বিশ্রাম নিতে কেন সেমিনার রুমে যেতে হয়েছিল আরজি করের চিকিৎসককে?

বিশ্রাম নিতে গিয়ে চিকিৎসকের মৃত্যু , উঠছে ছাত্রী নিরাপত্তার প্রশ্ন

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে গোটা শহরে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ওই চিকিৎসকের শরীরে বহু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার দিন রাত ২টো নাগাদ ডিনার করেন চিকিৎসক, তারপর বিশ্রাম নিতে যান সেমিনার রুমে। তাএ আগে টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করেছিলেন তিনি। তারপর রওনা হন অপেক্ষাকৃত দূরের নিরালা সেমিনার রুম। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, রাত ৩টে থেকে ভোর ৬টার মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে চিকিৎসককে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সুরক্ষিত কোনো বিশ্রামকক্ষ কেন নেই হাসপাতালে? কেন সেমিনার রুমে যেতে হয় বিশ্রাম নিতে? নারীসুরক্ষার তোয়াক্কা কেন করে না হাসপাতাল? গাফিলতির শিকড় কত গভীর?

 
জরুরি বিভাগের চরতলায় ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ উঠছে, সেখানে কোনো রকম ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল না। জুনিওর মহিলা চিকিৎসক সে দিন রাতে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে ডিউটিতে ছিলেন। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সেই বিভাগে নাকি গত তিন বছর কোনো নিরাপত্তারক্ষীই নেই। যে মেয়েরা লাখো প্রাণের দায়িত্বে, রাত জেগে কর্মে অবিচল, তাঁর প্রাণের দায়িত্ব তবে কার?
 
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তিন মাস আগেও বোঝা গিয়েছিল, যে কোনো দিন বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সে দিনও যখন ওই ঘরে মহিলা চিকিৎসকরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, কয়েকজন মত্ত যুবক ঢুকে পড়েছিল। তারপর কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগও করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নাকি কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। প্রশ্ন উঠছে, কেন বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ মেনে নিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?
 
চিকিৎসক মৈনাক পালের সঙ্গে কথা বলে ইনস্ক্রিপ্ট। মৈনাক পাল পরিকাঠামোর বেআব্রু দশা তুলে ধরে বলেন, 'জুনিয়র ডাক্তারদের একটিমাত্র রেস্টরুম। সেখানেই যেহেতু ছেলে, মেয়ে উভয়েরই থাকার ব্যবস্থা, এতে মেয়েদের প্রাইভেসি নষ্ট হতে পারে। তাই মেয়েটি রেস্টের জন্য সেমিনার ঘরে গিয়েছিলেন।' তিনি আরও বলেন, 'সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপত্তার অভাব, পর্যাপ্ত সিসিটিভি নেই এবং অমানবিক ডিউটির সময়।'
 
আরজি করের প্রিন্সিপাল বলেছেন, মহিলা চিকিৎসক একা একা কেন সেমিনার ঘরে গিয়েছিলেন? এই প্রশ্নে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। রাতে একা কর্মক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক অবাধ বিচরণ করলে তাঁকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে? তাও আবার সরকারি ব্যবস্থাপনায়?
 
উল্লেখ্য, রাজ্যের নামজাদা হাসপাতাল আরজি কর। সেখানেই সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলার অভিযোগ উঠলে, বাকি হাসপাতালগুলির অবস্থা কেমন? এখানে বহু মহিলা চিকিৎসক নাইট ডিউটি করেন। তবুও মহিলাদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম কেন নেই এই প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক নয় কি? কেন তিন মাস আগে নিরাপত্তার অভিযোগ জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ সে প্রশ্নও তুলছেন ওই চিকিৎসকের সহপাঠীরা। কেন প্রতিটি বিভাগের সামনে নিরাপত্তারক্ষী নেই? কর্তব্যরত চিকিৎসকের সুরক্ষার দায় যাদের, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্যপালনে অসীম অবহেলাই গোটা ঘটনায় সামনে আসছে বারবার।

More Articles