নেপালের তাণ্ডবলীলা থেকে সুমাত্রার বিধ্বংসী সুনামি, যে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে
Deadliest Earthquakes in the World : বিশ্বের ইতিহাস ঘাঁটলে এমন বেশকিছু ভূমিকম্পের প্রসঙ্গ আসবে, যা শুনলে হাড়হিম হতে বাধ্য। সেই কম্পন দেখেছে অজস্র ধ্বংস
একদিনে পরপর তিনবার ভূমিকম্প। ভোররাতে পরপর দুটো, তারপর দুপুরের দিকে আরও একটা। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পের সাক্ষী রইল তুরস্ক দেশটি। সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, রিখটার স্কেলে ৭.৮ তীব্রতার এই ভূকম্পের রেশ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যায় সিরিয়া, লেবানন, সাইপ্রাস, গ্রিসেও। ভোররাতে এই ভূমিকম্প হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ফের কম্পন হয়। সেবার কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৭। পরে জানা যায়, স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে ফের একবার কেঁপে ওঠে তুরস্ক। এবার তীব্রতা ছিল ৭.৫। তীব্র তিনটি ভূমিকম্পের প্রভাবে হাজারেরও বেশি বাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। এই ঘটনায় অন্তত ১৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে তুরস্ক ও সিরিয়া প্রশাসন।
ভূমিকম্পের এই ইতিহাস আজকের নয়। যবে থেকে পৃথিবীর জন্ম, তবে থেকেই একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়েছে এই বসুন্ধরা। এরপর জল এল, জীবন এল, সভ্যতা তৈরি হল। সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও হাত ধরাধরি করে টিকে রইল। তবে যত দিন যাচ্ছে পরিবেশের ওপর মানুষের অত্যাচার বাড়ছে। আর সেইসঙ্গে বাড়ছে বিপর্যয়ের তীব্রতাও। ভূবিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীর বেশকিছু অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ভূমিকম্প অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চল, তুরস্ক, জাপানের মতো বেশকিছু জায়গায় প্রায়শই বড় মাপের ভূমিকম্প হয়। তবুও বিশ্বের ইতিহাস ঘাঁটলে এমন বেশকিছু ভূমিকম্পের প্রসঙ্গ আসবে, যা শুনলে হাড়হিম হতে বাধ্য। সেই কম্পন দেখেছে অজস্র ধ্বংস, দেখেছে অসংখ্য মৃত্যু। পৃথিবীর ইতিহাসের সেরকমই কিছু ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা একবার ফিরে দেখা যাক।
আরও পড়ুন : বছরে ৩৩ হাজারের বেশি ভূমিকম্প, মৃত্যু কয়েক লাখের! কেন বারবার এমন বিপর্যয় দেখে তুরস্ক?
২০১০-এর হাইতি ভূমিকম্প
রাস্তায় সার বেঁধে শুয়ে রয়েছেন অজস্র মানুষ। একটু ভালো করে দেখলেই বোঝা যাবে, ওঁরা আর জীবিত নেই। রাস্তায় পরপর শুয়ে আছে তাঁদের মৃতদেহ। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে এমনই দৃশ্য দেখেছিল হাইতি। সৌজন্যে, ভূমিকম্প। ৭.০ তীব্রতার এই ভূমিকম্পের জেরে পার্শ্ববর্তী দেশ কিউবা ও ভেনেজুয়েলাতেও কম্পন হয়। সরকারি হিসেব বলে, সেই ভূমিকম্পে ২ লক্ষ ২২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। প্রায় এক লক্ষ বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। আরও কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হন।
২০০৪-এর ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প
২০০৪ সালে একটা শব্দই বোধহয় গোটা এশিয়ায় ঘুরে বেড়ায়। ‘সুনামি’। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডেও। যেহেতু সুমাত্রাতেই শুরু হয়, তাই ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রিখটার স্কেল বলে, সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯.১! মানব সভ্যতার ইতিহাসের তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল এটি। এর প্রভাব পড়ে ভারত মহাসাগরেও। ফল? বিধ্বংসী সুনামি। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এই ভূকম্প ও সুনামিতে। যার প্রভাব এখনও বেশকিছু জায়গায় রয়েছে।
২০১৫-র নেপাল ভূমিকম্প
এই ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে সাত বছরেরও বেশি সময়। তবুও নেপাল ভূমিকম্পের স্মৃতি যেন মানুষের মন থেকে এখনও যায়নি। ৭.৮ তীব্রতার ভূমিকম্পের জেরে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে গোটা নেপাল। সেই তীব্রতার ঢেউ এসে পৌঁছয় ভারতেও। অন্তত ৮০০০ মানুষের প্রাণ যায়। কয়েক লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, নেপালের ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক দরবার স্কোয়ার এবং মন্দিরগুলির অবস্থা দেখলে চেনা দায়। ১৯৩৪ সালের পর প্রথম এত ভয়ংকর বিপর্যয় নেমে এসেছিল নেপালে।
২০১১-র জাপান ভূমিকম্প
এখানেও তীব্রতা ৯.১। ভূমিকম্পের সঙ্গে দোসর হয়ে হাজির হয় সুনামি। দুইয়ের জেরে অন্তত ১৮,০০০ মানুষের প্রাণ যায়। এই ভূমিকম্প আরও একটা কারণে উল্লেখযোগ্য। এর জেরেই ফুকুশিমার পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ, তেজস্ক্রিয় বিপর্যয়ও ঘটে।
২০০৮-এর চিন ভূমিকম্প
দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশে ৭.৯ তীব্রতার এই ভূমিকম্পে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ে। প্রায় ৮৭,০০০ মানুষ মারা যান। তবে আহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি। প্রায় চার লক্ষ মানুষ এই ভূমিকম্পের ফলে আহত হন।
১৫৫৬-এর চিন ভূমিকম্প
খাতায় কলমে আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগের ঘটনা। কিন্তু ভূমিকম্পের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছিল এই বিশেষ দিনটি। ২৩ জানুয়ারি, ১৫৫৬। চিনের শেনসি প্রদেশে ৮.০ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প হয়। বিস্তীর্ণ অঞ্চল এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বলা হয়, ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মাটিতে বিশাল বড় ফাটল দেখা যায়। মাইলের পর মাইল বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ মানুষ এই ভূমিকম্পের ফলে মারা যান।