ফাইনালে মেসির গোলটি কি অবৈধ? আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স সমর্থকদের তর্কে তুলকালাম সোশ্যাল মিডিয়ায়
FIFA World Cup 2022 : প্যারিস, বুয়েনস আইরেস পেরিয়ে সেই লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে আপামর সমর্থকদের মধ্যে। সত্যিই কি গোলটা বাতিল হবে?
১৮ ডিসেম্বরের সেই রাত কেটে গিয়েছে অনেকক্ষণ হল। কিন্তু উন্মাদনা যেন শেষ হচ্ছে না আর্জেন্টিনায়। কেবল আর্জেন্টিনা? পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় মেসিভক্তরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। ৩৬ বছর পর এলএম ১০-এর হাত ধরে বিশ্বকাপ এসেছে ঘরে। দিয়েগো মারাদোনার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য, দেশকে ফের সেরার শিরোপা দেওয়ার মধ্যেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। বিশ্বকাপ হাতছাড়া হওয়ার দুঃখ যেন এখনও কুরে কুরে খাচ্ছে ফ্রান্সকে। খেলোয়াড়রা নিজেদের ট্রেনিংয়ে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক, পাল্টা তর্ক এখনও জারি রয়েছে।
ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপেকে এমি মার্তিনেজের ব্যঙ্গোক্তি, আগুয়েরোদের কটাক্ষকে একেবারেই ভালো চোখে দেখছেন না ফরাসি জনগণ। তার মধ্যে নতুন করে উত্তাপ বাড়াল ফরাসি সংবাদমাধ্যম। উপলক্ষ্য ফাইনালে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটি। সেই গোলটি করেছিলেন লিওনেল মেসি। ফাইনালে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় গোল। সেটি নিয়েই বিতর্ক নতুন করে দানা বেঁধেছে। ফ্রান্সের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, এমন অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ। ফ্রান্সের সমর্থকদের মুখে শোনা যাচ্ছে ‘রেফারি চুর’, ‘ফিফা চুর’-এর প্রতিধ্বনি।
আরও পড়ুন : মেসিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার? বিশ্বকাপ কি অবসান ঘটাল এই বিতর্কের
ঠিক কী হয়েছিল? ম্যাচ তখন অতিরিক্ত সময় গড়িয়েছে। ফলাফল ২-২। পুরো লুসাইল স্টেডিয়াম উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। হঠাৎই ১০৭ মিনিটে ফ্রান্সের বক্সে আক্রমণ হানেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। লাউতারো মার্তিনেজের জোরালো শট বাঁচিয়ে দেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস। কিন্তু ফিরতি বলটি চলে যায় সামনে থাকা লিও মেসির পায়ে। ডান পায়ের শটে গোলে রাখতে ভুল করেননি তিনি। এদিকে ফ্রান্সের উপামেকানো বলটি ক্লিয়ার করলেও তিনি ছিলেন গোললাইনের ভেতরে। বল যে গোললাইন পেরিয়েছে, সেটা ধরা পড়তেও বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। এরপর এমবাপে পেনাল্টি দিয়ে সেই গোল শোধ করলেও মেসির ওই গোলটি খেলায় ফের নতুন করে জোয়ার আনে।
Some suggestion that Lionel Messi's second goal should have been disallowed because 2 Argentina subs stepped onto the pitch to celebrate just before the ball crossed the line.
