মৃত্যু বেড়ে দুই, দেশ জুড়ে নয়া ত্রাস হংকং ফ্লু, জানেন সতর্ক থাকতে কী কী করবেন?
Hongkong Flu : হংকং ফ্লু-এর আগেও একাধিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের ঘটনার পিছনে দায়ী ছিল Influenza H3N2 ভাইরাস
করোনা মহামারীর তাণ্ডব থেমেছে ঠিকই তবে, অন্যান্য রোগের দাপট কমেনি। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া অথবা অন্যান্য রোগে নাজেহাল গোটা দেশ। এরই মধ্যে আবার খবরের শিরোনাম দখল করল নতুন রোগ। হংকং ফ্লু। ‘ফ্লু’ শব্দটা অবশ্য আমাদের খুবই পরিচিত। ছোট থেকে বিভিন্ন রকমের ফ্লু-এর উৎপাত পার করতে হয়েছে নানা সময়ে। কিন্তু এই রোগটির নাম এর আগে শোনা যায়নি। নামটা শুনে বেশ বিদেশি মনে হলেই, খোদ দেশি রোগ এটি। একধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে মানব শরীরে বাসা বাঁধে এই রোগ। ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে ত্রাস ছড়িয়েছে নয়া রোগ। এমনকী মৃত্যুও হয়েছে দুজনের।
এমনিতেই বছরের এই সময়টায় বিভিন্ন রোগের উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়। প্রাথমিক লক্ষণ বলতে সেই পরিচিত, জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি, তবে এর সঙ্গে হংকং ফ্লু-এর ক্ষেত্রে যোগ হচ্ছে আরও বেশ কিছু সমস্যা। কখনও গলা ব্যাথা, কখনও আবার চূড়ান্ত শ্বাসকষ্ট, কিছু বোঝার আগেই ভিতরে ভিতরে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ। এই ভাইরাসটির ভ্যারিয়্যান্টের নাম H3N2। এটি Influenza A ভাইরাস-এরই একটি সাবটাইপ। হংকং ফ্লু-এর আগেও একাধিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের ঘটনার পিছনে দায়ী ছিল Influenza H3N2 ভাইরাস।
আরও পড়ুন - দেশজুড়ে জ্বরজারি, করোনা নয় তবে কী? কী বলছে কেন্দ্র?
এর আগেই দিল্লির গবেষণা সংস্থা ICMR এর তরফ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এই বিষয়। গত শুক্রবার দুজনের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে দেশ জুড়ে জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট।মানব শরীরের শ্বাসযন্ত্রকে প্রথমেই আঘাত করছে এই ভাইরাস। গোটা দেশ জুড়েই রোজ নতুন কেস শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি IMA-এর স্ট্যান্ডিং কমিটি ফর অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কমিটি বলেছে যে, বায়ুদূষণের কারণেও এমনটা হতে পারে। জ্বর, সর্দি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ছাড়াও ডায়রিয়া জাতীয় উপসর্গও দেখা যেতে পারে এই রোগ ছড়ালে। তবে মামুলি জ্বর ভেবে, পরিচিত কিছু ওষুধ দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার রোগ কমবেশি সব বাড়িতেই আছে, আর এতেই হতে পারে সমূহ বিপদ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগ চেপে রেখে নিজে ডাক্তারি করা অথবা প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিজেই ওষুধ কিনে খেয়ে নেওয়ার ফলে আরও হাতের বাইরে চলে যেতে পরে এই ভাইরাস।
প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবনে হয়তো প্রাথমিকভাবে রোগের দাপট কিছুটা কমছে ঠিকই তবে তাতে করে শরীরের ভিতরে ভিতরে পাকিয়ে উঠছে বিপদ। তাই চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য। মূলত করোনার মতোই সতর্কতা জারি করা হয়েছে এই হংকং ফ্লুয়ের ক্ষেত্রেও।
আরও পড়ুন - শীতকাল মানেই জ্বর, সর্দি অথবা হজমের সমস্যা! বাড়ছে দুশ্চিন্তা! সব সমস্যা মিটবে যে ডায়েটে
১. বাইরে বেরোলে, মূলত ভিড় এলাকায় অবশ্যই মাস্ক পরার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আবারও।
২. বাইরে থেকে ফিরে হাত, পা মুখ ভালো করে স্নান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
৩. খাওয়ার আগে,মুখে বা নাকে কোনও কারণে হাত দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৪.পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল খেতে হবে।
৫. জ্বর এবং তার সঙ্গে বাড়তি কোনও উপসর্গ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে রোগ ডেকে রাখলে তাতে আরও বিপদ। খুব প্রয়োজন হলে কেবলমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, তাও সেটা বেশি মাত্রায় নয়।
৬. রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নীচে নেমে গেলে ICU তে ভর্তি করাতে হতে পারে।
৭. এই রোগের সবচেয়ে বড় ওষুধ হল পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম।
৮. খোলা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী দূরত্ব মেনে চলুন। সর্বপরি আতঙ্কিত হবেন না, তাতে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারলে এই রোগের ভয় অনেকটাই কাটানো সম্ভব।