তালাকের পরেও ভরণপোষণ পাবেন মুসলিম মহিলারা, ঐতিহাসিক রায়ে যা জানাল সুপ্রিম কোর্ট

Alimony Order For Muslim Women: সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি জানিয়েছে, মুসলিম বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলারাও এবার ফৌজদারি আইনের আওতায় স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ চাইতে পারেন।

বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে এবার বড়সড় সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের। আর্থিক ভাবে সাবলম্বী নন, এমন বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলারা প্রাক্তন স্বামীদের কাছে খোরপোশ দাবি করতেই পারেন। সাফ জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। মুসলিমদের তালাক প্রথা নিয়ে এর আগেও দেশের উপর দিয়ে বহু ঝড় বয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি জানিয়েছে, মুসলিম বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলারাও এবার ফৌজদারি আইনের আওতায় স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ চাইতে পারেন। কোনও রকম দয়া বা অনুগ্রহ নয়, এটা তাঁদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে বলেই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আব্দুল সামাদ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে খোরপোশ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে মামলা করেন তেলঙ্গানার একটি পারিবারিক আদালত। ২০ হাজার টাকা করে সেই প্রাক্তন স্ত্রীকে ভরণপোষণের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালতে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে হাইকোর্টে, এবং সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সামাদ। ২০১৭ সালে তিন তালাকের মাধ্যমে স্ত্রীকে বিবাহবিচ্ছেদ দেন ওই ব্যক্তি। সেই ঘটনায় পারিবারিক আদালতে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। সেখানেই ২০ হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ পান সামাদ। ২০১৯ সালে অবশ্য তিন তালাকর প্রথাকেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর থেকে তিন তালাক বেআইনি বলে ঘোষিত হয়।

আরও পড়ুন: কোনও ধর্মের জন্য আর আলাদা বিধি নয়! অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে কী চাইছেন মোদি?

সম্প্রতি আব্দুল সামাদের মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগর্থনা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চে। সেখানেই এই রায় দেওয়া হয়। বিচারপতিদের বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসেডিওরের ১২৫ ধারা কেবলমাত্র বিবাহিত মহিলাদের জন্যই নয়, সমস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারায় কী বলা হচ্ছে? ওই ধারা অনুযায়ী, আর্থিক ভাবে সাবলম্বী নন, এমন কোনও মহিলার স্বামী যদি তাঁর স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণ করতে অস্বীকার করেন বা তাঁর অবহেলা করেন, সেক্ষেত্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে মাসিক ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দিতেই পারেন। এবং সেই ভাতার অঙ্ক নির্ধারণ করবেন সেই ম্যাজিস্ট্রেটই। শুধু স্ত্রীই নন, ১২৫ ধারা অনুযায়ী, পিতা বা সন্তানের উপর নির্ভরশীল সন্তান বা পিতা-মাতা তখনই ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন যখন তাদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই।

বর্তমানে অবশ্য আইনের অনেক কিছুই বদলেছে। ভারতীয় সংবিধানের ফৌজদারি কার্যবিধির কোডগুলি বর্তমানে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তবে ১ জুলাইয়ের আগে দায়ের হওয়া মামলাগুলির ক্ষেত্রে এখনও পুরনো আইনই প্রযোজ্য বলে জানা গিয়েছে।

নিম্ন আদালতের নির্দেশতে চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে হাইকোর্টে যান সামাদ নামে ওই ব্যক্তি। প্রাক্তন স্ত্রীকে অন্তবর্তীকালীন ভরণপোষণ হিসেবে দশ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এর পর মুসলিম আইনের কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সামাদ। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ আইনের উপরে আর কোনও আইন প্রাধান্য পাবে না।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতার পর এই প্রথম! দেশের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হল না একজন মুসলিম সাংসদেরও

দেশের একটি লজ্জাজনক অধ্যায় ছিল এই তিন তালাক প্রথা। যেখানে শুধুমাত্র মুখে তিন বার তালাক উচ্চারণ করে যে কোনও সময় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিতে পারতেন মুসলিম সমাজ। তবে ২০১৯ সালে সেই আইনটি রদ করা হয়। এই তিন তালাক আইনের বলি হয়েছেন অজস্র মহিলা। তাঁদের মানবিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এখনও বহু ক্ষেত্রেই তালাক মামলায় খোরপোশ সংক্রান্ত অসুবিধা রয়েছে। যা সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়ে অনেকটাই মিটল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles