'জীর্ণ পুরাতন'কে ভাসিয়ে, পেলে-গ্যারিঞ্চাই হলেন ভরসা, '৫৮-র বিশ্বকাপেই নতুন পথচলা ব্রাজিলের
Pele Garrincha 1958 FIFA World Cup : মাঠভর্তি দর্শক চাইছে তাঁকে একবার স্পর্শ করে দেখতে। বিশ্বকাপ জয়ের পর তার নতুন ডাকনাম হল “ও রেই”, যার মানে সম্রাট...
১
গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নের মুখোমুখি ব্রাজিল। আগের ম্যাচেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র করে কিঞ্চিত চাপে পড়ে গিয়েছে দল। অস্ট্রিয়াকে সহজেই হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন ডিডি, জাগালো, ভাভারা। কিন্তু নকআউটে যাওয়া নিশ্চিত করতে '৫৬-র অলিম্পিকের সোনাজয়ী সোভিয়েত রাশিয়াকে হারাতেই হবে। আসলে সে যুগে ব্রাজিল টিমকে সর্বত্র তাড়া করত পঞ্চাশের ফাইনালে মারাকানার ভূত। এতটাই যে, '৫৪-র বিশ্বকাপ থেকে পুরনো প্লেয়ার আর সাদা জার্সি ছুঁড়ে ফেলে নতুন সোনালি-সবুজ জার্সি পড়ে খেলা শুরু করে ব্রাজিল। তাই গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগে লুকিয়ে রাখা তুরুপের তাস দু'টো আস্তিন থেকে বের করলেন ব্রাজিল কোচ ভিনসেন্তে ফিওলা। নামিয়ে দিলেন দুই তরুণ তুর্কি পেলে ও গ্যারিঞ্চাকে! নান্দনিক ফুটবলের এক বিবর্তিত ঘরানার সূচনা হয়েছিল সেদিনই, দুই বিস্ময়কর প্রতিভার বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশের মুহূর্তে। সুইডেনের গোটেনবার্গে, ভাভার জোড়া গোলে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে দিয়ে ব্রাজিল চলে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে।
এই বিশ্বকাপ নিয়ে বহু আগে থেকে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারা। প্রতিযোগিতার ছ’মাস আগেই শুরু হয় যায় মাঠে ও মাঠের বাইরে বিশেষ প্রস্তুতি। দলকে তৈরি করতে আধুনিক পরিকল্পনা করে সাপোর্টিং স্টাফদের টিম। এই টিমে কোচের সঙ্গে ছিলেন ট্রেনার, সুপারভাইজার, হিসেবরক্ষক, ডাক্তার, এমনকী একজন ডেন্টিস্টকেও নিয়োগ করা হয়। বিষয়টায় এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল যে এক বছর আগেই টিমের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার হিলটন ভসলিং-কে আয়োজক দেশ সুইডেনের মাঠ, স্টেডিয়াম, আবহাওয়া ও হোটেল পরিদর্শন করতে পাঠায় ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। তার পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট অনুসারে বিশেষ প্রস্তুতি নেন ফুটবলাররা, যাতে উত্তর ইউরোপের মাঠ ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা না হয় জাগালো-জিটো-জিলমারদের।
বিশ্বকাপে পরপর ইউরোপের দুঁদে দলগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে বলে এক নতুন ফর্মেশনেও ছক সাজান কোচ ফিওলা। বলা যায়, সেই প্রথম প্রথাগত ৩-২-৫ সিস্টেম ভেঙে ৪-২-৪ সিস্টেম বিশ্ব ফুটবলকে উপহার দিল ব্রাজিল। মাঝমাঠের প্রাণভোমরা হয়ে উঠলেন ডিডি, তার সঙ্গী জিটো। ডিডিই ছিলেন এই দলের মূল প্লে-মেকার, মাঝমাঠ থেকে দলকে পরিচালনা করার দায়িত্বে। জিটো খেললেন একটু পেছন থেকে রক্ষণাত্মক ভূমিকায়। