বদ্ধ বাথরুমে চিতাবাঘের সামনে বেকায়দায় কুকুর, তারপর? যে ঘটনায় বিস্মিত সোশ্যাল মিডিয়া

Dog trapped in bathroom with Leopard : সামনেই বসে আছে একটি বিরাট, পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে কুকুরটির দিকে। চারিদিকে পরিবেশ থমথমে।

ছোট্ট সাধারণ একটি বাথরুম। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ, আলো জ্বলছে। এছাড়া চারদিকে বন্ধ। একটি মাত্র ছোট জানলা, সেটাও বাথরুমের বেশ কিছুটা ওপরে। আর সেই ঘরের মধ্যেই এক কোণে বসে আছে একটি কুকুর। মাথা নিচু, ভয়ে সিঁটিয়ে আছে একেবারে। কেন? তার ঠিক সামনেই বসে আছে একটি বিরাট, পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে কুকুরটির দিকে। চারিদিকে পরিবেশ থমথমে।

এরপর ঠিক কী হতে চলেছে, সেটা আন্দাজ করা খুব একটা শক্ত কাজ নয়। চিতাবাঘটি নিশ্চয়ই ক্ষুধার্ত, তারই সামনে বসে আছে আস্ত একটি কুকুর। সিনেমার মতো এই দৃশ্যের ক্লাইম্যাক্স অনেকেরই জানা। কিন্তু একটা কথাই তো আছে, ‘সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!’ কারণ, এরপর ওই এলাকায় যা ঘটল, তা শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। আজ থেকে দু’বছর আগের এই ঘটনা আজও ফিরে ফিরে আসে মানুষের মনে।

অকুস্থল এই ভারতই। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্ণাটকের বিলিনেলে গ্রামে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। একটি বাড়ির বাথরুমের ভেতর নাকি আটকে পড়েছে একটি আস্ত চিতাবাঘ! আর তার ঠিক সামনেই বসে আছে একটি কুকুর। কেউ একজন বাথরুমের জানলা দিয়েই একটি ছবি তোলেন। মুহূর্তে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। সেইসঙ্গে ভাইরাল হয় ঘটনাটি। জানা যায়, ক্ষুধার্ত ওই চিতাবাঘটি কোনওভাবে ওই এলাকায় ঢুকে পড়েছিল। সামনে ওই কুকুরটিকে দেখতে পেয়ে তাড়া করে। প্রাণ বাঁচাতে কুকুরটি এই বাথরুমে ঢুকে পড়ে। সেইসঙ্গে চিতাবাঘও…

তারপর? এখান থেকে তো বেরনোর রাস্তা নেই। জানলা দিয়ে বেরোতে গেলে চিতাবাঘকে টপকে বেরোতে হবে। দরজা বন্ধ; আর কোনও রাস্তা নেই। সহজেই আক্রমণ করতে পারে চিতাবাঘ। ছিঁড়েখুঁড়ে শেষ করে দেবে কুকুরটিকে। যখন বেরোবে, হয়তো গোটা বাথরুম ভরে থাকবে রক্তে আর মাংসে। এমন ছবিই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু মিনিটের পর মিনিট কেটে গেল, চিতাবাঘ চুপ করে বসেই আছে! কুকুরটি যথারীতি জড়সড়ো, মৃত্যুভয়ে কাঁপছে। মিনিট পেরিয়ে কেটে গেল ঘণ্টা। চিতাবাঘ এক চুলও এগোচ্ছে না কুকুরটির দিকে! শেষমেশ নয় নয় করে ছ’ঘন্টা পেরিয়ে গেল। চিতাবাঘ আর কুকুর যে যার নিজের জায়গায়। ঠায় বসে আছে…

ইতিমধ্যেই স্থানীয় বন বিভাগকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তারা এসে উপস্থিত হওয়ার পর সাবধানে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করল। তখনই জানলা বেয়ে বাইরে পালিয়ে গেল চিতাবাঘ! পরে কুকুরটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। নবজীবন লাভ করে কুকুরটিও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল!

কিন্তু এমনটা কেন হল? প্রচণ্ড খিদের সময় সামনে যা পায় তাই তো খেয়ে নেয় যে কোনও জীব। উপরন্তু সে যদি চিতাবাঘের মতো হিংস্র বন্যজন্তু হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে এমন অদ্ভুত আচরণ কেন? বন্যপ্রাণ নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাঁরা এর উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের মতে, চাইলে ওই কুকুরটিকে মেরে ফেলা চিতাবাঘের বাঁ হাতের খেল ছিল। খিদের জন্যই তো তাড়া করেছিল! তাহলে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যজন্তুরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত স্বাধীনচেতা। কেবল নিজের প্রতিই নয়, তার সামনে যে পশুরা আছে, প্রত্যেকের প্রতিই একই মনোভাব। যদি কোনও হিংস্র জন্তু দেখে, তার সামনে থাকা প্রাণীটি সেই স্বাধীনতা পাচ্ছে না, আটকে পড়ে আছে, তখনই তারা পিছিয়ে যায়। মনে করে, স্বাধীনতা যার অধিকার, তাকে এভাবে আক্রমণ করা ঠিক নয়। তখন খিদের জায়গায় সামনে আসে দুঃখ, সমব্যথী হয়ে যায় তারা। খেয়াল করুন, কুকুরটি যতক্ষণ বাইরে ছিল, ছুটছিল, ততক্ষণ চিতাবাঘটিও নিজের উদরপূর্তির জন্য তৎপর ছিল। বাথরুমে আটকে পড়া মানে সেই স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়া। ব্যস, এখানেই চিতাবাঘটি চুপ হয়ে গেল।

কথায় বলে, বনের জীবন মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। স্বাধীনতার গুরুত্ব যে কতখানি, সেটা এই বন্য জন্তুরাও জানে। ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা, চিন্তা করার, কথা বলার, নিজের মতো জীবন কাটানোর স্বাধীনতা। সমস্ত কিছুকে মর্যাদা দেয় প্রাণীরা। অথচ তাদের থেকে কয়েকশো গুণ বেশি বুদ্ধিমান মানুষ সেই স্বাধীনতাই হরণ করতে চায়। কে কী ভাবে বাঁচবে, সেটা তো তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে একসঙ্গে বাঁচা। ২০২১ সালের কর্ণাটকের এই ঘটনা সেটাই আরও একবার শিখিয়ে গেল আমাদের। কিন্তু আমরা, সভ্য মানুষরা কি আদৌ শিখব?

More Articles