'অসুস্থ তো স্টেজে নেমেছেন কেন!' একরাশ অপমান নিয়ে চলে গিয়েছিলেন বাংলার প্রথম ম্যাটিনি আইডল
নতুনদের অভিনয় দেখে বক্স অফিস থেকে চিল্লিয়ে বলছেন, "হচ্ছে না, হচ্ছে না। কিচ্ছু হচ্ছে না। সব রস নষ্ট হয়ে গেল।" ক্রমশ একা হচ্ছেন শিল্পী। তাঁকে বোঝার মানুষ কই!
বিছানায় শুয়ে অশক্ত নায়ক। ঘুম আসে, ঘুম যায়। অতল অন্ধকারের গভীর থেকে উঠে আসে এক একটি মুখ। এক একটি চরিত্র। বিদ্যাপতি, জহর, শিশির ভাদুড়ী, অহীন চৌধুরী। কখনও অন্ধকার ঝাপসা হয়ে এলে মৃদু নুপুরের আওয়াজ। এই ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল যেন ওইদিকে। চোখ খোলেন। আঁধার কাটে না। ওঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারেন না। হঠাৎ টেলিফোনটা এগিয়ে দিল কেউ। শুয়ে শুয়েই আঁকড়ে ধরলেন রিসিভার। কী যেন একটা খবর… চোখের পাতা ভিজে উঠল তাঁর। "সত্যি বলছ, ভিড় হয়েছে! লোকে এসেছে দুর্গাদাসের ছবি দেখতে!"
শিয়ালদহ থেকে দু'টি লাইনের ট্রেন ধরতে পারেন। ডায়মন্ডহারবার লাইনের লোকাল ধরলে নামবেন সুভাষগ্রাম, ক্যানিং লাইন ধরলে কালিকাপুর। স্টেশনের বাইরেই শেয়ারের অটো পাবেন। উঠে পড়ুন। বলুন, সাউথ গড়িয়ে যাবেন। দু'ধার বেশ ফাঁকা ফাঁকা। এদিকে জনবসতি তেমন নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তার মোড়ে বাজারের মাঝখানে আপনাকে নামিয়ে দেবে অটো। আশপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। অথবা মোড়ের ডানদিকের রাস্তা ধরে দুই পা এগোলেই এক বিরাট প্রাসাদ। একদিকে বড় দিঘি। ঠিক তার গা ঘেঁষে সাদা অট্টালিকার শুরু। দেউল দেখলে বোঝা যায়, এককালে এই প্রাসাদের জাঁকজমক ছিল ঠিক কতখানি। এখন আগাছা জন্মেছে। অপরিষ্কার। তেমন সংস্কার করা হয় না। চুন-সুরকির ফাটলে ফাটলে অশ্বত্থ বটের চাঁদোয়া। দেখে পরিত্যক্তই বোধ হয়। ধীরে ধীরে সন্ধে চোঁয়ায় আকাশ থেকে দিঘির গায়ে। অবাক হয়ে লক্ষ করবেন, দিঘির গা বেয়ে প্রাসাদের পিছনের যে অংশটুকু উঠে গিয়েছে, তার ছোট্ট ঘুপচি আদিম দু'-একটি জানলা থেকে আলো গড়াচ্ছে খানিক। দিনে যাকে পরিত্যক্ত মনে হয়েছিল, রাতে আলোর টিপ জানান দিচ্ছে, আছে আছে! এখনও কয়েক ঘর শরিক আছে। কিন্তু সেই দিন নেই। তাদের আর্থিক ক্ষমতাও নেই প্রাসাদ মেরামতের। কোনওরকমে নিজেরটুকু সারিয়ে টিকে থাকা। সরকারের তরফ থেকেও সংরক্ষণের উৎসাহ দেখায়নি কেউ। অথচ এ-বাড়িতে ঝাড় নিভত না কখনও একদিন। এ-বাড়ি এক ঐতিহ্যের মূর্ত রূপ।
