ডিপ ফেক রুখতে কড়া কেন্দ্র, আদতে কী এই 'ফোর পিলার স্ট্র্যাটেজি'?

Centre on Deep Fake: এবার এই ডিপ ফেক প্রযুক্তি রুখতেই কড়া অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্র সরকারের। বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে গুগল, মেটা-সহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসে কেন্দ্র তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক।

রশ্মিকা থেকে ক্যাটরিনা হয়ে কাজল। ডিপফেক ভিডিও এবং ছবির শিকার একের পর এক বলিউড অভিনেত্রী। তারকারাই যদি এইভাবে সাইবার অপরাধের কবলে পড়েন, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থাটা আঁচ করা কঠিন নয়। এবার এই ডিপ ফেক প্রযুক্তি রুখতেই কড়া অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্র সরকারের। বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে গুগল, মেটা-সহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসে কেন্দ্র তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য় ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব স্বয়ং। সেই বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, ভয়ঙ্কর এই প্রযুক্তির মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় নিচ্ছে কেন্দ্র। তার পরেই ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি করা হবে খসড়া আইনে। প্রস্তাবিত আইনে কড়া শাস্তির বিধান থাকবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে তথ্য় ও সম্প্রচার মন্ত্রক।

কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল রশ্মিকা মন্দানার একটি ভিডিও। সেই ভিডিওর শালিনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয় নেটিজেনদের একাংশ। পরে জানা যায়, ভিডিওয় দেখা যাওয়া মেয়েটি আদতে রশ্মিকাই নন। হ্যাঁ, মুখটি অবশ্য তাঁরই, তবে তাঁর মুখটি ডিপ ফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্য একজনের ভিডিওতে। একই ক্যাটরিনা কাইফের টাইগার ৩ ছবির একটি দৃশ্য নিয়ে একই ভাবে তৈরি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাদ যাননি জনপ্রিয় তারকা কাজলও। সম্প্রতি তাঁর পোশাক পরিবর্তনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে জানা যায়, সেটিও অন্য এক ইউজারের টিকটক ভিডিও, যেখানে দক্ষতার সঙ্গে বসানো হয় কাজলের মুখটি। কিছুদিন আগে ডিপফেক-শিকার হন সচিন-কন্যা সারাও। রশ্মিকার ঘটনায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলিউডের তাবড় তারকারা। অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে অনেকেই সরব হয়েছিলেন। ডিপ ফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধরনের হেনস্থা রুখতে কড়া পদক্ষেপ করুক কেন্দ্র, এমন দাবি জানিয়েছিলেন অনেকেই।

আরও পড়ুন: ভাইরাল ভিডিওর নারী রশ্মিকা মান্দানা নন, কী ভাবে চিনবেন ডিপফেক?

তারপরেই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র সরকার। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিণী বৈষ্ণব জানান, এই ধরনের ডিপ-ফেক ভিডিও প্রবণতা রুখতে 'ফোর-পিলার স্ট্র্যাটেজি' নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আইনি হোক বা প্রযুক্তিগত, কোনও দিকেই কোনও ফাঁক রাখতে চায় না তারা। সে কারণেই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে এই বৈঠক। যেখানে প্রায় প্রতিটি সংস্থাই স্বীকার করে নিয়েছে যে বিষয়টি বেশ ভয়ের। আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি মারাত্মক দিক হয়ে উঠেছে ডিপ-ফেক। এর মাধ্যমে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। বাড়ছে ব্ল্যাকমেলের প্রবণতা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় মেটা ও গুগলের সঙ্গে। বৈঠকে হাজির ছিলেন দেশের শীর্ষ এআই সংস্থা ও এআই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকেরা।

বৈঠকের মূল লক্ষ্যই ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের ভুয়ো কনটেন্টের বাড়বাড়ন্ত রুখতে প্রয়োজনীয় রূপরেখা তৈরি। বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিণী বৈষ্ণব জানান, এই ধরনের ডিপ ফেক ভিডিও আসবে আমাদের গণতন্ত্রের উপরেও বড়সড় এক ঝুঁকি। যেভাবে কোনও রকম যাচাইয়ের বালাই না করেই হু হু করে ভাইরাল হচ্ছে এই ধরনের ভিডিও, ছবি, তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার। খুব শিগগিরই এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারলে বিষয়টি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।

আপাতত এই ধরনের ডিপ ফেকের রমরমা রুখতে চারটি স্তম্ভের পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র সরকার। তার প্রথম ধাপে রয়েছে, ডিপ ফেক কনটেন্ট ও ভুয়ো তথ্যকে চিহ্নিত করে তাকে ছড়ানোর হাত থেকে রোখা। এই ধরনের অপরাধ রোখার আরও একটি দিক কিন্তু মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই নিয়ে নির্দেশিকা ও আইন তৈরি করে ফেলবে বলে জানানো হয়েছে মন্ত্রকের তরফে। তৈরি করা হবে একটি যথাযথ রূপরেখা।

আরও পড়ুন:প্রকাশ্যে পোশাক পাল্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ট্রোলড’, ভাইরাল ভিডিওয় সত্যিই কি কাজল?

যুগটাই সোশ্যাল মিডিয়ার। আমরা প্রতিটা মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার নজরদারির মধ্যে থাকি ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। কোনও একটা কনটেন্টের ভাইরাল হতে কয়েক মিনিটও লাগে না। ফলে এ নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছে মন্ত্রক। এ নিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরও একটি বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই বৈঠকেই এই সংক্রান্ত নির্দেশ এবং বিধির রূপরেখা চূড়ান্ত করে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

More Articles