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ থেকেই বিশ্বকে সম্মোহিত করছিল অ্যাটাকিং থার্ডে ব্রাজিলের খেলা। এক অনন্য ছন্দে আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ে বিপক্ষের বক্সে, যা কখনও দেখেননি ফুটবলপ্রেমীরা। ইউরোপের টিমগুলোর কাছে এই নব্য ব্রাজিল ছিল এক দুর্ভেদ্য রহস্য। আজ থেকে ৬৪ বছর আগের ফুটবল আবহে বর্তমান যুগের মতো লাতিন আমেরিকার প্লেয়াররা ঝাঁকে ঝাঁকে ইউরোপে পাড়ি দিতেন না ক্লাব ফুটবল খেলতে। সেই ব্রাজিলের পুরো দলটাই দেশের দুই বড় ক্লাব, বোটাফোগো আর সান্টোসের ফুটবলারদের নিয়ে গড়া। তাই ইউরোপীয় কোচেদের কাছে ব্রাজিল ছিল “ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি”; যাকে আটকানোর কোনও কৌশল বিশ্বকাপের মধ্যে বের করে ফেলা অসম্ভব। এই দলের চারজন ফরওয়ার্ড, রাইট আউটে গ্যারিঞ্চা, দুই স্ট্রাইকার--ভাভা ও সতেরো বছর বয়সী পেলে, ও লেফট আউটে মারিয়ো জাগালো। ভাভা গোলের মধ্যেই ছিলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলস ম্যাচে প্রথম রক্তের স্বাদ পেয়ে যান পেলে।
সে যুগে স্টেডিয়ামে বসে যারা খেলা দেখতেন, মূলত তারাই ছিলেন ফুটবল-দর্শক। টেলিভিশনের লাইভ কভারেজ '৫৪-র বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডে শুরু হলেও, তার পরিধি ছিল খুবই স্বল্পসংখ্যক ইউরোপীয় দর্শকের মধ্যে সীমিত। গেরস্তের ড্রয়িংরুমে বা ক্লাবঘরে সেই লাইভ কভারেজ দেখার কথা ভাবাই যেত না। এছাড়া পরবর্তীতে ম্যাচের কিছু বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপিংস দেখার সুযোগ ছিল। ভারতেও প্রয়াত কোচ অমল দত্ত সে যুগের বিশ্বকাপের বহু ম্যাচের ক্লিপিংস প্রজেক্টরের মাধ্যমে কিছু দর্শককে দেখিয়েছেন, ব্যাখ্যা সহ। কিন্তু বৃহৎ ফুটবল-বিশ্বকে নির্ভর করতে হতো রেডিওর ধারাভাষ্য, দৈনিক সহ অন্যান্য পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট ও ফিচার স্টোরির বিবরণ বা ভাষ্যের ওপর। তাই সে যুগের স্টারদের খেলার স্টাইল নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের কল্পনার অন্ত ছিল না! সেইজন্যই '৫৮ ও '৬২ পরপর দুবার, ও পরে ৭০’এ, সব মিলিয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে ট্রফি চিরতরে আমাজনের তীরে নিয়ে যাওয়া সোনালি জার্সির দল ও তাদের খেলার স্টাইল এক আশ্চর্য মিথ হয়ে যায় ফুটবল ইতিহাসে।
২
সেমিফাইনালে দুর্ধর্ষ ফ্রান্সের মুখোমুখি হওয়ার আগে পেলে ও গ্যারিঞ্চাকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা শুরু হয়ে গেল ফুটবল-মহলে। টিনেজার পেলে তখনও “ব্ল্যাক পার্ল” হননি, নিছকই এক বিস্ময়। কালো ছিপছিপে ছেলেটার বক্সের বাইরে ও ভেতরে ফার্স্ট টাচ, থাই-বুক সহ শরীরের যে কোনও অংশ দিয়ে নিখুঁত রিসিভিং, বল-জাগলারি, ও ক্ষিপ্রতা শুধু মাঠের দর্শক নয়, বিশেষজ্ঞদেরও আকর্ষক মনে হয়েছে। এতদিন ইউরোপ পেলেকে চিনত না। কিন্তু মাত্র ১৫ বছর বয়সে সান্টোসে সই করার পর, ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবল-মহলে তার স্কিল উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে তার একমাত্র গোলে ওয়েলসকে হারিয়েছে ব্রাজিল;এবং পেলের বিশ্বকাপের প্রথম গোলটাও তার বল-জাগলিং দক্ষতার ফসল। আবার গ্যারিঞ্চা এক ভিন্ন স্বাদের বিস্ময়; যার দু-পা অসমান, ডান পা ইশত বড় ও বাঁকা, কিন্তু সেই প্লেয়ারেরই রয়েছে চোখধাঁধানো ড্রিবলিং, আর অনবদ্য ফাইনাল পাস বাড়ানোর ক্ষমতা! ওই বাঁকা পায়ের ড্রিবলিং-এর জন্য ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীরা আদর করে তাকে ডাকেন “এনজো” বলে। মাঠে ও মাঠের বাইরের টেম্পরামেন্টের জন্য ২৪ বছর বয়সী যুবককে শুরুতে দলে রাখতে চায়নি টিম-ম্যানেজমেন্ট; কিন্তু সোভিয়েত ম্যাচে মাঠে নামার পর অচিরেই তিনি দলকে নির্ভরতা দিতে শুরু করলেন। ব্রাজিল-শিবিরে চাপা টেনশন, আবার ফিরে আসছে মারাকানার ভূতটা: অন্যদিকে শেষচারে পৌঁছনোর পর উঁকি দিচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে সমগ্র জাতির লালিত স্বপ্নটা---প্রথমবার জুলে-রিমে কাপ জিতে দেশে ফেরার।
