'বল্লভপুরের রূপকথা' ফিরিয়ে আনল বাংলা সিনেমার হারিয়ে যাওয়া 'ভূত'
Film Review: তারে বাঁধা চিন্তাশীল নির্মাণে অনির্বাণ ভট্টাচার্য 'বল্লভপুরের রূপকথা'-র সূত্র ধরে আদতে এক শেকড়সন্ধান করলেন।
রাজেন তরফদারের 'জীবন কাহিনী' বাংলা ছবির এক অনুচ্চারিত রত্ন। সেই ছবির শুরুতে নবজীবন নামের চরিত্র, যে ভূমিকায় অনবদ্য বিকাশ রায়, সে জীবনবিমার এজেন্টগিরি করতে গিয়ে বড়লোকের পোষা কুকুরের তাড়া খায়, পিকপকেট হয়ে গঞ্জনা সহ্য করে, পাওনাদার কাবুলিওয়ালার তাড়া খায়, তাও নিরলস হয়ে এক মধ্যবিত্ত কেরানিকে সে বোঝাতে যায়, জীবনের দাম কানাকড়ি, মৃত্যু যখনতখন এসে টোকা মারবে দোরে। এমন 'অলুক্ষুণে' কথা গেরস্থবাড়ির গিন্নি সহ্য করবেন কেন, যথারীতি সেখান থেকেও সে তাড়া খায়। নারায়ণ দেবনাথের করা টাইটেল কার্ডের দৃশ্যায়নে কলকাতাকে পিছনে রেখে সে যখন দৌড়চ্ছে, তখন আসলে সে দৌড়চ্ছে জীবন থেকেই। মৃত্যুর দিকে। আবার মৃত্যু থেকে দৌড়ে সে জীবনেও ফেরে। বহু যন্ত্রণা, বহু অপমানের বোঝা সত্ত্বেও এই জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে লেগে থাকে হাস্যরসের অপাপবিদ্ধ জাদুস্পর্শ। আর শত যন্ত্রণার পরেও শেষে সেই রসে ভর করেই তো রূপকথার মতো করে জীবনে ফেরে নবজীবন। ঘরে টাঙানো ছবিতে সেলাই করে লেখা 'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে...' সার্থক হয়। সেই শেষ দৃশ্য থেকে একটি সংলাপ ছেঁচে আনা যেতে পারে নবজীবনের, যেখানে সে বলে, "শক্তিশালী এসেছেন দুর্বলকে রক্ষা করতে।"
এখানে 'শক্তিশালী' আসলে বিত্তবান, এবং সহায়হীন 'দুর্বল' নবজীবন ও তার পরিবারকে সে বাঁচিয়ে তোলে। কিন্তু ভাড়া বাকি রেখে, পাওনাদারের রক্তচক্ষু এড়িয়ে ভগ্নপ্রায় বাড়িতে আত্মহত্যাকামী দু'জন, নবজীবন ও অমর- দিনের শেষে যে উপলব্ধি করে, "এ জীবন বাঁচবার", তা অন্য এক 'শক্তিশালী'-র প্রভাবে। 'দুর্বল' মৃত্যুমুখিনতার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা সেই শক্তি আসলে জীবন। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা হাসির প্রলেপ।
'জীবন কাহিনী' নিয়ে এই ভূমিকা করার প্রয়োজন এইজন্যই, অনটনের সঙ্গে লড়াইয়ের যে বেদনাবিধুর উচ্ছ্বলতা সাদাকালো সেই সময়ের সম্পদ, তা হারিয়ে গিয়েছিল বাংলা ছবি থেকে। যে সরলতায়, অথচ তারে বাঁধা চিন্তাশীল নির্মাণে বাংলা ছবিতে তাকে ফিরিয়ে আনলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, 'বল্লভপুরের রূপকথা'-র সূত্র ধরে, তা আদতে এক শেকড়সন্ধান। আর সেই শেকড়ের খোঁজ, জীবনের সেই আকর, যা আঁকড়ে বেঁচেছে প্রাক-গোলকায়িত বাঙালি বহুদিন যাবৎ, তাকে আরও একবার প্রতীয়মান করার জন্য বাদল সরকারের এই নাটকটির তুল্য কোনও টেক্সট আর ছিল কি না, সন্দেহ।
আরও পড়ুন: কেন বারবার ব্যোমকেশই জিতে যায়? ফেলুদা-কিরীটির থেকে কোথায় এগিয়ে সে!
