শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’! ভোটে তছনছ হতে পারে কলকাতা?

Cyclone Remal Alert: শক্তি বাড়িয়ে শনিবারই আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল'। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে বড় কোনও পরিবর্তন না হলে, সোজা কলকাতার উপর দিয়েও যেতে পারে রেমাল।

একদিন আগে পর্যন্ত সংশয়ের জায়গা ছিল। শেষ মুহূর্তে না-ও তৈরি হতে পারে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। তবে এখন আর তার সুযোগ নেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।শক্তি বাড়িয়ে শনিবারই আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল'। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে বড় কোনও পরিবর্তন না হলে, সোজা কলকাতার উপর দিয়েও যেতে পারে রেমাল। সেক্ষেত্রে কি আমফান, ইয়াসের সেই ভয়াবহ স্মৃতি ফিরতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের হাত ধরে? আতঙ্ক বাংলায়। তার উপর শনিবার এ রাজ্যে ষষ্ঠ দফার ভোট। তমলুক, মেদিনীপুরের মতো একাধিক উপকূল-সংলগ্ন এলাকায় ভোট রয়েছে ওই দিনই। যা রেমাল নিয়ে আশঙ্কা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মৌসম ভবনের তরফে বলা হয়েছে, চেন্নাই উপকূলের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে, অন্ধ্র উপকূলের দক্ষিণ পূর্ব দিকে, অবস্থানগত ভাবে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটে নাগাদ তৈরি হওয়া নিম্নচাপ প্রায় একই জায়গায় অবস্থান করে ক্রমশঃ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করছে এবং নিজের শক্তি বাড়াচ্ছে। যা ক্রমশ তৈরি করবে শক্তিশালী এক ঘূর্ণিঝড়। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, শুক্রবার অর্থাৎ ২৪ তারিখ সকাল ৮ টা নাগাদ এটি অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। শক্তি সংগ্রহ করতে করতে এরপর এটি উত্তর পূর্ব অর্থাৎ মায়ানমার সাগরের দিকে এগোতে থাকবে। পরেরদিন অর্থাৎ শনিবার ২৫ তারিখ এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে বলে অনুমান আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের। ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পর এটির ব্যাপ্তি বাড়বে। তখন শুধু উত্তর পূর্ব নয়, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরেও এটি নিজের প্রভাব বিস্তার করবে।

আরও পড়ুন: ভোটের দিনেই বাংলা দাপাবে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’? পণ্ড হতে পারে ষষ্ঠ দফার নির্বাচন?

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সব থেকে ব্যবহৃত দু'টি মডেল সম্প্রতি জানিয়েছে, আমফানের পথ ধরেই এগোবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। শনি বা রবিবার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে সেটি। রবিবার সন্ধ্যার পর সাগরের কাছাকাছি কোনও জায়গা দিয়ে ভূ-ভাগে প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এর পর ক্রমশ উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাবে ঝড়ের কেন্দ্র। এই গতিপথ অপরিবর্তিত থাকলে কলকাতা শহরে ঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকছে। ঘূর্ণিঝড়ের গঠন সম্পূর্ণ হলেই এটির সম্ভাব্য ল্যান্ড ফল, আই এবং টেল এন্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে মত মৌসম ভবনের।

২০২০ সাল নাগাদ বাংলা কাঁপিয়ে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান। তার প্রভাব ছিল ব্যাপক ও ভয়াবহ। অসংখ্য জায়গা ছাড়খার হয়ে গিয়েছিল ঝড়ের প্রভাবে। এখনও পর্যন্ত যা আপডেট তাতে রেমাল নামের এই ঘূর্ণিঝড় খুব বেশি শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক না-ও হতে পারে। এর গতিবেগ হতে পারে ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তবে এই আপডেট ২৪ তারিখ রাত বা ২৫ তারিখ ভোরের আগে নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে রেমাল আমফানের মতো শক্তিশালী না হলেও ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হতে পারে মহানগর। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে কলকাতায় অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে ছোটনাগপুরের মালভূমিতে। যার ফলে কয়েকটি জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ব্যাপক বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং ও সিকিম পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে। যার জেরে তরাই ডুয়ার্সে হড়পা বান আসতে পারে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বা মাঝরী বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগের দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে। উপকূলের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা একটু বেশি। শনিবার রাজ্যের বেশ কিছু অংশে ষষ্ঠ দফার লোকসভার ভোট। শুক্রবার আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করায় ভোটের প্রস্তুতি পর্বেও কিছুটা বিঘ্ন ঘটতে পারে। শনিবার অর্থাৎ ২৫ তারিখ পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া কেন্দ্রে ভোট। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের জানাচ্ছে, ভোটে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা বৃষ্টির কারণে। বিশেষত পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ভোট বেশি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা।

আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’! ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে যা জানাল হাওয়া অফিস

শনি ও রবিবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে উপকূলে। বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যেই মৎস্যজীবীদের উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সতর্কবার্তায় এ-ও বলা হয়েছে কাল থেকেই সমুদ্র উত্তাল হবে। ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়বে। আগামী সাতদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। রবিবার রাজ্যের জেলাগুলিকে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। রয়েছে অতিরিক্ত বজ্রপাতের আশঙ্কাও। ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আগেভাগেই পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। তবে ভোটের সময় রেমালজনীত বাধাবিঘ্ন রুখতে নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত কী ব্যবস্থা করেছে তা জানা যায়নি। তবে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বার কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে হাওয়া অফিসের। লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোটে কী প্রভাব ফেলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, সেটাই দুশ্চিন্তায় ফেলেছে রাজ্য ও প্রশাসনকে।

More Articles