ফ্রান্স তখন ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দল। টিমটা সেবার দারুণ ছন্দে, সঙ্গে জুস ফঁতের মতো সাড়া জাগানো স্ট্রাইকার। প্রায় প্রতিটা ম্যাচে গোল পাচ্ছিলেন ফঁতে, আর দুর্বার গতিতে এগচ্ছিল ফরাসি দল। সেমিফাইনাল ম্যাচটা ৩৬ মিনিট অবধি সেয়ানে সেয়ানে লড়ছিল ফ্রান্স, ভাভার প্রথম গোল শোধ করে দেন ফঁতে; কিন্তু ভাভার সঙ্গে সংঘর্ষে ফরাসি অধিনায়ক রবার্ট জঙ্কের পা ভাঙ্গার সঙ্গে ভেঙ্গে পড়ল ফরাসি দূর্গও। তখনও পরিবর্ত ফুটবলার নামানোর নিয়ম চালু করেনি ফিফা। তাই বাকি সময়টা ফ্রান্সকে খেলতে হল দশজনে, দলের সেরা ডিফেন্ডারকে ছাড়াই। ব্রাজিলের দুর্ধর্ষ ফরওয়ার্ড লাইন সুযোগটার ষোল আনা সদ্ব্যবহার করে একের পর এক গোল করে ৫-২ ব্যবধানে ম্যাচ বের করে নেয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্লেয়ার হিসেবে পেলে হ্যাট্রিক করলেন, কিন্তু দিনের সেরা গোলটা এল ডিডির দূরপাল্লার সোয়ার্ভিং শটে। সোনালি ঝড় ফাইনালে পৌঁছে গেল, মুখোমুখি আয়োজক দেশ সুইডেনের।
৩
“সুইডেনের রাজা এসে আমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন, কিন্তু আমার সাও পাওলোর বাউরুর বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য মন কাঁদছিল”। সবথেকে কমবয়সী ফুটবলার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললেন, দুটো গোল করলেন এবং জিতলেন---যার সম্পর্কে বলছে রেকর্ড বুক, জয়ের পর সেই পেলের প্রতিক্রিয়া। সুদর্শন ব্রাজিল অধিনায়ক বেলিনি যখন মঞ্চে উঠে বিশ্বকাপ স্পর্শ করছেন, জার্সি খুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ম্যাচের নায়ক। ম্যাচের শেষ মিনিটে সোলনার রাসুন্ডা স্টেডিয়ামে উপস্থিত পঞ্চাশ হাজার দর্শক সাক্ষী থেকেছে তাঁর স্বপ্নের গোলের! সুইডেনের ডিফেন্ডার বেঙ্গ গুস্তাভসনের মাথার ওপর দিয়ে চামচের মতো বলটা তুলে দিয়ে, চলতি বলেই অনবদ্য ভলি জালে জড়িয়ে দেন পেলে। ব্রাজিল ৫-২ তে এগিয়ে, আর কয়েক সেকেন্ডের অপেক্ষা মাত্র স্বপ্নপূরণের। সান্টোসের বিস্ময় প্রতিভা তখন বন্দিত জাতীয় নায়ক, মাঠভর্তি দর্শক চাইছে তাঁকে একবার স্পর্শ করে দেখতে। বিশ্বকাপ জয়ের পর তার নতুন ডাকনাম হল “ও রেই”, যার মানে রাজা বা সম্রাট।
অথচ নীলস লিডহোমের গোলে সুইডেন চার মিনিটের মাথায় এগিয়ে গিয়েছিল। “তখন আশঙ্কা হচ্ছিল, মারাকানার উরুগুয়ে ম্যাচ না ফিরে আসে! আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চে দেখি একজন ডিরেক্টর কাঁদতে শুরু করেছেন। প্রথমার্ধেই ভাভার জোড়া গোলে স্বস্তি পাই। তারপর আর ফিরে তাকাইনি”। ফাইনালে মাঠের ভেতরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন মারিও জাগালো, যার বুট থেকে দ্বিতীয়ার্ধে এসেছিল দলের চতুর্থ গোল। সেমিফাইনাল আর ফাইনালে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়ে প্রথমবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল ব্রাজিল। মূল গেম-মেকার ডিডি প্রথম ম্যাচ থেকে ফাইনাল অবধি ছিলেন এই টিমের নিউক্লিয়াস। মাঝমাঠের ছ’নম্বর জার্সিই শ্রেষ্ঠ প্লেয়ার নির্বাচিত হয়ে পেলেন সোনার বল; পেলের হাতে সেরা উদীয়মান তারকার পুরস্কার। ৫৮-র পেলে-গ্যারিঞ্চা-ডিডিরা ছাড়া আজ পর্যন্ত ইউরোপের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জিতে নিয়ে পারে নি কোনও ভিন-মহাদেশের দল।