মনে রাখতে হবে, ১৯৬৩ সালে, যে-বছর বাদল সরকার লিখছেন এই নাটক, সেই বছরই তিনি লিখেছেন 'এবং ইন্দ্রজিৎ' এবং 'সারারাত্তির'-এর মতো দু'টি নাটক। কাজেই বাদল সরকারের হাস্যরসের নাট্যরচনার পর্যায় বলে কোনও বিশেষ অধ্যায়কে আলাদা করা মূঢ়তাই। কারণটা বাদল সরকারের নিজের বয়ান থেকেই ধার করা যাক, "...একটা ইঙ্গিত আছে, যেন হাসির নাটকের জাতটা নিচু। আমি তা আদৌ মনে করি না।… হাসি যদি সুস্থ হয়, নিছক ভাঁড়ামি, মুদ্রাদোষ বা মুখবিকৃতির সাহায্য না নিয়ে যদি হাসানো যায়, তবে সে হাসি উদ্দেশ্যহীন বলে আমার মনে হয় না।’’ কাজেই নেহাত তাঁর তৃতীয় ধারার থিয়েটারের মতো সরাসরি আড়ালের বিলাসিতাহীন প্রতিবাদের স্বর নেই বলে, বা 'এবং ইন্দ্রজিৎ' বা পরবর্তীর 'বাকি ইতিহাস'-এর রাজনৈতিক ও দার্শনিক ব্যাপ্তি দৃশ্যত নেই বলে এই নাটককে বাতিল করার পক্ষপাতী বাদল সরকার নিজেই ছিলেন না, এবং তাঁর শব্দপ্রয়োগ তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে অব্যর্থ, হাসির নাটক হলেও তা 'উদ্দেশ্যহীন' নয়।
কাজেই 'বল্লভপুরের রূপকথা'-র হাস্যরস হোক বা ভূত-অলৌকিকের অববাস্তবতা হোক, কোনও কিছুই নির্দিষ্টভাবে সময়ের কথা না বললেও, নাট্যকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল। তা ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিকতার সঙ্গে নব্য পুঁজির বোঝাপড়া নিয়ে ঠাট্টা হতে পারে, বা বাংলার রাজ-ইতিহাসের ভেতর থেকে যাওয়া ফাটল নিয়ে সরস টিপ্পনি হতে পারে। কিন্তু ১৯৬১ সালের প্রেক্ষাপটে এই ছয় দশক আগের টেক্সটকে সিনেমার জন্য আত্তীকরণ করার নেপথ্যে অনির্বাণের উদ্দেশ্য আম-দর্শক হিসেবে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাও যথেষ্ট স্পষ্ট। ইতিহাসকে নিয়ে খোরাক করার আগে, অসহনীয় বর্তমানকে অনির্বাণ কোথাও অস্বীকৃতির মধ্যে নিয়ে যেতে চান। ছবির অংশ হিসেবে না ধরলেও, ধূমপান-সংক্রান্ত সতর্কীকরণের বিবৃতি থেকে শুরু হয় সেই অভিযাত্রা। 'তেরোশো আটষট্টি শকাব্দ' বলে যে চ্যাপটার শুরু হয় ছবির, সেখানে অনির্বাণ খুব সচেতনভাবেই এক বাস্তবচ্যুতির প্রেক্ষাপট নির্মাণ করতে থাকেন। চিত্রনাট্যের ভেতরেও, ছবির ভেতরেও। 