নেতাজি ঘরে ফেরেননি, বারবার ফিরেছেন সিনেমায়, কোন কোন ছবি?

Films on Netaji Subhas Chandra Bose : সিনেমা হল সময়ের দলিল, নেতাজির ভূমিকায় সেখানে হেঁটে চলে বেরিয়েছে আস্ত একটা ইতিহাস। তিনি কীভাবে পথ চলতেন, কীভাবে হাঁটতেন, কীভাবে কথা বলতেন, কীভাবেই বা দেশবাসীর সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত...

গল্পের নয়, বাস্তবের হিরো তিনি, সুভাষ চন্দ্র বসু, নামটুকুই যথেষ্ট। তাঁর অন্তর্ধান নিয়ে আজও একরাশ ধোঁয়াশা। ‘নেতাজি’ নামটার মৃত্যু হয় না বলেই যেন স্বার্থক এই চিরকালীন গোপনীয়তা। পরতে পরতে রহস্যের জাল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিন ‘দেশনায়ক’ বলেছিলেন যাঁকে, তিনি নেপথ্যে থেকেও রয়ে গিয়েছেন। বাস্তবে না হোক রুপোলি পর্দায় বারবার ফিরেছেন নেতাজি। নেতাজি, এই নামটা রসদ যুগিয়েছে গল্পের। ঘটনাবহুল জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই যেন স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে। সিনেমা হল সময়ের দলিল, নেতাজির ভূমিকায় সেখানে হেঁটে চলে বেরিয়েছে আস্ত একটা ইতিহাস। তিনি কীভাবে পথ চলতেন, কীভাবে হাঁটতেন, কীভাবে কথা বলতেন, কীভাবেই বা দেশবাসীর সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতেন তার প্রতিটি উত্তর খোঁজার তাগিদ থেকেই বিভিন্ন সময়ে এসেছেন পর্দার নেতাজিরা। ১৯৫৫ থেকে একাধিক সিনেমায় বারবার ফিরে এসেছেন সুভাষ। বাংলার বাইরে অন্য ভাষাতেও তাঁকে নিয়ে সিনেমা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে তাঁর জীবনের নানা দিক। বলিউড, টলিউড তো বটেই এমনকী বিদেশি ছবির প্রেক্ষাপটেও এসেছেন দেশনায়ক নেতাজি। চলুন আজ তাঁর ১২৬ তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা যাক সেই সব চলচ্চিত্র।

সমাধি (১৯৫৫) - নেতাজির অন্তর্ধানের ঠিক দশ বছর পর নির্মিত হয় সাদা কালো পর্দার ছবি ‘সমাধি’। পরিচালনা করেন, রমেশ সায়গল। স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মতাদর্শ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই তৈরি হয়েছিল এই ছবি। সেই সময়ের ভারতে নেতাজিকে নিয়ে যে রহস্যের বাতাবরণ তার স্বপক্ষে বিস্ফোরকের মত ঠেকেছিল ছবিটি। ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল আর্মির এক সৈনিক হিসেবে নেতাজির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কাহিনি দেখানো হয় ছবিতে। ব্যক্তিগত জীবনের উর্ধ্বে দেশের স্বার্থে জীবনদায়ী সংগ্রামকেই যে গুরুত্ব দিয়েছেন দেশনায়ক, তার ছবিই তুলে ধরা হয় দৃশ্যে।

আরও পড়ুন - নেতাজির অন্তর্ধানের পর চুরি যায় আজাদ হিন্দের ২৫০ কোটির সম্পত্তি! নেপথ্যে ছিলেন কারা?

সুভাষ চন্দ্র (১৯৬৬) - এই প্রথম বাংলা ছবিতে এলেন নেতাজি। পীযূষ বসুর পরিচালনায় শুরু হল গল্প বলা। নেতাজির ছেলেবেলা বনাম তাঁর জীবন সংগ্রাম, এই ছিল ছবির মূল উপজীব্য। কটকের ছেলেটির জীবনের গল্পে কীভাবে হল রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ, সুভাষের সংগ্রামী জীবনের বিপরীতের ছবিটা ঠিক কীরকম ছিল,তার সম্মুখীন করেন দর্শককে। নেতাজির শৈশব, কলেজের দিন, আইসিএস পাস, কংগ্রেসি রাজনীতি ও পুলিশি গ্রেপ্তারের দৃশ্য ফুটে ওঠে সিনেমায়। শিশু সুভাষের ভিতরে কীভাবে ধীরে ধীরে এক মুক্তিযোদ্ধা জেগে ওঠেন, সেই গল্পই বলেন পীযুষ।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু - দ্য ফরগটেন হিরো (২০০৪) - নেতাজিকে কি ভুলেছে দেশবাসী,এটাই ছিল এই ছবির মূল দাবি। শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটিতে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয় মহাত্মা গান্ধী বনাম সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রসঙ্গ। জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়, সবই তুলে ধরা হয় ছবিতে। নেতাজির চরিত্রে অভিনয় করেন শচীন খেদেকর। শিশির বসুর চরিত্রে ছিলেন যীশু সেনগুপ্ত, উত্তমচাঁদ মালহোত্রার ভূমিকায় কুলভূষণ খারবান্দা, ইলা বোসের ভূমিকায় দিব্যা দত্ত।