কী ছিল এই দলটার অফুরন্ত শিল্পসত্তার উৎস? তা কী শুধু পেলে-গ্যারিঞ্চার উত্থানেই নিহিত? হয়ত তা নয়। ওদেশের রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, সি-বিচে, কফি ও কোকোর ক্ষেতে যে স্বতঃস্ফূর্ত ফুটবল খেলার সংস্কৃতি, তাই সৃষ্টি করেছিল এক নান্দনিক ফুটবলের ঘরানার। মারাকানায় হারের পর কৃষ্ণাঙ্গ গোলকিপার বারবোসাকে নিয়ে যে মিথের পাহাড় গড়ে উঠেছিল, আট বছর পর কালো ছেলের হাত ধরে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ তা অনেকটাই ভেঙে দিল।(যদিও সাম্প্রতিককালে, ২০০৬-এ দিদার আগে অবধি বিশ্বকাপে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ গোলকিপার খেলায়নি ব্রাজিল)। ব্রাজিলের এই শৈল্পিক ফুটবল-ঘরানা, দূর দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও একটা সাইকোলজিকাল নির্মাণ করতে সক্ষম হল; তারা এই সোনালী-সবুজ জার্সির মধ্যে নিজেদের পরিচিতি খুঁজে পেলেন, একাত্ম বোধ করতে শুরু করেন। পেলে সহ অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ তারকাদের ঘিরে শুধু ব্রাজিল নয়, সারা গ্রহের কালো-মানুষরা নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। একসময় যিনি সাও পাওলোর কফির দোকানে ঠিকা বালক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন সামান্য বাড়তি উপার্জনের জন্য, তাঁর মাথায়ই এখন বিশ্বসেরার মুকুট!
এর বহু পরে এক সাক্ষাৎকারে পেলে বলেন, “৫৮-র দল না ৭০-এর দল বেশি ভাল ছিল; আমাকে বহুবার এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। আমি বলি, দুটো দলই খুব ভাল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখে, ৫৮-র ব্রাজিল দলটাই আমার দেখা সেরা ব্রাজিল দল। ওই দলে পাঁচ-ছ'জন বল প্লেয়ার ছিল। ডিডি, গ্যারিঞ্চা, ভাভা, জাগালো, জিটো ও লেফট ব্যাক নিলটন স্যান্টোস নিজের পজিশনে স্কিলের নিরিখে আমার দেখা সেরা ব্রাজিলীয়। তাই শৈল্পিক ফুটবলের এক অন্য উচ্চতায় যেতে পেরেছিল এই দলটা। সেই প্রথম ইউরোপ-সহ বহির্বিশ্ব দেখেছিল যোগো-বোনিটো বা সুন্দর ফুটবল”। বিশ্বকাপে rare spectacle-এর সম্ভার নিয়ে হাজির হয়ে ব্রাজিল উপহার দিত একের পর এক অসামান্য দৃশ্য। যা নানা কল্পকথায় বর্ণিত হয়ে ব্রাজিলের ফুটবল ঘরানাকে এক রহস্যময়ী সৌন্দর্যের বিমূর্ত প্রতীক করে তুলেছিল। যে রূপকথার সম্মোহনী ক্ষমতা প্রবল প্যাশন উদ্রেক করে এই গ্রহের সর্বত্র। মাঠে কবিতা রচনা হয়, ফুল ফোটে, কিন্তু কোনও মাপযন্ত্রেই এই শিল্পের পরিমাপ করা বা তার উৎসমুখ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। গ্যারিঞ্চা প্রয়াত হয়েছেন ১৯৮৩-তে, প্রায় চল্লিশ বছর হতে চলল। গত ২৯ ডিসেম্বর চিরবিদায় নিলেন ফুটবল সম্রাটও; পৃথিবী একবারই পেয়েছিল ৫৮-র দুর্ধর্ষ দল ও সেই কাব্যিক ফুটবলকে, আর কখনও পায়নি।(৬২-তে চোটের জন্য দ্বিতীয় ম্যাচের পর আর খেলেননি পেলে। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা নেন গ্যারিঞ্চা) ৫৮-র যোগো বোনিটো কি এক unsolved mystery (অমীমাংসিত রহস্য) হয়েই রয়ে গেল ফুটবল ইতিহাসে?