ওষুধের জোগান নেই, নামছে হাসপাতালে ঝাঁপ! জর্ডনের ফিল্ড হাসপাতাল বাঁচাবে গাজাকে?

Israel-Hamas War: লাগাতার বোমা, রকেট হামলা। তার উপর গাজাকে হাতে এবং ভাতে মারার সমস্ত ব্যবস্থাই করে রেখেছে ইজরায়েল। খাবার-জল থেকে শুরু করে জ্বালানি, সব কিছুরই তীব্র সঙ্কট এখন গাজায়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সবচেয়ে জরুরি যে জিনিসটা, সেটাই এখন অমিল গাজায়। না, চিকিৎসার কোনও সুযোগ অবশিষ্ট নেই গোটা গাজা উপত্যকায়। কারণ বেছে বেছে গাজার সরকটি হাসপাতালকেই একের পর এক নিশানা করে চলেছে ইজরায়েল। এই ইতিমধ্যেই ১৩ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে যুদ্ধের বলি। কম করে হলেও অন্তত তিরিশ হাজার মানুষ জখম গাজায়। তাদের ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও মিলছে না বিপর্যস্ত গাজায়। সেখানের পরিস্থিতি এমনই যে আর্ত, জখমদের যে নিয়ে আশপাশের রাজ্যগুলিতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই সুযোগটুকুও নেই। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এল জর্ডন। গাজায় তারা পাঠাল অস্থায়ী ভ্রাম্যমান হাসপাতালের সমস্ত উপকরণ এবং স্বাস্থ্যকর্মীও।

সোমবারই জর্ডনের পাঠানো ওই অস্থায়ী মেডিক্যাল হাসপাতালের কর্মীরা গাজায় পৌঁছে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, গাজার খান ইউনিসে ওই অস্থায়ী হাসপাতালটি তৈরি করা হবে আপাতত। সেখান থেকেই আহত ও অসুস্থ গাজাবাসীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে যাতে জর্ডনে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যায়, থাকবে সেই ব্যবস্থাও। গাজার দক্ষিণ দিকের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। প্রতিমুহূর্তে হামলার মাত্রা বাড়াচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। হাসপাতালগুলি যেন যুদ্ধে জখম মানুষে ভর্তি। স্রোতের পর স্রোত এসে ঢুকছে প্রতিদিন হাসপাতালগুলিতে। যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলি। তার উপরে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। একের পর এক হামলায় বহু স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। কর্মশক্তি হারিয়েছেন বহু। ফলে ক্রমশ কমছে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার মানুষও।

আরও পড়ুন: যুদ্ধ কেড়েছে ঘর, সন্তানদের দূরে পাঠিয়ে গাজায় জেগে একা সাংবাদিক

সেই গত ৭ অক্টোবর শুরু হয়েছিল যুদ্ধটা। তার পর লাগাতার ৪৫ দিন ধরে যুদ্ধ চলছেই। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা উপত্যকা। মৃত্যুমিছিল ছাড়িয়ে গিয়েছে ১৩ হাজার। গত কয়েকদিনে লাগাতার গাজার হাসপাতালগুলিকে নিশানা করেছে ইজরায়েলি সেনা। আর্তদের চিকিৎসার সমস্ত সুবিধা একে একে শেষ করে দিয়েছে তারা। একের পর এক গাজার হাসপাতালগুলিকেই বেছে বেছে নিশানা করা হয়েছে। তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গাজার সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থাই। এদিকে যুদ্ধের তোড়ে আহত বিধ্বস্তদের যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে অন্য কোথাও চিকিৎসার জন্য, সেই সুযোগটাও মেলেনি। মুখে বললেও তেমন ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্রই। গাজার শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি কেউ-ই। অবশেষে এতদিন পর গাজায় অস্থায়ী ভ্রাম্যমান হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিল জর্ডন। যুদ্ধ শুরুর প্রায় ৪৫ দিন পর।

লাগাতার বোমা, রকেট হামলা। তার উপর গাজাকে হাতে এবং ভাতে মারার সমস্ত ব্যবস্থাই করে রেখেছে ইজরায়েল। খাবার-জল থেকে শুরু করে জ্বালানি, সব কিছুরই তীব্র সঙ্কট এখন গাজায়। তার উপর চিকিৎসা সামগ্রীরও সরবরাহ বন্ধ। বাধ্য হয়েই গাজার একের পর এক হাসপাতাল বন্ধ করে নিচ্ছে ঝাঁপ। কারণ চিকিৎসা করার মতো কোনও কিছুর জোগানই আর নেই সেসব হাসপাতালগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে কি উদ্ধারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে জর্ডনের পাঠানো এই অস্থায়ী ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য পরিষেবা।

আরও পড়ুন:ওষুধ নেই, কেমোথেরাপি নেই! যেভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগোচ্ছেন গাজার ক্যান্সার আক্রান্তরা

গাজার চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান এড ইয়াঘি অন্তত তেমনটাই মনে করছেন। তিনি জানান, ক্রমশ গাজায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার মতো মানুষ কমছে। নেই প্রয়োজনীয় হাসপাতালও। এই পরিস্থিতিতে ১৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়েছে জর্ডন, যারা ওই ভ্রাম্যমান অস্থায়ী হাসপাতালগুলি পরিচালনা করবেন। তার সঙ্গে পাঠানো হয়েছে ৪০টি ট্রাক বোঝাই মেডিকেল সামগ্রীও। তবে মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে আসা ওই সাহায্যের হাতকে আদৌ ইজরায়েল গাজাভূখণ্ডের কাছে পৌঁছতে দেবে কিনা, তার উত্তর নেই কারওর কাছে। কারণ যে ভাবে একের পর এক গাজার হাসপাতালকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল, তাতে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে এই ফিল্ড হাসপাতালের ভবিষ্য়ৎ নিয়েও। ইতিমধ্যেই কুয়েত থেকে ৬টি অ্যাম্বুল্যান্স প্রবেশ করেছে গাজায়। আশা করা যাচ্ছে, সে ভাবেই জর্ডনের পাঠানো এই স্বাস্থ্য পরিষেবাকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি মানুবিক ভাবেই বিবেচনা করবে নেতানিয়াহুর দেশ। অন্তত তাতে মৃত্যু সংখ্যাটা আরও তিরিশ-চল্লিশ হাজারে পৌঁছনোটা কিছুটা হলেও ঠেকানো যাবে।

 

More Articles