আধখানাতেই মৃত্যু অনিবার্য! জানেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাশরুম কোনটি?

World's deadliest mushroom : পরিচিত খাবারটিই হতে পারে মৃত্যুর কারণ, অজান্তে বিষ ছড়াচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর মাশরুম

প্রচলিত বাংলায় যা ব্যাঙের ছাতা, আদতে সেটাই হল পরিচিত খাবার মাশরুম। নুর্মশি খাদ্য তালিকায় বর্তমানে মাশরুমের বিভিন্ন পদের যথেষ্ট চাহিদা বেড়েছে গোটা দেশেই। শুধু ভারত নয়, বিদেশেও মাশরুমের সমান জনপ্রিয়তা। আজকাল নামজাদা রেস্তোরাঁর মেনুতেও থাকে মাশরুম সহযোগে প্রস্তুত বিভিন্ন পদ। যারা আমিষ খান না তাদের ক্ষেত্রেও মাশরুম একটি জনপ্রিয় বিকল্প আজকের দিনে।

মাশরুম একধরনের ছত্রাকের মাংসল দেহ বা ফল যা মাটি, পচা খাবার, উদ্ভিদ কিংবা অন্যকোনো জৈব অংশের উপর জন্মায় এবং পরজীবীর মতো বেঁচে থাকে। মাশরুমের খাদ্যগুণও প্রচুর, যা নিরামিষাশীদের দেহে অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলির চাহিদা মেটায়। তাই বলে সব মাশরুমই যে খাদ্য এমনটা নয়, এমনকী হাতে ধরার জন্যও নিরাপদ নয় সব ধরনের মাশরুম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই উপকারী সবজির ধরন এতটাই মারাত্মক হতে পারে যে নিমেষেই মৃত্যু ডেকে আনতে পারে যে কারোর। জানেন এই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর মাশরুম কোনটি?

সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে মাশরুম নিয়ে একটি নয়া গবেষণার তথ্য। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক মাশরুমটির নাম হল ডেথ ক্যাপ। পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে যে, প্রাণঘাতী এই মাশরুম কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। এটির বিজ্ঞান সম্মত নাম Amanita phalloides। মানুষের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত এই বিশেষ ধরনের মাশরুম। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ইউরোপে উদ্ভুত হলেই ক্রমেই উত্তর আমেরিকা জুড়ে নতুন বাসস্থান গড়ে তুলেছে এই বিশেষ উদ্ভিদের প্রকার।

আরও পড়ুন - মানুষের মূত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হতো ব্যাঙের দেহে! কীভাবে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করত আগেকার মানুষ?

এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে পাওয়া সমস্ত রকম মাশরুমের মধ্যে এই ফ্যালোয়েডসই হল সবচেয়ে বিষাক্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটি অর্ধেক মাশরুমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট টক্সিন রয়েছে। এই মাশরুমের বিষক্রিয়া বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ৫৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস এবং ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র রোমান সম্রাট ষষ্ঠ চার্লসের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল এই বিশেষ ধরনের মাশরুমটি। এর মধ্যে থাকা প্রধান বিষাক্ত উপাদান হল α-আমানিটিন, যা শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নিমেষের মধ্যে লিভার এবং কিডনি বিকল করে দেয়।

ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসন-এর গবেষকদের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মাশরুম এ. ফ্যালোয়েডের উপরবকরা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই মাশরুম একক ব্যক্তির ক্রোমোজোম ব্যবহার করে স্পোর তৈরি করতে পারে। ১৯৭৮ সাল থেকে ইউরোপের কিছু অংশে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় সংগ্রহ করা ৮৬টি মাশরুমের জিনোমের উপর ভিত্তি করে করা গিয়েছিল এই গবেষণাটি। ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু মাশরুমের নমুনার মধ্যে এটি পাওয়া গেছে যে, ডেথ ক্যাপগুলি যৌন এবং অযৌন উভয় ক্ষেত্রেই প্রজনন করতে সক্ষম।

ডেথ ক্যাপ মাশরুম - সাম্প্রতিক কয়েক দশক ধরে - ইউরোপের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নিজেদের বংশ বিস্তার শুরু করে। অযৌন প্রজনন একটি বড় কারণ হতে পারে বলেই দাবি গবেষকদের। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে এবং নিম্ন মূল ভূখণ্ড, বি.সি জুড়ে প্রায় ১০০টি ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখা গিয়েছে। এই মাশরুম দেখতে এশিয়ান স্ট্র মাশরুম এবং অন্যান্য জাতের মতো এবং শহরাঞ্চলেই বেশি বৃদ্ধি পায় এরা। ফলে অজান্তে এই মাশরুম না চিনে খাওয়ার ফলে বড় কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, তা বলেই বাহুল্য!

More Articles