশা, জম্মু-কাশ্মীরের পাশাপাশি ভোট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে ভোটগ্রহণ আগামী ২৫ তারিখ। খেয়াল করলে দেখা যাবে, কাঁথি, তমলুক, মেদিনীপুরের মতো একাধিক উপকূল-সংলগ্ন এলাকায় ভোট রয়েছে। বর্তমান পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের সব থেকে বেশি প্রভাব পড়তে পারে ওই এলাকাতেই। উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সঙ্গে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশে প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকী উপকূলবর্তী এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নামতে হতে পারে প্রশাসনকে। স্থানীয়দের উদ্ধার করে রাখতে হতে পারে স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রগুলিতে। যার অনেকগুলিই হয় ভোটকেন্দ্র নয় তো কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সেখানে রয়েছেন।

আরও পড়ুন:আমফান, বুলবুল অথবা মোকা, কেন বারবার বঙ্গোপসাগরেই জন্ম নেয় মারণ ঘূর্ণিঝড়

সেক্ষেত্রে দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে কীভাবে ভোট হবে? আদৌ ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে। এমনকী ওই দুর্যোগে বাড়ি থেকে বেরোনোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে আবহাওয়া দফতর। রেমাল কি তবে বাধা হয়ে দাঁড়াবে ষষ্ঠ দফার লোকসভা ভোটগ্রহণে। সেক্ষেত্রে পুনর্নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে নির্বাচন কমিশন? এ সবের উত্তরই অবশ্য নির্ভর করছে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার উপরে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও ঘূর্ণিঝড় যে আসবেই, তেমনটা নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি হাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে, তা আদৌ বাংলার উপকূলের দিকেই ধেয়ে আসবে কি না, তা নিয়েও জানা যায়নি তেমন ভাবে কিছু। একই সঙ্গে আগামী ২৫ মে ভোট রয়েছে ওড়িশাতেও। ঘূর্ণিঝড় রেমালের বড়সড় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানেও। ইতিমধ্যেও ওড়িশা ও বাংলার মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর।

More Articles