কীভাবে বৃদ্ধি পাবে ক্যান্সার রোগীদের আয়ু! যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয় বিজ্ঞানীরা
Cancer : নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরে মায়োকিন উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটা উন্নত হলে ক্যানসারকে এখনও মারণ রোগ বলেই সূচিত করা হয়। নিয়ত চলছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা, যাতে উপসম সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চিকিৎসায় ফল মিলছে, সম্পূর্ণ রোগ মুক্ত হচ্ছেন রোগীরা। কিন্তু তবুও যাদের ক্ষেত্রে ভয় কাটছে না সহজে তাদের জন্য মোক্ষম উপায় হতে পারে ব্যায়াম। ক্যান্সারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আয়ু রেখা খানিকটা বাড়িয়ে নিতে তাই প্রয়োজন সঠিক শরীরচর্চা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এডিথ কোওয়ান ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, একটি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস ক্যান্সার রোগীদের টিউমার বৃদ্ধিকে দমন করতে পারে, সেইসাথে সক্রিয়ভাবে ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এমনকী যখন ক্যানসারের কোষ সত্রিয় পর্যায়ে রয়েছে তখনও তো মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে ব্যায়াম।
ECU-তে ব্যায়াম মেডিসিন রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণায় আরও একটু তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। দেখা গিয়েছে নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে দেহে মায়োকাইনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মায়োকাইন হম এমন এক ধরনের প্রোটিন যা কঙ্কালের পেশী দ্বারা নিঃসৃত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। ব্যায়ামের ফলে পেশীর মধ্যে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং প্রোটিন নিঃসৃত হয় ফলে শরীর চাঙ্গা থাকে। তাই চিকিৎসকেরা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে ব্যায়ামের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন - ক্যান্সারের ভয়াবহ উপাদান মিলল ড্রাই শ্যাম্পুতে! কোন কোন শ্যাম্পু বিপজ্জনক, জেনে নিন
প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং প্রোস্ট্যাটিক ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত মায়োকাইনের গবেষণায় ইএমআরআই প্রফেসর রব নিউটনের সর্বশেষ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ব্যায়াম শরীরের রাসায়নিক অনু পরমাণুর এমন নিয়ন্ত্রণ করে যা ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। ১৪ ডিসেম্বরের ওই বিবৃতিতে তিনি কীভাবে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই বিষয়ে পরীক্ষার কথাও বলেন। নয়জন ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে শুরু হয়ে প্রোস্টেট ক্যান্সারের গবেষণা। প্রতিটি রোগীর ৩৪ মিনিটের ব্যায়ামের আগে এবং পরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ব্যায়ামের ঠিক পরেই দেহে মায়োকাইনের মাত্রা থাকে খুবই বেশি। অথচ আধঘণ্টা বিশ্রামের পর, তাদের মায়োকাইনের মাত্রা এবং ক্যান্সার দমনকারী প্রভাব আবারও কমে আসে। এর ফলে স্পষ্টতই ব্যায়ামের গুণাবলী প্রমাণিত হয়। নিউটন নিজেই এই গবেষণাটিকে যুগান্তকারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরও যোগ করেন যে, এই গবেষণা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ডাক্তারদের পরামর্শ নির্ধারণেও পরিবর্তন আনবে।
প্রাথমিক ভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউজরুমে একটু সেমিনারে এই ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধের কথা বলেছিলেন কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল গবেষণা। যদিও তিনি বাবার বলেছেন, ব্যায়াম ক্যান্সারের নিরাময় নয়, কেবল ক্যান্সার আক্রান্তদের আয়ু দীর্ঘায়িত করার একটা পন্থা মাত্র। তাই কেবল ব্যায়াম করেই রোগকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে এমন নয়। এমনকী মৃত্যুকে একেবারে হারিয়ে দেওয়া যাবে এমনও নয়। তবে তাকে খানিকটা হলেও দূরে সরানো যাবে নিশ্চিত।
এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে না হয়েছে, দিনে অন্তত ২০ মিনিট করে ব্যায়াম করা জরুরী। এতে পেশীর সম্প্রসারণ, অভ্যন্তরীণ ফার্মেসির আকার এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মায়োকিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখতে পারে।