এ-বাড়ির বাঁড়ুজ্জেরা সুন্দরবনের চোরাই মালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা করেছিল। কয়েক প্রজন্মে চেহারা পাল্টে গিয়েছিল তাই জমিদারবাড়ির। তারকনাথের আমলে অবশ্য সে চোরাচালানের ব্যবসা আর ছিল না। সম্পত্তি ততদিনে লেজিটিমেট হয়ে গিয়েছে। রাশভারী তারকনাথ এবং তার স্ত্রী অন্নপূর্ণার কাঁধে সংসারের দায়িত্ব। তারকনাথকে ব্যবসার কাজে প্রায়দিনই বাইরে থাকতে হয়। কাজেই ভাই যদুনাথের ওপর বাড়ির বিচ্ছুটিকে শাসন করার ভার এসে পড়ে। ইদানীং আবার কী এক থেটার করার শখ হয়েছে। পাগল! একে জমিদার বংশের রক্ত। তারপর ওইসব নরককুণ্ডে নেমে মেয়েছেলের সংস্পর্শে এসে পুরোপুরিই বখে যাক আর কী! বাড়ির লোকের ধারণা খানিকটা এমনই। এদিকে কোনওভাবেই তাকে আটকানো যায় না। শেষে দোতলার ঘরে তাকে বন্ধ করে বাইরে থেকে খিল দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্ধেটা পেরোলে আর গিয়েও কিছু লাভ হবে না। নাটক-ফাটক এমনিই চোট খেয়ে যাবে। চার নাতনির পর বিচ্ছুটার জন্ম। ঠাকুরদা বলেছিলেন, স্বর্গে ঘণ্টাধ্বনি হয়েছে। আদর করে বংশের বড় নাতির নাম দিয়েছিলেন ঘণ্টা। সে ঘণ্টা যে বাড়িশুদ্ধ লোকের কানে তালা লাগিয়ে দেবে, তা আর কে জানত! সেরেস্তা ছেড়ে সরকারমশাই ছোটেন। দশ-বিশটা চাকরবাকরে মিলে তাকে সামলাতে পারে না। দোতলার ঘরে বন্দি ঘণ্টাবাবু গরাদের ফালির মধ্য দিয়ে আকাশ দেখে। বিকেল মর মর। এখনই সন্ধ্যা নামবে। অন্ধকার তার বড় বেশি প্রয়োজন। চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলে অতি সন্তর্পণে বিছানার চাদর তুলে আনল সে। মজবুত কবজির প্যাঁচে জানালার শিক গেল বেঁকে। দোতলা থেকে সেই কাপড় ঝুলিয়ে একতলার কার্নিশে। সেখান থেকে বাগান পেরিয়ে ভোঁ ভাঁ দৌড়। আটকে রাখবে তাকে? 'পাণ্ডবগৌরব' নাটকের সেই-ই নির্দেশক। দ্বিতীয় পাণ্ডবের আগমনে শুরু হলো পালাগান। সাউথ গড়িয়ার আঞ্চলিক নাট্যমঞ্চের উদ্যোক্তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
আরও পড়ুন: ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর দজ্জাল গিন্নির আড়ালে রয়ে গেলেন দুঃসাহসী মলিনা দেবী
পড়াশোনা খুব বেশি দূর এগোয়নি দুর্গাচরণের। অভিনয়ের নেশায় এ-ডাল থেকে ও-ডালে। 'ডায়মন্ড' নাটকের দল খুলে ফেললেন কিশোর বয়সেই। তার সঙ্গে ছবি আঁকার শখ। বাড়িতে তাঁর কোনও শখই প্রশ্রয় পায় না। লুকিয়ে বউবাজারে আর্ট স্কুলে কয়েকদিন ক্লাস করলেন কিছুদিন। সেখান থেকে সরকারি আর্ট কলেজ। এদিকে হাতে ফুটো পয়সাটাও নেই। জমিদারবাড়ির ছেলে হয়েও ভিখারির দশা। বাড়ির বড়রা কেউ তাঁর হাতে টাকা দেয় না। অগত্যা চুরি। মায়ের আঁচল থেকে দুপুরবেলা চাবির গোছা সরানো হলো। ঘর খুলে ঝেড়েপেতে আটটি টাকা পাওয়া গেল। অথচ কলেজে ভর্তি হতে গেলে