'এক গল্প হাজারবার বললে, সে আর এক গল্প থাকে না, পাল্টে পাল্টে যায়, মানুষের জীবনের মতো'- এই সংলাপ দিয়ে ছবির সূত্রপাতের এক অন্য মজা আছে। ছবির আখ্যানভাগ সম্পর্কে প্রথমেই দর্শককে এক অবভাসের মধ্যে, একরকমের 'ডিলিউশন'-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার খেলা আছে এর মধ্যে। চাঁদনি রাতের চিরাচরিত ইমেজ ধরে, ভয়ের আবহ তৈরি করার জন্য রং থেকে আলো, ক্যামেরার চলাচল থেকে সম্পাদনার গতি সবকিছুই মেপে মেপে এগোন পরিচালক। হাস্যরসের ভেতর ভয়ের আভাস নয়, বরং আবহসংগীত থেকে শুরু করে দৃশ্যের ওঠানামা, এসবের মধ্যেই সূক্ষ্মভাবে কমেডির আভাস রাখতে রাখতে ছবি শুরু করেন পরিচালক। আর এখানেই 'হরর কমেডি' জঁরের একরকমের অবনির্মাণ তিনি ঘটিয়ে ফেলেন। ভারতীয় সিনেমায় এখনও পর্যন্ত হরর কমেডি জঁরের সফলতম দৃষ্টান্ত অমর কৌশিকের 'স্ত্রী' (২০১৮)। কিন্তু ভয় ও মজার অনুপাতের অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার এক্ষেত্রে নেই, কারণ 'বল্লভপুরের রূপকথা' টেক্সট হিসেবে নির্ভেজাল কমেডি, আর দ্বিতীয়ত আধুনিক 'রূপকথা'-র অংশ হয়েই ভূত আসে, কিন্তু ভয় সে অর্থে আসে না। ভয় আছে অন্যত্র, ভূতও আসলে অন্যতর।
বল্লভপুরকে 'হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড'-এর মাকোন্ডো গ্রামের মতো এক নিরালম্ব কল্পভূমি ধরে নেওয়ার অবকাশ যেমন রয়েছে, তেমন খসে পড়া পলস্তারা থেকে ভাঙা কড়িকাঠ-আগাছার রক্তমাংসে জীবন্ত ক্ষয়িঞ্চু এক অতীত হিসেবেও তার অস্তিত্ব যথেষ্ট শক্তিশালী। 'বল্লভপুরের রূপকথা' বড়পর্দায় হচ্ছে যখন, তখন সবচেয়ে কঠিন যে কাজটা পরিচালক বেছে নিলেন, তা হলো ভূত বা অতীতের বহুস্তর নির্মাণ। ইতিহাসবিদ রেমন্ড উইলিয়ামস-এর কথামতো যাকে বলে 'রেসিডুয়াল', অর্থাৎ অতীতের পড়ে থাকা অবশেষ, তার সঙ্গে নাট্যকার জুড়েছিলেন 'ইমার্জেন্ট'-কে, অর্থাৎ বর্তমানের যে অঙ্কুর বেড়ে উঠছে। অনির্বাণ এই ছবি করছেন ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে, কিন্তু ছবি পিরিয়ড পিস, তাই তার কাছে 'ইমার্জেন্ট' অদৃশ্য। বর্তমানের না-দেখা অস্তিত্বই এখানে ভয়ের, অথচ ভূত হয়ে রয়েছে 'রেসিডুয়াল', যে ইতিহাস আমরা ফেলে এসেছি। এখানেই এই ছবির উত্তরণ।
এই ছবির টাইটেল কার্ডের সঙ্গে জুড়ে থাকা গানটির নাম 'বাদল সরকারের গান'। বাংলার আবহমানকালের পারফরম্যান্সের 'ভণিতা' অংশর পুনরুচ্চারণ এই গান, যা নাট্যকারকে শ্রদ্ধা জানায় যেমন, তেমনই এই গান যেন পরিচালকের কৈফিয়ৎ। এখানেই বর্তমান থেকে এক ধরনের 'ডিপারচার' লুকিয়ে। সেই 'ডিপারচার' সঙ্গে নিয়েই অতীতে ঘাই মারে ছবি।
