হলুদ বা লাল নয়, ইতিহাসে প্রথমবার সাদা কার্ড দেখল ফুটবল! যে ঘটনা শোরগোল ফেলে দিল বিশ্বে

First ever White Card in football : ম্যাচের মধ্যেই সটান সাদা কার্ড দেখিয়ে দিলেন রেফারি! যে দৃশ্য এর আগে কখনও দেখেনি ক্রীড়া জগত।

ফুটবল মাঠে বল দখলের লড়াই, খেলোয়াড়দের দক্ষতা, ম্যাজিক, সমর্থকদের উল্লাস ইত্যাদি তো আছেই। এই সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রেফারির বাঁশিও। তাঁর বাঁশি বাজলেই সবাই তটস্থ হয়ে যান। কোচ থেকে খেলোয়াড় – সবার নজর পড়ে যায় তাঁর দিকে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের কথা। আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ড ম্যাচে খেলোয়াড়দের থেকেও বেশি শিরোনামে ছিলেন ওই ম্যাচের রেফারি। কারণ? সেই ম্যাচে কার্ডের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

ফুটবল মাঠে হলুদ ও লাল – এই দুই রঙের কার্ডেরই দহরম মহরম দেখা যায়। ফুটবলাররাও সতর্ক থাকেন এই ব্যাপারে। লাল কার্ড পাওয়া মানে একেবারেই মাঠের বাইরে। এই নিয়মগুলো নিশ্চয়ই সবাই জানেন। ১৯৭০ ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে এই দুটি কার্ড খেলার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। হলুদ আর লাল কার্ড তো কেবল খেলা নয়, একেবারে জীবনেরও সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার ফুটবল বিশ্ব যা দেখল, সেটা এর আগে কখনও দেখেনি। হলুদ কিংবা লাল নয়; ম্যাচের মধ্যেই সটান সাদা কার্ড দেখিয়ে দিলেন রেফারি! যে দৃশ্য এর আগে কখনও দেখেনি ক্রীড়া জগত।

আরও পড়ুন : ক্যানসারকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে হ্যাটট্রিক! এভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখালেন ফুটবলার হলার

সাদা কার্ড? তাও ফুটবলে? এমন নিয়ম তো এর আগে কখনও শোনেনি কেউ! দেখাও যায়নি কোনওদিন। তাহলে ২০২৩ কি কোনও পরিবর্তন নিয়ে এল? পর্তুগালের এই ঘটনা রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিল বিশ্বে। কেউ কেউ রইলেন পক্ষে, কেউ আবার বিপক্ষে। কিন্তু ফুটবলের ময়দানে সাদা কার্ড দেখানোর মানেটা কী? ঘটনাটাই বা কী?

সম্প্রতি পর্তুগালের ক্লাব ফুটবলে ছিল বেনফিকা বনাম স্পোর্টিং লিসবনের মহিলা টিমের ম্যাচ। কার্যত ডার্বিই বলা যায় এই ম্যাচটিকে। স্পোর্টিং লিসবনের পুরুষ দলের হয়েই প্রথমবার ফুটবল জগতে পা রাখা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। প্রথমার্ধের আগেই ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বেনফিকার মহিলা দলটি। ৪৪ মিনিটের মাথায় হঠাৎই রেফারির বাঁশি বেজে ওঠে। দুই দলেরই ডাগ আউটের দিকে এগিয়ে কার্ড দেখান তিনি। তখনই আশ্চর্য হয়ে যান সবাই। কারণ, হলুদ বা লাল নয়; সাদা কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি। এর মানে কী?

ঠিক তার আগেই ডাগ আউটে একটি ঘটনা ঘটে। লিসবন পিছিয়ে পড়ায় একজন সমর্থক অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে বাকিরা তাঁর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করান। অসুস্থ মানুষটিকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন লিসবন ফুটবল দলের মেডিক্যাল স্টাফরা। তাঁদের সঙ্গে চলে আসেন বেনফিকার মেডিক্যাল স্টাফরাও। দল নয়, রং নয়, মানুষের জীবন বাঁচানোই সবার প্রথম কর্তব্য। সেভাবেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই দলের ডাক্তাররা। একটু সুস্থ হওয়ার পরই ফের নিজের জায়গায় ফিরে আসেন তাঁরা। তখনই ‘সাদা কার্ড’ দেখান রেফারি।

আরও পড়ুন : ১১ জন ফুটবলারকেই পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছিল হিটলারের দল

কিন্তু কেন? রেফারি কি ভুল করে এমন কার্ড দেখালেন? কিন্তু কোনও অন্যায় তো করেননি মেডিক্যাল স্টাফরা! পরে জানা গেল, ভুল করে নয়, রেফারি ঠিক কার্ডই দেখিয়েছেন। সাদা কার্ডই দেখাতে চেয়েছেন তিনি। ক্রীড়া জগতের একটি প্রচলিত শব্দ হল ‘ফেয়ার প্লে’। নিয়ম মেনে, মানবিকতা ও স্পোর্টসম্যানশিপ মনোভাব দেখিয়ে খেললে তাঁকে সবাই বাহবা দেন। সেই ‘ফেয়ার প্লে’-র প্রতি সম্মান জানাতেই এই সাদা কার্ড ব্যবহার করেছেন রেফারি। ওই মুহূর্তে দুই দলের মেডিক্যাল স্টাফরা যে কাজ দেখিয়েছেন, তা যে কোনও প্রশংসার ঊর্ধ্বে। সত্যিই সেটা ‘ফেয়ার প্লে’-র নিয়মেই যায়। নিজের কাজ থেকে তাঁরা সরেননি এতটুকুও। সেই সম্মান জানাতেই সাদা কার্ড ব্যবহার করেছিলেন রেফারি। আর কে না জানে, সাদা হল শান্তির প্রতীক!

উল্লেখ্য, বেনফিকা বনাম লিসবনের মহিলাদের ডার্বি ম্যাচে রেফারিও ছিলেন এক মহিলা। তাঁর হাত ধরেই এই অদ্ভুত বদল এল। অনেকেই রেফারিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। তবে কয়েকজন আবার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। সাদা কার্ডের ব্যবহার ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম। এর আগে কেউ সেভাবে এই কার্ডের ব্যাপারে শোনেনি। তাই বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। নিয়মের বাইরে গিয়ে কেন এমন ব্যবহার, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন। বিশেষ করে ফুটবল মাঠে খেলা চলাকালীন কার্ড দেখালে সবাই ভাবে, এবার বিপদ বাড়ল। সেখানে আগে থেকে না বললে অনেকে বুঝতে পারবেন না। তবে এই মুহূর্তটি সত্যিই ঐতিহাসিক, সেটা মানছেন প্রত্যেকে।

More Articles