প্রয়োজন চোদ্দ টাকা। পিসির কাছে আবদার। আরও ছ'টাকা জোগাড় হল। ভর্তি হয়ে গেলেন আর্ট কলেজে। মাসমাইনে কীভাবে দেবেন, তখনও জানা নেই। চুলোয় যাক। সে পরে দেখা যাবে'খন। এসব খবর কী আর চাপা থাকে? ঠিক বাড়ির কর্তা সেজকাকার কানে কথাটা উঠল। জমিদারবাড়ির ছেলে নিজের বাড়িতে চুরিছ্যাঁচড়ামি করে কিনা কলেজে ভর্তি হবে! সেজকাকা বললেন, মাইনে আমি দিয়ে দেব। কিন্তু হাতে না, সে টাকা সেরেস্তার সরকারমশাই সরাসরি গিয়ে কলেজে দিয়ে আসবেন।
আঁকার ক্লাস চলছে। এদিকে অভিনয়ের নেশাও টানে। সুযোগ পাওয়া যায় না। অমন জমিদারসুলভ চেহারা। শেষে ক'দিন উপোস করে, চোখের কোণে কালি ফেলে গেলেন গিরিশ ঘোষের কাছে। যদি অভিনয়ের একটা সুযোগ জোটে। না, সে তো জুটলই না, জুটল অপমান। চিৎকার করে উঠলেন গিরিশ, "ডেঁপো ছোকরা! এয়ারকি করতে এসেছ? ভাঁড়ামি করার আর জায়গা পাওনি? থিয়েটার করবে এই বয়সে— ঢের হয়েছে, যাও যাও, ইস্কুলে যাও!" গাড়িতে চেপে চলে গেলেন নটশ্রেষ্ঠ। দুর্গাচরণের কানে তখনও বাজছে কথাগুলো। লিখেছেন, "তাঁর প্রতি ছিল সীমাহীন, অগাধ শ্রদ্ধা এবং ভক্তি। মুহূর্তে তা মিলিয়ে গেল। এই রূঢ় আঘাত তরুণ মনকে বেঁকিয়ে ধনুকের মতো করে দিয়ে গিয়েছিল—তাতে উঠেছিল একটি কঠিন সংকল্পের টাংকারধ্বনি। এ যেন প্রতিশোধের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা!" যুদ্ধ ঘোষণা তো হলো, কিন্তু এগোনোর পথ কই! অভিনয়ের বিন্দুমাত্র স্থান পান না, সুযোগ পান না। বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল। বদ্ধ সেই গরাদ থেকে দুর্গার একমাত্র মুক্তির পথ সেই জানলা। জানলা গলে রাতে বেরিয়ে যান। ভোরে ফিরে আসেন। মদে টোর। পাড়ার নাটকের মহড়া চলে। দুর্গাচরণের বুকের ব্যথা বুকেই রয়ে যায়।
কয়েকদিন এভাবে কাটিয়ে বুঝলেন, চলবে না এভাবে। মরে যাবেন দমবন্ধ হয়ে। তার থেকে কলকাতায় ফেরা যাক। আঁকা শিখেছেন। থিয়েটারের সিন এঁকে জীবন কাটালেও মঞ্চ ছুঁয়ে থাকা যাবে। কলেজের ডিগ্রি নিয়ে শুরু হলো পথে পথে কাজের সন্ধান। ম্যাডানে কাজ জুটে গেল অবশেষে। পরের বছর শিশির ভাদুড়ী, নরেশ মিত্তিররা তাজমহল ফিল্ম কোম্পানি খুললেন। দুর্গাচরণ চলে এলেন সেখানে 'টাইটেল রাইটার' হিসেবে। নরেশ মিত্তির হঠাৎ ডেকে প্রস্তাব দিলেন অভিনয়ের। তিনি তখন নতুন মুখ খুঁজছেন। শরৎচন্দ্রের 'চন্দ্রনাথ' নামাবেন। তাজমহলের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে শিশিরকুমার চলে গিয়েছেন ততদিনে। দমদমে কাক্কু ঘোষের বাগানবাড়িতে শুটিং হলো চন্দ্রনাথের। সফল ছবি। সাউথ গড়িয়ার জমিদার বংশের বড় ছেলে দুর্গাচরণ সিনেজগতে হয়ে