পর্যটকদের জন্য দুঃসংবাদ! কেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডুয়ার্সজুড়ে বন্ধ হচ্ছে রিসর্ট?
Dooars Illegal Resorts: সরকারি জমি দখল করে তৈরি হওয়া সব রিসর্টকেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জমি খালির নোটিশ ধরিয়েছে প্রশাসন।
ডুয়ার্স বরাবরই বাঙালির ঘুরতে যাওয়ার তালিকায় শুরুর দিকেই থাকে। বিগত বেশ কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গে পর্যটন বেড়েছে প্রচুর। পাহাড়ে অফবিট ডেস্টিনেশনের ঝোঁক বাড়ায় বেড়েছে হোমস্টের সংখ্যা ঘিরে। বেড়েছে বিলাসবহুল রিসর্টও। কিন্তু অভিযোগ, এই রিসর্ট সবই কি বৈধ? বিশেষ করে ডুয়ার্স অঞ্চলে জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় যে রিসর্টগুলি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন লাটাগুড়ি সহ ক্রান্তি ব্লকের বিভিন্ন স্থানে এক শ্রেণির জমি মাফিয়াদের যোগসযোগে সরকারি জমি দখল করে রিসর্ট গড়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গল সংলগ্ন সরকারি জমি উদ্ধার অভিযান চলছে ডুয়ার্স জুড়ে। সরকারি জমি দখল করে তৈরি হওয়া সব রিসর্টকেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জমি খালির নোটিশ ধরিয়েছে প্রশাসন। এমন বহু রিসর্টের মধ্যে নয়টি রিসর্টকে গত বুধবার রাতে নোটিশ জারি করেছেন ক্রান্তি ব্লকের বিডিও। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে পর্যটকদের প্রিয় ডুয়ার্স জুড়ে ছড়িয়ে থাকা রিসর্টগুলিতে।
সত্যিই কি সরকারি জমি দখল করে রিসর্ট তৈরি করছে জমি মাফিয়ারা? জলপাইগুড়ি জেলার লাটাগুড়ি রিসর্টে প্রশাসনের তরফে পরিদর্শন চলেছে। জলপাইগুড়ি জেলাজুড়ে এরকম বহু জমি বেহাত হওয়ার অভিযোগ উঠছে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মহুয়া গোপ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে সেই উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। কিছু ফাঁক ফোঁকর থেকেই গেছে বলেই দাবি তাঁর। তাহলে কি সরকারি জমি হাতানো আর তাতে অবৈধ রিসর্ট তৈরির অভিযোগ সত্যি?
আরও পড়ুন- বোদাগঞ্জ থেকে মেটেলি, ডুয়ার্স ভ্রমণে যে ঐতিহাসিক মন্দিরগুলি দেখতেই হবে
শুধু শাসকদলের সভানেত্রী নন, রাজ্যে সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে লাটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআইএমও। জেলা প্রশাসন এই সমস্ত রিসর্টে যে অভিযান চালিয়েছে তাকে সমর্থন জানিয়েছে চালশা এবং লাটাগুড়ির বিভিন্ন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনগুলিও।
এই প্রসঙ্গে পরিবেশ কর্মী অনির্বাণ মজুমদার বলেন, "এই প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি বন বিভাগের যে জমিগুলো অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে এক শ্রেণির মানুষ, সেইগুলো কীভাবে উদ্ধার করে বন ও পরিবেশকে রক্ষা করা যায় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা করেছি।" পরিবেশ কর্মী সুমন চৌধুরী জানান, "আমরা চেয়েছিলাম হোম ট্যুরিজম, ইকো ট্যুরিজম হোক। স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপশি বন ও পরিবেশ রক্ষা হোক, তবে এক শ্রেণির পুঁজিপতিদের দৌরাত্ম্যে আজ বিপন্ন ডুয়ার্সের পরিবেশ।”
আরও পড়ুন- ছোট্ট জ্যোতি বসু থাকতেন এই বাড়িতেই! যেভাবে চোখ ধাঁধানো পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠল এই বাড়ি
গত এপ্রিল মাসেই, অবৈধ কারবার চলানোর অভিযোগে গ্রামবাসীরা ডুয়ার্সের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র 'উল্টা ঘর’-এর গেটে তালা দিয়ে দেন। সরকারি জমি দখল, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজ থেকে বের করে দেওয়া, নিয়মিত বেতন না দেওয়া, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীদের ঘর ভাড়া দেওয়া সহ একগুচ্ছ অভিযোগ ছিল উল্টা ঘরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সেচ দপ্তরের প্রচুর জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে রিসর্টটি।
এর আগে ২০২২ সালে বক্সা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বেআইনিভাবে চলা সব হোটেল, রিসর্ট, রেস্তোরাঁ এবং পর্যটনকেন্দ্র ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। ডুয়ার্সের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বেআইনিভাবে হোটেল, রিসর্ট, রেস্তরাঁ চলার অভিযোগ ছিল তখনও। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছিল, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হোটেল–রেস্তোরাঁগুলি। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেছিলেন, মহানন্দা, জয়ন্তী, মেচি, মালের মতো নদীগুলির বুক থেকে আইনের তোয়াক্কা না করেই পাথর তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যবসা হচ্ছে। যথেচ্ছ প্লাস্টিক, আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীগুলিতে। ২ বছর অতিক্রান্ত। ডুয়ার্সে অবৈধ রিসর্টের রমরমা একটুও কমেনি।