গল্প নিয়ে কোনও কথা না বলে এই ছবির নির্মাণকল্প নিয়ে কেবল কথা বলা সরু সুতোর ওপর দিয়ে হাঁটার শামিল। তাও ছুঁয়ে যেতেই হবে যেকথা, দেনাগ্রস্ত রাজা ভূপতি রায়, যে কিনা রাজবংশের আভিজাত্যের মুখে কালি দিয়ে গামছা পরে ঘুমোয়, বিড়ি খায় ছবির প্রথম সকালের আলোয়, আর তার পূর্বজ, যে ইতিহাসের আত্মা হয়ে ফিরে আসে প্রায়- এই দু'জনের সংলাপ বা আদানপ্রদান ছবিতে খুবই সামান্য। সচেতনভাবেই ভূতের সঙ্গে সহাবস্থানের এই স্বাভাবিকত্ব নির্মাণ করেন পরিচালক। আর এখানেই ভূত হয়ে ওঠে সহ-চরিত্র। তাকে সঙ্গে নিয়েই চলে গল্প। যখন বন্ধু সঞ্জীবের কাছে গল্পসূত্রে ইতিহাস বলে ভূপতি, তখনও ততটা ভৌতিকভাবে পর্দায় আমরা ভূতকে দেখিনি, তার উপস্থিতির ছোঁয়াচটুকুও পাওয়া যাচ্ছে পরে। কাজেই মোগল-ভুঁইয়া-কামান-মেঘদূতে মোড়া ইতিহাসের অধ্যায় গাম্ভীর্যর সর্বনাশ ঘটিয়ে যে সরসতা নিয়ে হাজির হয়, সেখানেই দর্শকের ভয় হারিয়ে যায়। আর পরিচালক তো গীতিকার হয়ে প্রথমেই বলে দিয়েছেন, 'ভয় পেরোলেই জয়'। একই সঙ্গে 'জয় জনতার জয়'-ও ঘোষণা করেছেন তিনি। কাজেই দর্শককে মাঝপথে জিতিয়েই দেন পরিচালক, যাতে বাকি আখ্যানের চলাচলে সেও চোখ রাখতে পারে নিজস্ব লেন্সে, ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে।
এই ছবিতে নাটকের সংরূপ মিশে যাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে বিস্তর, কিন্তু কোথাও সেই মিশেল চলচ্চিত্রভাষার সঙ্গে প্রবঞ্চনা করে না। আলোর ব্যবহার বা সেটে মঞ্চের প্রতিভাস থাকাটা এক্ষেত্রে ছিল সবচেয়ে অবধারিত, তা চলচ্চিত্র মাধ্যমের সাহায্যেই সযত্নে এড়িয়েছেন পরিচালক। সাহানা বাজপেয়ীর কণ্ঠে 'সাজো সাজাও'-এর দৃশ্যায়নে স্পষ্ট হয়, চলচ্চিত্রের 'ক্রাফট'-কে কীভাবে নাট্যনির্মাণের ভাবনায় সংশ্লেষ করছেন পরিচালক। রাজা সাজার দৃশ্য যেভাবে অভিনয়ের ভেতরের অভিনয় দিয়ে তৈরি, তাতে মঞ্চ অবচেতনে থাকতেই পারে, সামনে প্রকট হয় চিত্রভাষার কারিকুরিই।
চিত্রনাট্যে অনির্বাণ ভট্টাচার্য-প্রতীক দত্ত জুটি বাজিমাত করেছেন, বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছবির অভিনেতা নির্বাচনে যে তুরুপের তাস খেলেছেন অনির্বাণ, তা বহুদিন বাংলা ছবির দর্শকের কাছে স্মর্তব্য হয়ে থাকবে। তথাকথিত চেনা মুখের আগল ভেঙে ফেলেছেন তিনি। নাটকের দর্শক হয়তো অভিনেতাদের চিনবেন। কিন্তু পর্দায় তথাকথিত অচেনা অভিনেতা এনেই দায়িত্ব সারা নয়, প্রত্যেক অভিনেতা তাঁদের দায়িত্ব পালনেও অবিচল। সত্যম ভট্টাচার্য এবং সুরাঙ্গনা, এই দু'জনকে নায়ক-নায়িকা