'দ্য ওম্যান ইন হোয়াইট' - কবি এমিলি ডিকিনসনের শেষ ক'টি বছর
‘My life had stood – a Loaded Gun –
In Corners – till a Day
The owners passed - identified –
And carried me away –‘
১৫ মে, ১৮৮৬। আড়াই বছরের ব্রাইট’স ডিজিজের অস্বাভাবিক মৃত্যুযন্ত্রণার পরিসমাপ্তি। ইংরিজি কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক নক্ষত্রের পতন। এবং স্বভাবতই, তারারা যেভাবে খসে। কোনওরকম শব্দ ছাড়াই। জীবৎকালে মাত্র দশটি কবিতা এবং একটি চিঠি ছাপা হয়েছিল। অবশ্য এমন নীরব এবং পরিচিতিবিহীন জীবন এবং অবিচুয়ারি সাহিত্যের ইতিহাসে নতুন না। কিন্তু কোথায় এমিলি ডিকিনসন অনন্যা? কেন তাঁর শেষ ক’টি দিন অন্যরকম? শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি রহস্যাবৃত কিছু মুহূর্ত, সাদা পোশাকে পরিবৃতা এক স্বপ্ননারী এবং তাঁর শাশ্বত কবিতা। প্রিয় পাঠক, একটু জেনে নিই ...
একের পর এক মৃত্যুশোক, অবসাদ এবং ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা একাকীত্বের মিস্টিক এক বোধ – এমিলি ডিকিনসনের শেষ সময়ের করুণতম এক কথকথার অন্যতম কয়েকটি সুতো বলা যেতে পারে। পাঠকের সুবিধার্থেই এমিলি সম্পর্কে ছোট্ট করে ক্রনোলজিটা বলে নেওয়া ভালো। ১৮৩০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস-এর অ্যামহারস্টে জন্ম এমিলি এলিজাবেথ ডিকিনসনের। বাবা গভীরভাবে ধার্মিক এবং নিষ্ঠাবান এডওয়ার্ড মেয়ে এমিলির পড়াশুনো এবং লেখালেখিতে যথার্থই অভিভাবক ছিলেন। অ্যামহারস্ট অ্যাকাডেমিতে পাঠরত অবস্থাতেই কবিতা লেখা শুরু, পরে পারিবারিক অ্যাটর্নি বেঞ্জামিন নিউটনের হাত ধরে ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং র্যাওলফ এমারসনের কবিতার সঙ্গে পরিচয়। নিউটনের যক্ষ্মায় অকালমৃত্যুতে কিছুটা হলেও স্তব্ধতা এবং এমিলির প্রথম বড়সড় মৃত্যুশোক এবং শোকগাথা – ‘When a little girl, I had a friend, who taught me immortality – but venturing too near, himself – he never returned’। পরবর্তীকালে লংফিলো, ব্রন্টে সিস্টার্স এবং এলিজাবেথ ব্রাউনিং-এর লেখার প্রতি গভীর আসক্তি। ক্রমশ ঘরবন্দি হয়ে থাকার এবং আনুষ্ঠানিক ক্রিশ্চান বিশ্বাসের প্রতি অনীহা – এই দুইয়ের লক্ষণ ক্রমশ দেখা দিতে থাকে এই সময়টা থেকেই। যদিও বন্ধু হিসেবে এই ক্রমশ কাছে আসেন আর্চ স্ট্রিট প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চের মিনিস্টার চার্লস ওয়াডসওয়ার্থ, স্প্রিংফিলদ রিপাবলিকান কাগজের সম্পাদক স্যামুয়েল বোলস, কাব্যসমালোচক টমাস হিগিনসন। ১৮৬৭ সাল থেকেই সম্পূর্ণভাবে সাদা পোশাকে নিজের হোমস্টেডের বাড়ির ঘরে অন্তরিন থাকতে শুরু করেন এমিলি। কেন? এমিলির কথায় –
‘I do not cross my Father’s ground to any house or town’
‘I felt a funeral, in my Brain,
And Mourners to and fro
Kept treading – treading – till it seemed
That sense was breaking through –‘
কিভাবে সেক্লুশন শুরু? কখন? ১৮৭৪ সালের ১৬ জুন বোস্টনে পিতার আকস্মিক স্ট্রোক এবং মৃত্যু। টানা তিনদিন ঘরবন্দি হয়ে রইলেন এমিলি। যখন ঘর খুললেন, বোন ল্যাভিনিয়া দেখলেন কালো পোশাকে পরিবৃত বাকি পরিবারের ঠিক বিপরীতে সাদা গাউনে থমথম করছে এমিলির মুখ, ছিপছিপে শরীর। ল্যাভিনিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাদা পোশাক কেন? তাঁরা তো এখন শোকের ভেতর আছেন! উত্তরে এমিলির বক্তব্য ছিল, তিনিও শোকের ভেতরেই আছেন। তাই সাদা পোশাক। এভাবেই সাদা এবং মৃত্যুচেতনা সমার্থক হয়ে যাচ্ছিল এমিলির ভেতর। প্রায় হিমশীতল এবং ডিকিনসন পরিবারে একধরনের অস্তিত্বহীন মায়ের ১৮৭৫-এর ১৫ জুন হঠাৎ সেরিব্রাল স্ট্রোক এবং ১৮৮২ সালে বৃদ্ধার মৃত্যু পর্যন্ত পরবর্তী সাত বছর ধরে দুই বোন এমিলি এবং ল্যাভিনিয়ার লড়াই, যা এমিলির কথায় ভয়াবহ ভীষণ – ‘Home is so far from home ….’। ১৮৮২ সালে চার্লস ওয়াডসওয়ার্থ ও ১৮৮৪ সালে যক্ষ্মায় ম্যাসাচুসেটস কোর্টের সিনিয়র জাজ অটিস লর্ডের মৃত্যু এবং এমিলির ভাষায় - ‘Our latest loss …’। ১৮৮২ সালে ভাই অস্টিনের সঙ্গে ম্যাবেল লুমিস টড নাম্নী এক লেখিকার প্রেম, এবং ফলত অস্টিনের স্ত্রী এবং এমিলির অন্যতম প্রিয় বন্ধু সুজানের দীর্ঘ এক অবসাদ যা ক্রমশ ছেয়ে যায় এমিলির ভেতরেও। ১৮৮৩ সালে ভাইপো গিলবার্টের মৃত্যু, ওটিস লর্ডের পর আবার যক্ষ্মার করাল গ্রাস। এইসব মৃত্যুশোক নিয়েই এমিলি লিখেছিলেন, ‘The dyings have been too deep for me, and before I could raise my Heart from one, another has come.’
