সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ঘাপটি মেরে নয়া বিপদ! আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কাঁপছে উত্তরকাশী
Uttarkashi Tunnel Collapse: সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে সুড়ঙ্গের পাশেই তৈরি হয়েছে বিশাল বর্জ্যের পাহাড়। যেখানে যখনতখম ফের নামতে পারে ধস। এবং সেই ধসের জেরে ধুলোয় মিশে যেতে পারে আশপাশের জনবসতি।
সতেরা দিনের লাগাতার লড়াই, হাজার হাজার মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের জেরে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক। চারধাম প্রকল্পের আওতায় ওই সুড়ঙ্গ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদি সরকার। তাতে দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে পর্যটকদের যাতায়াত আরও সহজ হবে বলেই মনে করা হয়েছিল। সেই মতোই পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছিল। তবে সেই কাজের ফাঁকেই বাঁধল বিপদ। ধস নেমে সুড়ঙ্গের ভিতরেই আটকে পড়লেন ৪১ জন নির্মাণকর্মী। বিরাট কর্মকাণ্ড, দেশ বিদেশ থেকে ডেকে আনা বহু বিশেষজ্ঞ দল, সেনা, পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, বায়ুসেনা- সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৭ দিনের মাথায় উদ্ধার হলেন সুড়ঙ্গে বন্দি শ্রমিকেরা। তবে বিপদের এখনও শেষ হয়নি। যে কোনও মুহূর্তে আরও বড় কোনও বিপদ ঘটতে পারে। তেমনটাই আশঙ্কা করেছে বিশেষজ্ঞমহল।
কাজ চলাকালীন হঠাৎ করেই ধস নেমেছিল সুড়ঙ্গের মধ্যে। এমন ধস যে আবার নামবে না, তার নিশ্চয়তা নেই একফোঁটাও। সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে সুড়ঙ্গের পাশেই তৈরি হয়েছে বিশাল বর্জ্যের পাহাড়। যেখানে যখনতখম ফের নামতে পারে ধস। এবং সেই ধসের জেরে ধুলোয় মিশে যেতে পারে আশপাশের জনবসতি। আর তা এর থেকেও বেশি বিপজ্জনক হবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞরা। চারধাম প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছিল এই সুড়ঙ্গের কাজ। সুড়ঙ্গ খনন করতে গিয়ে কাদা-মাটির যে বর্জ্য বেরিয়ে এসেছে বারবার, সেসব জড়ো করা হয়েছে সুড়ঙ্গেরই একপাশে। জমতে জমতে তা আজ নিজেই ছোটোখাটো একটি পাহাড়। অথচ ধুলোবালির সেই পাহাড়কে আটকানোর জন্য কোনও প্রাচীর বা দেওয়াল তৈরি করা হয়নি। উত্তরাখণ্ডের মতো পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টি তো কোনও বিরল বিষয় নয়। একবার ভারী বৃষ্টি নামলেই চাপ পড়বে ওই ধুলোমাটির পাহাড়ে। যার ফলাফল ধস। সে ক্ষেত্রে যে বর্জ্য গড়াতে গড়াতে লোকালয়ে নামবে না এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর ওই বর্জ্যের পরিমাণ এতটাই যে যে কোনও মুহুর্তে তা ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে গোটা লোকালয়কে।
আরও পড়ুন: মুড়ি আর পাথর চুঁইয়ে পড়া জল! সুড়ঙ্গের যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের কথা শোনালেন ঝাড়খণ্ডের রাজেন্দ্র
প্রকৃতিকে নিয়ে সবসময়ই ছিনিমিনি খেলেছে মানুষ। বারবার নিয়ম ভেঙে তাকে নিজের মতো করে গড়েপিটে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর তার ফল হয়েছে ভয়াবহ। নির্বিচারে জঙ্গল কেটেছে, পাহাড় ভেঙে রাস্তা তৈরি করেছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে সেই জলকে নিজের সুবিধা মতো কাজে লাগিয়েছে। আর সেই সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি। আর প্রকৃতির সেই বিরোধিতা খুব একটা সুবিধাজনক হয়নি মানুষের জন্য। কেদারনাথ বিপর্যয় হোক বা হিমাচল প্রদেশের সাম্প্রতিক বন্যা, ধস। কিংবা উত্তরকাশীর এই সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ৪১ জন শ্রমিকের এই আটকা পড়া। এ-ও তো একধরনের প্রকৃতির গর্জে ওঠাই।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল অর্থাৎ উত্তরাখণ্ডের মতো এলাকাগুলিতে নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার কথা, যাতে তার প্রভাব পার্বত্য এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতিতে না পড়ে। কিন্তু সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যাপারে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সুড়ঙ্গের পাশে বর্জ্য ফেলার জায়গায় কেন কোনও প্রাচীর দেওয়া হয়নি প্রশ্ন উঠেছে। সেই নির্মাণ বর্জ্য লোকালয়ে নামলে বাড়িঘর চাপা পড়ে যেতে পারে। যদি সেসব গিয়ে পড়ে নদী বা ঝর্নায়, সে ক্ষেত্রে সেখানকার জলের ঘনত্ব বেড়ে যেতে পারে। পাহাড়ের নিচের অংশে বন্যা হলে বর্জ্য গিয়ে জমবে সেখানে। যার ফলে বসতি ডুবে যেতে পারে কাদাজলে।
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নেমে যে বিপর্যয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে অতিকষ্টে। বহু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদই এই ঘটনার জন্য উত্তরকাশীর পরিকল্পনাবিহীন এই নির্মাণকাজকেই দায়ী করেছেন। আগে থেকে সতর্ক হলে, নিয়ম মেনে কাজ করলে এই ধরনের বিপর্যয় হয়তো এড়ানো যেত। আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমালয়ের ভূতত্ত্ব আর পাঁচটা জায়গার মতো নয়। অনেকটাই আলাদা। ফলে কী ঘটতে চলেছে, তা আগে থেকে আঁচ করা সম্ভব নয়। ফলে সতর্কতার প্রয়োজন আছে।
আরও পড়ুন: ৪১ শ্রমিকের এই পুনর্জন্ম আসলে ‘মিরাকল্’! কেন প্রকৃতিকেই সমস্ত কৃতিত্ব দিচ্ছেন আর্নল্ড?
সভ্যতা যত এগোবে, উন্নয়ন, নির্মাণ পাল্লা দিয়ে বাড়বে। এ কঠিন সত্য। সভ্যতার শর্তই এগিয়ে যাওয়া। তাই হিমালয় পার্বত্য এলাকাতেও যে এ ধরনের কাজকর্ম হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে ৮৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পে যে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তা একবাক্যে মেনেছেন সকলে। পাশাপাশি প্রয়োজন পার্বত্য় এলাকায় নির্মাণের নিয়মকানুনগুলোকে যথাযথ ভাবে মেনে চলা। আর সুড়ঙ্গের মধ্যে এতগুলো শ্রমিকের আটকে পড়া তারই ইঙ্গিত যেন। জানা গিয়েছে, উত্তরকাশীর এই প্রকল্প রূপায়ণে রয়েছে হায়দরাবাদের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা। পরিবেশ সংক্রান্ত পরীক্ষার পরেই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে এই বর্জ্যের ধ্বংসস্তূপ নিয়ে এখনও সতর্ক না হলে যে সামনে সমূহ বিপদ, তা নিয়ে সাবধান করে দিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।