গেলেন 'দুর্গাদাস'। এই তাঁর পথ চলা শুরু। অভিনয়ে নরেশ মিত্তির এতটাই মুগ্ধ হলেন, পরের ছবিতেও নায়কের ভূমিকা জুটে গেল। একে একে 'জেলের মেয়ে', 'মিশর রানি', 'ধর্মপত্নী', 'কৃষ্ণকান্তের উইল', 'সরলা', 'রজনী', 'ইন্দিরা', 'রাধারানী'— ১৯টি নির্বাক ছবিতে অভিনয়। ১৯৩২-এর এপ্রিলে শেষ নির্বাক ছবি 'ভাগ্যলক্ষ্মী'। সহশিল্পী প্রমথেশ বড়ুয়া, সবিতা দেবীর মতো অভিনেতারা। প্রমথেশ বাংলা সিনেমার রাজকুমার হলে, বাংলার প্রথম ম্যাটিনি আইডল দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। খ্যাতির মধ্যগগনে তখন তিনি।
কিন্তু মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ আসে না। সিনেমায় অভিনয় করতে করতে হাঁফ ধরে যায়। বন্ধুবান্ধবরা অবাক হলো। এত বড় ম্যাটিনি স্টার মঞ্চের জন্য ছটফট করেন কেন?
মঞ্চকে আমি ভালোবাসি। মঞ্চের বৈদ্যুতিক আলোর সামনে দাঁড়িয়ে যখন আমার চোখের সামনে অসংখ্য কালো কালো মাথা দেখতে পাই, তখন আমার দেহের শিরা-উপশিরাগুলি আনন্দে তাথৈ তাথৈ করে নেচে ওঠে। কিন্তু এ আনন্দ পর্দায় অভিনয় করে আমি কোনো দিন পাই পাইনি বা পেতে পারি না।
বলছেন তারকা দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাবা যায়? আবার নরেশ মিত্তিরকে ধরলেন। মঞ্চে কাজের একটা সুযোগ করে দিতে হবে। শুনে নরেশ মিত্তিরের চক্ষু চড়কগাছ। "সুযোগ করে দিতে হবে? তোমাকে?" শিশিরকুমার নাট্যমন্দির নিয়ে মেতে আছেন তখন। আর্ট থিয়েটার্সের কাজকর্মও শুরু হয়েছে। অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় 'কর্ণার্জুন'-এর মহলা করাচ্ছেন। এমন সময় 'সুযোগপ্রার্থী' ম্যাটিনি স্টার দুর্গাদাসকে নিয়ে নরেশ মিত্তির পৌঁছলেন সেই চত্বরে। দেরিতে এসেছেন। সব পার্টই বিলি হয়ে গেছে। এক বিকর্ণের পার্ট। তাই সই। 'দুগ্গাবাবু' তাই করবেন। পার্ট নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই। স্বভাবসিদ্ধ জমিদারি মেজাজে বললেন, "যে পার্টই করি না কেন, নাটকে আমি সাপ খেলিয়ে দেব!" সে কথায় মহলা থেমে গেল। অপরেশচন্দ্র পর্যন্ত হাঁ করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। ৩০ জুন, অভিনয়ের রাত্রে দেখা গেল, একটি অক্ষরও বাড়িয়ে বলেননি। সত্যি সত্যিই মঞ্চে যেন সাপ খেলালেন দুর্গাদাস। রঙ্গমঞ্চে আরেক স্টার নায়কের প্রবেশ ঘটল।
অভীক চট্টোপাধ্যায় 'চিরনবীন নায়ক দুর্গাদাস'-এর ভূমিকায় লিখেছেন,
তাঁর হাঁটাচলা, চুলের ধরন, কথা বলার ঢং, পোশাক-আষাক ইত্যাদির প্রভাব পড়েছিল মূলত যুবসমাজের ওপর এবং নারী-দুনিয়াকে তো আলোড়িত করেইছিলেন তিনি। …