শরীর সঙ্গ দেয়নি। ব্রাইট’স ডিজিজের লক্ষণ একের পর এক। ১৮৮৪ সালে রান্না করতে করতে হঠাৎ ব্ল্যাকআউট। শেষের শুরু। ঘন ঘন মাথা যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট এবং বমিভাব। ১৮৮৫ সালের ৩০ নভেম্বর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায়, ভাই অস্টিন বাধ্য হয়ে বোস্টন ট্রিপ ক্যান্সেল করে ছুটে আসেন বোনের কাছে। শেষের দিকে কিছুই লিখতে পারতেন না। কবিতাগুলি লিখে কাগজের পর কাগজ সুতোর মালা দিয়ে সেলাই করা এমিলিয়ান লেগ্যাসি বন্ধ হয়ে গেছিল বছর খানেক আগেই। শুধু চিঠি বড়জোর। শেষ চিঠিতে দুই কাজিন লুইস এবং ফ্রাঙ্ক নারকোসকে লিখেছিলেন, ‘Little cousins, Called Back. Emily’। দীর্ঘ চিঠির জন্য একটা সময়ে সমার্থক হয়ে যাওয়া এমিলি ডিকিনসনের সেই শেষ চিঠি এবং শেষ শব্দ। ১৮৮৬। ১৫ মে। অস্টিন লিখছেন, ‘She ceased to breathe that terrible breathing just before the whistles sounded for six (p.m.)’। দ্য স্প্রিংফিল্ড রিপাব্লিকানে সুজান লিখলেন, - ‘A Damascus blade gleaming and glancing in the sun was her wit. Her swift poetic rapture was like the long glistening note of a bird one hears in the June woods at high noon, but can never see’। সাদা কফিনের দিকে তাকিয়ে টমাস হিগিনসনের কণ্ঠে এমিলির প্রিয় আরেক এমিলি, এমিলি ব্রন্টের কবিতা ‘নো কাওয়ার্ড সোল ইজ মাইন’। হিগিনসনের স্মৃতিতে সেই দিন। কবিতা থামিয়ে একবার সাদা কফিনের দিকে তাকিয়েছিলেন হিগিনসন, মনে হয়েছিল, “E.D.’s face a wondrous restoration of youth – she is 54 and looked 30, not a gray hair or wrinkle, and perfect peace on the beautiful brow. There was a little bunch of violets at the neck and one pink cypripedium; the sister Vinnie put in two heliotropes by her hand ‘to take to Judge Lord’”। প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে পড়ে এমিলির কবিতা এবং বারবার ছেয়ে যাওয়া মৃত্যুচেতনা। মৃত্যু নিয়েই সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে আলোচিত কবিতাটিতে এমিলি লিখেছিলেন – ‘Because I could not stop for Death-/ He kindly stopped for me -/ The Carriage held but just Ourselves -/ And Immortality.’
শেষটুকুতে একটু আয়রনি থাকুক। এমিলির সমাধি বলতে একটা সময় পর্যন্ত ‘ই.ই.ডি.’ আদ্যাক্ষর দিয়ে চিহ্নিত সাধারণ একটি গ্রানাইট পাথর ছিল। পরে মার্থা ডিকিনসন বিয়াঞ্চি একটি মার্বেল স্ল্যাব দিয়ে এপিটাফটি বদলে দেন। যোগ হয় একটি দুটি নতুন শব্দ। হিউ কনওয়ে-র একটি উপন্যাসের নাম। এবং আয়রনিকালি দুই কাজিনকে লেখা এমিলির শেষ চিঠির শেষ দুটি শব্দ – ‘Called Back’ ...
‘I heard a fly buzz – when I died –
The stillness in the Room
Was like the stillness in the Air -
Between the Heaves of Storm –
…..
With Blue – uncertain – stumbling Buzz –
Between the light – and me –
And then the Windows failed – and then –
I could not see to see –‘