হিসেবে ধরা গেলে বলতেই হয়, ছ'দশক আগের বাংলা সিনেমার অভিনয়ের সুর-তাল-ছন্দ-লয় অভাবনীয় মুনশিয়ানায় ধরেছেন দু'জনই। সত্যমের চোখের দৃষ্টি, ভুরুর ওঠানামা, গোবেচারা হাসি থেকে দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে কোথায় উত্তমকুমার আছেন ঘাপটি মেরে, সুরাঙ্গনার হাঁটা, কথা বলা, কপট হাসি, রাগ, অভিমান বা বিস্ময়ে কোথাও সুচিত্রা সেন আছেন কি না, তা বাংলা সিনেমার চিরন্তন দর্শকের অবচেতন বিচার করবে। শ্যামল চক্রবর্তীর মতো একজন জোরদার অভিনেতাকে মনোহরের চরিত্রে পর্দাজুড়ে দু'ঘণ্টার বেশি সময় দেখতে পাওয়াও যেন মনের আরাম, যাঁরা তাঁকে মঞ্চে দেখেছেন, তাঁরা বুঝবেন। সামন্ততন্ত্রের যে অবশেষ ধরে রাখে চেরি অরচার্ড-এর ভৃত্যরা, তার চরিত্রায়ণে এক ধরনের উদাহরণ তৈরি করে রাখলেন তিনি। দেবরাজ ভট্টাচার্য নায়কের বন্ধুর সেই তরুণকুমারীয় আশ্বাস ফিরিয়ে আনলেন আবার। এত স্বতন্ত্র, এত অতিরেকহীন, সরস অথচ সিরিয়াস অভিনয় তাঁর! হালদারের চরিত্রে সন্দীপ ভট্টাচার্য, স্বপ্না হালদারের চরিত্রে ঝুলন ভট্টাচার্য ও চৌধুরীর ভূমিকায় শ্যামল সরকার পুরনো অভিজাতদের চালচলনে এত খাপ খেয়েছেন! তিন পাওনাদারের মধ্যে একটি চরিত্রে সুমন্ত রায়, 'হারবার্ট'-এ যাঁর অভিনয় চোখে লেগেছিল। এছাড়াও কৃপাবিন্দু চৌধুরি ও সুরজিৎ সরকার নির্লিপ্ত ও শান্ত সাহচর্যে উজ্জ্বল। কেউ আলাদা করে মাথায় রাখেননি, হাস্যরস উদ্রেকের কথা। জীবন যেমন দুঃখের, তেমন হাসিরও তো বটে! সকলেই সেই জীবনের অভিনয়ে দড়, প্রমাণ করল এই সিনেমা। সংগীতে যে আশ্চর্য অন্য এবং নতুন স্বাদ এনেছেন শুভদীপ গুহ ও দেবরাজ ভট্টাচার্য, তা অনেকদিন গুনগুন করবে কানে।
এমন ছবি হলে তবেই 'জয় সিনেমার জয়' বলা যাবে সোচ্চারে। শুধুই থিয়েটারের প্রতি নিবেদন নয়, এই ছবি কাঙ্ক্ষিত অতীতের সঙ্গে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া। আলো জ্বলে গেছে, দর্শক ছবির কার্টেন কল দেখছে শান্ত হয়ে বসে, উত্তর কলকাতার প্রেক্ষাগৃহের এই ছবি জেগে থাকবে বহুদিন। আর 'থিয়েটারের লোক সিনেমা করছে' বলে যাঁরা ভুরু কুঁচকোলেন, তাঁদের জন্য রইল 'টিনের তলোয়ার'-এর সেই অমোঘ সংলাপ, 'প্রথম দুই অঙ্কের গতি কিছু শ্লথ, তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য হইতেই নাটকের গতি দুর্বার হইয়া উঠিয়াছে, ও চরিত্রগুলোও যথাযথ হইয়াছে।' প্রসঙ্গত, কাপ্তেনবাবু যে নাটকের কথা বলছিলেন, সেই নাটকে অঙ্কভাগ ছিল না।