— Dale Johnson (@DaleJohnsonESPN) December 19, 2022
To the letter of the law perhaps, but it is far too insignificant to be within the remit of the VAR. pic.twitter.com/ZyL5c2k9eJ
এই গোলটি নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক। মূল বিষয় দু’টি। প্রথম দাবি ছিল, গোলটি অফসাইড। কিন্তু ভিএআরেই স্পষ্ট, সেই সময় মেসি অনসাইড ছিলেন। তবে দ্বিতীয় দাবিটিই মারাত্মক। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ল’ইকুয়েপ (L’Equipe) সামনে তুলে ধরেছে সেই তথ্যটি। দেখা যাচ্ছে, মেসি যখন গোলটি করছেন, তার আগেই রিজার্ভ বেঞ্চের ২-৩ জন খেলোয়াড় সাইডলাইন অতিক্রম করেন। গোল করার পর দৌড়ে চলে যান। সে যেতেই পারেন, কিন্তু ফরাসি সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য হল প্রথম ইস্যুটি নিয়ে। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, মাঠে সবসময় একটি দলের ১১ জন খেলোয়াড়ই থাকবেন। একজন খেলোয়াড় বেরোবেন, তবেই একজন ঢুকবেন। সাইডলাইন পেরিয়ে এভাবে খেলোয়াড়রা চলে এলে তা নিয়ম বহির্ভূত। আবেগের জেরে এই ঘটনা ঘটলেও, এর জন্য মেসির ওই গোলটি রেফারির বাতিল করা উচিত বলে দাবি ফ্রান্সের।
আরও পড়ুন : সংসার সামলে মডেলিং এবং নিজস্ব বুটিক, ‘মেসির স্ত্রী’ পরিচয়কে যেভাবে ছাপিয়ে গেলেন আন্তোনেল্লা
সংবাদমাধ্যম থেকে সমর্থক – সবাই এই মুহূর্তে এই একটি ইস্যু নিয়েই সোচ্চার হয়েছেন। বিশেষ করে এমবাপের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গ, আর্জেন্টিনার বিজয় মিছিলে এমবাপেকে হেয় করা ইত্যাদি বিষয় যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। তাই গোল বাতিলের এমন দাবি আরও জোরালো হয়েছে? কেবল আর্জেন্টিনা নয়, ফিফা আর রেফারি জীমোন মারসিনিয়াকও ফরাসি ভক্তদের নিশানায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ম্যাচের ক্লিপিং দেখিয়ে চলছে ভার্চুয়াল যুদ্ধ। লুসাইল, প্যারিস, বুয়েনস আইরেস পেরিয়ে সেই লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে আপামর সমর্থকদের মধ্যে। সত্যিই কি গোলটা বাতিল হবে?
My understanding of this is that Argentina’s 3rd goal should of been disallowed by VAR as they had players on the pitch celebrating before Messi tapped it in? #WorldCupFinal pic.twitter.com/ifcrIUEQQy
— James Glasspoole (@JamesGlasspoole) December 18, 2022
ফরাসি সংবাদমাধ্যম যে দাবিটা তুলেছে, সেটি যে ঠিক তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, সাইডলাইন পেরিয়ে অতিরিক্ত খেলোয়াড় চলে এলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অবশ্য সেটা নেওয়া হবে কি হবে না, তা রেফারির সিদ্ধান্ত। নিয়ম অনুযায়ী, গোলটি হয়তো বাতিল হওয়ারই কথা। তার থেকেও বড়ো কথা, সাইডলাইন পেরিয়ে এলেও সেটি খেলায় কোনওরকম বাধা সৃষ্টি করছে কিনা তাও নজরে রাখতে হয়। মেসির দ্বিতীয় গোলটির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২-৩ জন সাইডলাইন পেরোলেও খেলায় কোনও বাধা সৃষ্টি করেননি। তাই হয়তো রেফারি গোলটি বাতিল করেননি।
অবশ্য আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও পাল্টা একটি ভিডিও দেখাচ্ছেন। একদম শেষ মুহূর্তে কোলো মুয়ানি বল পেয়ে আর্জেন্টিনার গোলের দিকে জোরালো শট নেন। এমি মার্তিনেজ দ্রুত এগিয়ে এসে পা দিয়ে বলটি আটকে দেন। সেই সময় ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় সাইডলাইন টপকে মাঠে ঢুকে যান। ভিডিও, পাল্টা ভিডিওর জেরে বিশ্বকাপের পরও শোরগোল ফুটবল বিশ্বে। আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স, যুযুধান চলছে সমানে। কিন্তু এখনও অবধি ফিফার তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গোলটি বাতিল হবে কিনা সেটাও জানা যায়নি। যদি বাতিল হয়, তাহলে পরিস্থিতি কী হবে? সেদিকেই তাকিয়ে ফুটবল বিশ্ব।