G20 অতিথিরা যাতে 'বিরক্ত' না হন, দিল্লি জুড়ে আটক হাজার হাজার পথকুকুর!

Delhi Stray Dogs Capture before G20: দিল্লির জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে ৬০,০০০-এরও বেশি পথকুকুর রয়েছে। সাধারণত স্থানীয় বাসিন্দারাই এদের খাওয়ান।

জি২০ সম্মেলন হবে। তাতে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রনেতারা আসবেন ভারতের রাজধানীতে। অতিথি এখানে দেবতা। তাই দেবতাদের যাতে কোনও বিড়ম্বনাতেই পড়তে না হয়, বিজেপি সরকার সেই চেষ্টাই করেছে। পর্দা দিয়ে দারিদ্র্য ঢেকে দেওয়া হয়েছে। শহরের সেরা সেরা চিত্র দিয়ে এক ইউটোপিয়ান ভারতের রেপ্লিকা গড়ে তোলা হয়েছে অতিথিদের সামনে। কোনও উটকো বিপদ যাতে দেবতুল্য অতিথিদের বিড়ম্বনায় না ফেলে সেই কারণে দিল্লি শহরের কুকুরদের অবধি খাঁচায় পুরে রাখা হয়েছিল সম্মেলন চলাকালীন। এমনিতে প্রশাসনিক কার্যালয়ের ধারেকাছে বাঁদরের উৎপাত প্রবল। বাঁদর তাড়ুয়া আলাদা পদও রয়েছে দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে। এবার পথকুকুরদের ধরে ধরে খাঁচায় ভরে ফেলা হয়েছিল যাতে রাস্তাঘাটে এসব চারপেয়েদের কোনও অস্তিত্বই না মেলে।

৯-১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজধানীতে G20 শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন রাস্তায় কোনও কুকুরের ডাকও শোনা যায়নি। অতিথিরা চলে গেছেন, দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবার সেই খাঁচাবন্দি সারমেয়দের আবার ফেরাচ্ছে পথে। কর্পোরেশন দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছে যে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতির সময় যে কুকুরদের ধরে রাখা হয়েছিল তাদের ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আইন মেনেই। দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমসিডি) নির্দেশ দিয়েছিল শহরের জি২০ সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত হোটেল এবং বাজারের কাছাকাছি পথকুকুরগুলিকে আটকে রাখা হবে, জীবাণুমুক্ত করা হবে এবং বন্ধ্যাকরণ কেন্দ্রে রাখা হবে।

আরও পড়ুন- জি-২০-এর অতিথিদের মোদির উপহার সিন্দুক, ভিতরে কোন খাজানা?

দিল্লির প্রায় ৫০টি এলাকার সমস্ত কুকুরদের বন্দি করা হয়। বিশেষ করে বিলাসবহুল হোটেলগুলির কাছাকাছি যেখানে জি২০ প্রতিনিধিরা থাকবেন, যেমন হায়াত রিজেন্সি, আইটিসি শেরাটন, লোধি হোটেল এবং তাজ বিভান্তা, অন্যান্য পাঁচতারা হোটেল লাগোয়া এলাকা পথকুকুরমুক্ত করতেই হবে, নির্দেশ ছিল প্রশাসনের। হাউজ খাস গ্রাম, মালব্য নগর, লাজপত নগর, করোল বাগ, চাঁদনি চক এবং গ্রেটার কৈলাশের মতো এলাকাগুলি থেকেও কুকুর সরাতে হবে কারণ এই এলাকাগুলিতে জি২০ প্রতিনিধিদের যাওয়ার কথা ছিল।

হোটেল এবং বাজার ছাড়াও, হুমায়ুনের সমাধি, নিজামুদ্দিন, পুরনো কেল্লা, ইসকন মন্দির, অক্ষরধাম মন্দির, লাল কেল্লা, গালিব কি হাভেলি এবং জামা মসজিদের মতো পর্যটনস্থানগুলিতেও 'পথকুকুর হাটাও' অভিযান চলে। সরকারি তথ্য বলছে, দিল্লির জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে ৬০,০০০-এরও বেশি পথকুকুর রয়েছে। সাধারণত স্থানীয় বাসিন্দারাই এদের খাওয়ান।

স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস এবং সম্প্রতি জি-২০ সম্মেলনের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় দিল্লিতে পথকুকুরগুলিকে কীভাবে ধরা হয়েছিল তা তুলে ধরে একজন পশুকর্মী একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। প্রধান বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা এবং বিচারপতি সঞ্জীব নরুলার একটি ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলার শুনানি করছিল। আদালত দিল্লি সরকার, দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং ভারতের পশু কল্যাণ বোর্ডকে পশু জন্মনিয়ন্ত্রণ বিধি, ২০২৩-এর অধীনে সমস্ত বিধান যাতে কঠোরভাবে মেনে চলা হয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ এই পথকুকুরগুলিকে ধরা এবং ছেড়ে দেওয়ার সময় আইন মেনেই কাজটি করতে হবে।

ওই জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী জানাচ্ছেন, কুকুরদের ধরা এবং ছেড়ে দেওয়ার একটি বিশদ প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রাণী জন্মনিয়ন্ত্রণ বিধি, ২০২৩-এর অধীনে তা সাফ উল্লেখ করা আছে। কর্পোরেশন সেই নীতি কি আদৌ অনুসরণ করছে?

আরও পড়ুন- কেন কুকুরের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ নয় বেড়াল? কতটা রহস্যময় এই প্রাণী

নিয়ম বলছে, পথকুকুরদের ধরার পরে অবিলম্বে সংখ্যাযুক্ত কলার দিয়ে চিহ্নিত করা উচিত যাতে যথাযথ রেকর্ড বজায় রাখা যায়। পরবর্তীতে যে এলাকা থেকে তাদের বন্দি করা হয়েছিল সেখানেই যাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায় সেইজন্য এই রেকর্ড থাকা দরকার। নাহলে এই কুকুররা অন্য পরিবেশে গিয়ে বাঁচতে পারবে না।

কর্পোরেশনের আইনজীবী বলছেন, জি২০ সম্মেলনের সময় আটকে রাখা কুকুরগুলিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। রাস্তার কুকুরদের বন্দি করা এবং ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কিত বিধি মেনেই সবটা হচ্ছে।

G20 সম্মেলনের থিম ছিল -এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ। এই 'এক' শব্দটি যে কত একা তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে প্রশাসনের এসব রাখঢাক প্রক্রিয়াতেই। এই 'এক'-এর মধ্যে সকলে নেই। নেই বস্তির মানুষরা, নেই পশু পাখিরা, নেই সাধারণ মানুষরা। বিদেশি প্রতিনিধিরা যদি দেখতেন সাধারণ মানুষ পথকুকুরদের খাওয়াচ্ছে, দেশের 'ইমেজ' কি ধুলোয় লুটাত? মণিপুরের নগ্ন মহিলাদের লাঞ্ছনার থেকেও নিকৃষ্ট উদাহরণ তৈরি করত কুকুররা?

More Articles