সদ্য বাবা হয়েছেন? টেরও পাচ্ছেন না অথচ ভয়াবহ এই রোগ জাঁকিয়ে বসছে...

Depression of New Fathers : অধিকাংশই বলেছেন, "আমি সত্যিই চাপে আছি, কিন্তু আমি চাই না যে আমার সঙ্গী এটা জানুক..."

মা হলে জীবন পাল্টে যায়, সত্য। সন্তান জন্মের আগে থেকে মায়ের শরীরে যা বদল হতে থাকে তা মানসিকভাবে চরম প্রভাব ফেলে। সন্তানের জন্ম হওয়ার পরে তাই অদ্ভুত এক বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকেন মায়েরা। প্রসবোত্তর এই বিষণ্নতাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে Postpartum Depression (PPD)। তবে জানলে অবাক হবেন, শুধুমাত্র মায়েদেরই নয়, বাবাকেও প্রভাবিত করে এই অবসাদ। সন্তানের বাবা হওয়ার পর ৮ থেকে ১৩% বাবারা এক অদ্ভুত অবসাদে ভোগেন, এক অদ্ভুত মানসিক চাপ তাঁদের ঘিরে রাখে সবসময়।

ইলিনয় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মায়েদের পাশাপাশি এই প্রসবোত্তর পর্যায়ে বাবাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। বিএমসি প্রেগন্যান্সি অ্যান্ড চাইল্ডবার্থ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায়, মায়েদের সম্মতিক্রমে গবেষকরা ২৪ জন বাবার সাক্ষাত্কার নেন এবং পরীক্ষা করে দেখেন। সদ্য বাবা হওয়া এই পুরুষদের মধ্যে ৩০% ব্যক্তিই প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায় ভুগছেন। সাধারণত মায়েদের ক্ষেত্রেই এই অবসাদ ও বিষণ্ণতা দেখা দিয়ে থাকে বলে ধারণা ছিল, কিন্তু সন্তানের বাবাদের ক্ষেত্রেও তা একইভাবে প্রযোজ্য।

ইউআই হেলথের টু-জেনারেশন ক্লিনিকে পরিচালিত এই গবেষণার প্রধান গবেষক ডক্টর স্যাম ওয়েনরাইট তাই সদ্য বাবা হওয়া ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। গবেষক বলছেন, অনেক বাবাই মানসিক চাপে পড়েন, ভয় পান, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁদের মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে একটি নতুন শিশুকে পৃথিবীতে আনার পর তাঁকে সামলানোর পাশাপাশি অন্য কাজের ভারসাম্য বজায় থাকবে তো? অভিভাবক হতে গিয়ে, মায়ের সঙ্গে মিলে সন্তান সামলানোর দায়িত্ব নিতে গিয়ে নাজেহাল হন পুরুষরা। এই নতুন এক পরিস্থিতিতে পড়ে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তারা। আরও কঠিন বিষয় হচ্ছে, চিরাচরিত ধ্যানধারণা পুষে রেখে তারা নিজেদের সমস্যার কথা কাউকে বলেনও না। ফলে সদ্যোজাতের মা এবং বাবা দু'জনেই শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় থাকেন।

আরও পড়ুন- ৩৬ বছর ধরে ‘গর্ভবতী’ এই পুরুষ! অস্ত্রোপচার শেষে চোখ কপালে চিকিৎসকদের…

যে মহিলা প্রসবোত্তর বিষণ্নতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যদি অনুভব করেন যে তাঁর সঙ্গীও অবসাদে ভুগছেন বা এই সন্তানের জন্মকে ঘিরে মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন তাহলে সেই মা- নিজের অবসাদ বা বিষণ্ণতা কাটিয়েও উঠতে পারেন না সহজে।

গবেষকরা দেখেছেন, যে এই পুরুষদের প্রায় ৯০ শতাংশই জাতি বিদ্বেষ, চিরাচরিত বর্ণবাদ এবং সামাজিক কিছু অযৌক্তিক আচরণের মুখোমুখিও হচ্ছেন যা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও খারাপ করতে দিচ্ছে। গবেষকরা আরও বলছেন, যে বাবাদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন, তাঁদের অধিকাংশই বলেছেন, "আমি সত্যিই চাপে আছি, কিন্তু আমি চাই না যে আমার সঙ্গী এটা জানুক কারণ তাহলে সে নিজে আরও ভেঙে পড়বে। আমার থেকে কোনও সাহায্য বা সমর্থন পাবে না।"

সদ্য হওয়া বাবাদের অভিজ্ঞতা বোঝার লক্ষ্যে তাই গবেষকরা আরও বড় গবেষণার পথে হাঁটতে চাইছেন, বিশেষ করে তাঁদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য জানতে। একটি বিষয় স্পষ্ট, বাবারা যারা আখেরে পুরুষ, পিতৃতান্ত্রিক ধারণা থেকে তারা বেরোতে পারেন না, তাই নিজেদের এই অবসাদ নিয়ে কথা বলাকে দুর্বলতা ভাবেন। সমাজ 'বাবার দায়িত্ব' বলে যে পাথর সুযোগ পেলেই পুরুষের কাঁধে চাপিয়ে দেয় তা তাঁদের আরও গুটিয়ে দেয়। আর এই প্রভাব গিয়ে পড়ে সদ্যোজাতটির মায়ের উপরেও যিনি ইতিমধ্যেই শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, মানসিক স্বাস্থ্যও তথৈবচ। বাবারা কিছুতেই এই অবসাদ কাটাতে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না, খানিক 'লোকে কী বলবে' এই ভয়েই। পিতৃত্বের গরিমা আসলে তাঁদের খেয়ে ফেলে। চিকিৎসকের কাছে খুলে বলা দরকার। বাবা হওয়া মানে সত্যিই জীবন খানিকটা বদলে যাওয়া। একটা গতানুগতিক জীবন বদলে গেলে সমস্যা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সেই পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে যুঝতে আপনাকে সাহায্য তো করতেই পারেন।

More Articles