পথকুকুরের দায়িত্ব নিলেই বাড়তি চাপ! সুপ্রিম মন্তব্যে তীব্র আলোড়ন শহরের পশুপ্রেমীদের মধ্যে
Stray Dogs: শ্রীলেখা মিত্র-র বক্তব্য, "সুপ্রিম কোর্ট যদি এমন কথা বলেন, তাহলে আমাদের মত পথকুকুরকে যারা খাওয়াতে ভালবাসে, তাদের কী হবে?
পথকুকুরকে খাওয়ানো নিয়ে প্রায়শই হেনস্থার স্বীকার হন বহু পশুপ্রেমী মানুষ। পাড়া-প্রতিবেশীরা প্রায়শই রাস্তায় হঠাৎ কুকুর বেড়ে যাওয়া নিয়ে কথা শোনান এইসব সারমেয়প্রেমী মানুষদের। এই পরিস্থিতিতেই কেরল সরকারের একটি পুরোনো মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করে, যারা পথকুকুরদের নিয়মিত খাবার দেন, সেইসব কুকুরদের টিকাকরণের ব্যবস্থাও সেই ব্যক্তিদেরই করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, পথকুকুররা যদি কাউকে আক্রমণ করে তবে সেই আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার দায়িত্ব ও নিতে হবে তাদের। মানুষ ও সারমেয়র সম্পর্ক নিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরীর বক্তব্য, প্রাণীর অধিকার ও মানুষের নিরাপত্তা দুটোর সামঞ্জস্য বজায় রাখা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য
বিচারপতি খান্না পথকুকুরদের প্রসঙ্গে বলেছেন, "আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই কুকুর পছন্দ করেন। আমি নিজে ও কুকুরদের খাওয়াতে ভালবাসি। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি। কুকুরদের যত্ন করুন, কিন্তু তাদের চোখে চোখে রাখুন যাতে কুকুরের থেকে অন্য মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।" পথকুকুরের আক্রমণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এতটাই উদ্বিগ্ন যে, শীর্ষ আদালত এর স্থায়ী সমাধান চায়। দেশে প্রায় প্রত্যেক বছরই বহু মানুষ কুকুরের আক্রমণের স্বীকার হন। এই পরিস্থিতিতেই কেরল ও মুম্বইয়ের কয়েকটি পৌরসভা কুকুর নিধনের আদেশ জারি করেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়।
কুকুরের কামড় বিষয়ক
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সাল থেকে এখন ও পর্যন্ত ১.৫ কোটি মানুষ কুকুরের কামড়ের স্বীকার হয়েছেন। এই পরিসংখ্যানে সবথেকে বেশি এগিয়ে আছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে কুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। তারপরেই আছে তামিলনাড়ু। আহত হওয়া মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ ৭০ হাজার। তৃতীয় স্থানে আছে মহারাষ্ট্র এবং চতুর্থ স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গে কুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ। অন্যদিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপে একটি ও কুকুরের আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: কেন কুকুরের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ নয় বেড়াল? কতটা রহস্যময় এই প্রাণী
২০২২ সালে এখনও অবধি সারা দেশে ১৪.৫ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন কুকুরের দ্বারা। পরিসংখ্যান বলছে, কুকুরের আক্রমণের তালিকায় এগিয়ে আছে তামিলনাড়ু। তারপরেই আছে মহারাষ্ট্র। ২০২০ এবং ২০২১ সালে কুকুরের কামড়ের পরিসংখ্যান কিছুটা কমেছিল। পরিসংখ্যান ভালো করে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, এই কুকুরের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে পথকুকুরদের দ্বারাই। ভারতে এমনিই প্রত্যেক বছরে র্যাবিসে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০-র বেশি।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরেই যেসব কুকুরপ্রেমী এতদিন ধরে পথকুকুরদের যত্ন নিয়েছেন প্রতিবেশীদের আপত্তি ও ব্যঙ্গ সহ্য করে, তাঁদের শিয়রে সংক্রান্তি। এই প্রসঙ্গে টলিউড অভিনেত্রী ও সারমেয়প্রেমী শ্রীলেখা মিত্র-র বক্তব্য, "সুপ্রিম কোর্ট যদি এমন কথা বলেন, তাহলে আমাদের মত পথকুকুরকে যারা খাওয়াতে ভালবাসে, তাদের কী হবে? এখন তো প্রতিবেশীরাও এই বিষয়টির সুযোগ নেবে।" অতীতেও সারমেয়দের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁর দাবি ছিল, যেভাবে শহর কলকাতায় ইতিউতি জমি ভরাট করে বাড়ি, আবাসন তৈরি হচ্ছে, সেখানে পথকুকুররা যাবে কোথায়? ব্যক্তিগত পোষা কুকুর ছাড়াও বহু পথকুকুরকে খাওয়ান অভিনেত্রী। সেই জন্যই বহুবার হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। দক্ষিণ কলকাতার যে আবাসনে শ্রীলেখা মিত্র থাকেন, সেখানেই তাঁর কুকুর-প্রীতি দেখে আবাসনের বহু লোক তাঁর পোষা পথকুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই কারণেই তখন অভিনেত্রী দাবি করেছিলেন, আবাসনগুলিকে 'সারমেয়-বান্ধব' বলে ঘোষণা করা উচিত।
কিন্তু যেভাবে ক্রমশ ভারতে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল হয়, যাতে শীর্ষ আদালত কিছু ক্ষেত্রে কুকুর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কুকুর হত্যা করার অনুমতি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বহু সারমেয়প্রেমীর কপালে। সুপ্রিম কোর্টের এই বক্তব্যের পর পথকুকুরদের সেবা ও যত্ন করার বিষয়টি তাঁদের কাছে আরও কঠিন হয়ে উঠল বলেই মনে করছে পশুপ্রেমীদের একাংশ।