অমি সুভাষ বলছি (২০১১) - নাম ভূমিকায় নজর কাড়েন মিঠুন চক্রবর্তী। বাঙালির মধ্যে সুভাষ নামক একটা বিশ্বাস, একটা জেদ, একটা লড়াই যে আজও জীবিত, প্রয়োজন পড়লেই জেগে উঠতে পারে আবার, সেই বার্তায় দেওয়া হয় মহেশ মাঞ্জরেকর পরিচালিত এই ছবিতে। একটা অদ্ভুত মোহ তৈরি করা হয়, একজন বাঙালির হঠাৎই দেখা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে। তারপরেই জীবন এক অদ্ভুত দিকে মোড় নেয়। এই বাঙালি তথা দেবব্রত বোসের ভূমিকায় অভিনয় করেন মিঠুন চক্রবর্তী।

বোস : ডেড/অ্যালাইভ (২০১৭) - নয় পর্বের ছোট একটি টেলিভিশন সিরিজ তৈরি হয় দেশনায়ক সুভাষ চন্দ্রকে নিয়ে, ২০১৭ সালে। একতা কাপুরের পরিচালনায় এখানে উঠে আসে সুভাষকে নিয়ে চিরকালের রহস্য, মৃত্যু রহস্য। তিনি জীবিত নাকি মৃত, নানা তত্ত্ব তুলে ধরা হয় প্রতিটি দৃশ্যে। সুভাষ চন্দ্র বসুর চরিত্রে অভিনয় করেন রাজকুমার রাও। 

রাগ দেশ (২০১৭) - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয় সিনেমাটি। ছবিতে ভারতীয় সেনা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। সুভাষের সংগ্রামের গোটা শহর টা তুলে ধরা হয় ছবিতে। সিনেমাটি পরিচালনা করেন ত্রিগমাংশু ধুলিয়া। অভিনয় করেছেন কুণাল কাপুর, অমিত সাধ, মোহিত মারওয়া, বিজয় বর্মা, মৃদুলা মুরালি প্রমুখ।

আরও পড়ুন - “মতাদর্শের মৃত্যু নেই”, নিজেই বলেছিলেন নেতাজি, সময়ের স্রোতে ঘা খেয়েও প্রাসঙ্গিক যেসব উক্তি

গুমনামি (২০১৯) - সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘গুমনামি’ সিনেমা, সম্প্রতিকালে উস্কে দেয় চিরকালীন বিতর্ক। গুমনামি বাবাই কি নেতাজি? এই বিতর্কিত তত্ত্ব নিয়েই বাংলা সিনেমা গুমনামি বাবা। নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। মানুষের মধ্যে নেতাজিকে নিয়ে যে জমে থাকা এক দাবি গুমনামি বাবাই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, তার সপক্ষে একাধিক তত্ত্বের কথা তুলে ধরে এই সিনেমা।

দ্য ফরগটেন আর্মি (২০২০) - ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পা দিলেন সুভাষ। ২০২০ এর ২৪ জানুয়ারি মুক্তি পায় কবীর খানের পরিচালনায় ছয় পর্বের ডকুমেন্টারি। ছবিতে উঠে আসে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সৈন্যদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। জীবন বাজি রেখে যে লড়াই লড়ছেন তাঁরা দেশের সীমান্তে, প্রতিনিয়ত, উঠে আসে সেই গল্প।

নেতাজি নামক নস্টালজিয়ায় ভর করে সময়টা এগিয়েছে অনেকটা। আজ প্রায় ৭৮ বছর হল সন্ধান মেলেনি তাঁর। কিন্তু রহস্যের মোড় বারবার দিক বদল করেছে। সিনেমার দৃশ্যতে সেইসব ওঠাপড়া বিভিন্ন সময়ে ধরা হয়েছে। আজ তাঁর জন্মজয়ন্তীতে চোখ থাকুক সেই সব ছবিগুলোয়।

More Articles