পদ্মশ্রী পেলেন জারোয়াদের ডাক্তারবাবু, চেনেন এই বাঙালি চিকিৎসককে?
Ratan chandra kar awarded Padma Shri : পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকায় এবার নাম রয়েছে জারোয়াদের ডাক্তারবাবু রতন চন্দ্র করের।
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা রতনচন্দ্র কর। পেশায় একজন সরকারি চিকিৎসক। তবে আর পাঁচজন চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর তফাৎ তিনি যাদের চিকিৎসা করেন তারা সমাজের মূল স্রোতের বাইরে। বিলুপ্তপ্রায় জঙ্গিল উপজাতি জারোয়াদের ডাক্তারবাবু এই রতনচন্দ্র কর। যে নেগ্রিটো উপজাতিদের দেখলেই নাক সিঁটকায় সমাজের অধিকাংশ মানুষ, তাদেরই নিরলস চিকিৎসায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন এই মানুষটি। কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন এই পাহাড়ি, জঙ্গলিদের সঙ্গে। তাদের শরীর এবং মনের দায়ভার সামলেছেন নিজের হাতে। আর সেই কাজেরই সম্মান মিলেছে সম্প্রতি। নতুন বছরের পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকায় এবার নাম রয়েছে জারোয়াদের ডাক্তারবাবুর। যদিও কোনও পুরস্কারই তাঁর এই মহৎ কাজের সঠিক নির্ণায়ক হতে পারে না, তবুও আজকের পদ্ম সম্মান যে আগামীতে আরও অনেককে এই কাজে আগ্রহী করবে তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে পদ্মশ্রী পুরস্কারের। তাতেই আরও তিনজন বাঙালির সঙ্গে জ্বলজ্বল করছেন চিকিৎসক রতনচন্দ্র কর। এই তালিকার অন্যান্য বাঙালিরা হলেন সূচিশিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী, প্রবীণ লোকসঙ্গীত শিল্পী মঙ্গলকান্তি রায় এবং ভাষা গবেষক ধনীরাম টোটো।
আরও পড়ুন - মাদার টেরেসা: কতটা আলো আর কতটা কালো? উন্মোচিত সবটা
রতনবাবুর বয়স এখন প্রায় ৬৬ বছর। দীর্ঘ কর্মজীবন থেকে এখন প্রথাগত বিরতি। তবে কাজ ছাড়তে পারেননি এখনও। আজও বারবার ফিরে যান উপজাতিদের কাছে। তাদের অসুবিধার কথা শোনেন। সাধ্যমত চিকিৎসা এবং পথ্য দিয়ে পাশে দাঁড়ান মানুষটি। সুদীর্ঘ কর্মজীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় তাঁর কেটেছে এই আন্দামানেই। স্থানীয় আদিবাসী জারোয়া, ওঙ্গি, গ্রেট আন্দামানিজদের মতো আরও অনেক জনজাতির মানুষদের চিকিৎসায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। তাই হয়তো আজও নিয়ম মাফিক কর্মবিরতি তাঁর কাজে ছেদ টানতে পারেনি।
সময়টা ১৯৯৯ সাল। রতনবাবু ততদিনে আন্দামানে চিকিৎসার কাজে নিযুক্ত হয়ে গিয়েছেন। ঠিক এরকম সময় গোটা দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে দেখা যায় হামের প্রাদুর্ভাব। সেই রোগ রেহাই দিল না নেগ্রিটো জংলি জারোয়াদেরও। ক্রমেই মহামারির আকার নিল হাম। ঠিক এই সময়ে স্বয়ং ঈশ্বর হয়ে উপস্থিত হলেন চিকিসক রতনচন্দ্র কর। রাতদিন চিকিৎসা এবং নিরলস সেবা করে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনলেন জারোয়াদের। আর সেই দিন থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন তাদের প্রিয় ডাক্তারবাবু। তাঁর হাত ধরেই মারাত্মক রোগের হাত থেকে রেহাই পায় এই জনগোষ্ঠী। এমনকী একসময় প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনেও রয়েছেন এই মানুষটির চিকিসাই। জারোয়া জনজাতির সংখ্যা এখন ৭৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০। এর পিছনেও রয়েছে রতনচন্দ্র করের চিকিৎসার অবদান।
ভারত সরকারের এই পদ্মশ্রী পুরস্কার তাই যথার্থই বলা চলে। একজন সরকারি চিকিৎসক হয়ে মানুষের মধ্যে এমনভাবে আজীবন মিশে যাওয়ার যে ক্ষমতা নিজের মধ্যে লালন করেছেন রতনবাবু, তার তুলনা হয় না সত্যিই। পেশাগত গণ্ডি টপকে কবেই যেন হয়ে গিয়েছেন জারোয়াদের বন্ধু। তাদেরই একজন। তথাকথিত সমাজের চোখে প্রতিদিন উপেক্ষিত উপজাতিদের যত্ন করে আগলে রাখার জন্য তাই যে কোনও পুরস্কারই কম মনে হয়, তা বলাই বাহুল্য। সমাজের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে এই রতনবাবুদের মতো মানুষ আজও খুব প্রয়োজনীয়।