তখনকার নামকরা অভিনেত্রী নীহারবালা বলেছিলেন যে, হাততালি অনেকেই পায়, কিন্তু চুড়ি পরা হাতের হাততালি একজনই পান— তিনি দুর্গাদাস। অহীন্দ্র চৌধুরী স্বয়ং তাঁর অভিনয়ের ভক্ত ছিলেন। অজিতকুমার ঘোষ, যিনি বাংলা নাটকের ইতিহাস লিখে খ্যাতি অর্জন করেন, তাঁর চোখের সামনে ভাসত দুর্গাদাসের অভিনয়। সুরেলা অভিনয়ের সমসাময়িক হয়েও সম্পূর্ণ অন্যধারার অভিনয়রীতির জন্ম দিয়েছিলেন দুর্গাদাস। উত্তমের স্বাভাবিক অভিনয়ের জন্য এককালে তাঁকেও লোকে নতুন দুর্গাদাস বলে খ্যাপাত। 'অগ্রপথিকেরা' বইটিতে সৌমিত্র লিখছেন, শিশির ভাদুড়ীর সঙ্গে দুর্গাদাসকে নিয়ে তাঁর বার্তালাপ। শিশিরবাবু বলেছিলেন,
দুর্গার গলার আওয়াজ ছিল ভারী ভাল। চেহারা ছিল অতি সুন্দর। অভিনয় যে খুব logical, চরিত্র অনুযায়ী হত তা নয়, কিন্তু একটা গুণ ছিল, he had a way of his own—পার্টটা নিজের করে নিতে পারত। সেটাও অনেক সময় ভালোই লাগত।
তারপরে একটু মুচকি হেসে বলেছিলেন, "আর ওর অভিনয় সবথেকে কারা বেশি পছন্দ করত জানো তো? মেয়েরা।"
শেষের দিকে অত্যন্ত পানাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিল বহুনারীসঙ্গ। নিউ থিয়েটার্সের ভেতরে মদ খাওয়া বারণ বলে ডাবের মধ্যে লুকিয়ে মদ খেতেন। রংমহলের মালিক গদাধর মল্লিকের ওপর জোর খাটিয়ে মাইনে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ছোট শিল্পীদের। এমন হাজারও গল্প রয়েছে। তাঁর এক গোপন অনুরাগিনী দেখা করতে আসত মাঝেমধ্যেই। আকণ্ঠ মদ খেয়ে স্টেজে উঠতেন তখন। নতুনদের অভিনয় দেখে বক্স অফিস থেকে চিল্লিয়ে বলছেন, "হচ্ছে না, হচ্ছে না। কিচ্ছু হচ্ছে না। সব রস নষ্ট হয়ে গেল।" ক্রমশ একা হচ্ছেন শিল্পী। তাঁকে বোঝার মানুষ কই!
'পরশমণি' ছবি হিট হয়েছে। প্রভাত সিংহ পুরনো দোস্ত। শরীর তখন ভয়ানক অসুস্থ। তবু বন্ধুর ডাকে পাটনা গেলেন 'দেশের মাটি'-র কল শোয়ে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাড়িতে টেলিগ্রাম করলেন। কলকাতা ফেরার ঠিক আগেই প্রভাত সিংহ জোর করে মঞ্চে তুলে দিলেন দুর্গাদাসকে। অসুস্থ দুর্গাদাস ভালো করে দাঁড়াতে পারছেন না। মঞ্চে উঠে বললেন, "আমি খুবই অসুস্থ।" দর্শক জবাব দিল, "অসুস্থ তো স্টেজে নেমেছেন কেন!" একরাশ অপমান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অস্তমিত তারকা। শেষের দিকে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারতেন না। তখন আধো-আলো ঘোর। স্বপ্ন আসে, স্বপ্ন ভেঙে যায়। আত্মজীবনী লেখা শেষ হলো না। একা, নিঃসঙ্গ বুকে একরাশ অভিমান নিয়ে চলে গেলেন দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার প্রথম ম্যাটিনি আইডল।