মানুষের মূত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হতো ব্যাঙের দেহে! কীভাবে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করত আগেকার মানুষ?
Pregnancy Test with Frog: চিকিৎসকরা সম্ভাব্য গর্ভবতী মহিলাদের প্রস্রাব একটি সিরিঞ্জে ভরে ব্যাঙের পিঠে থাকা একটি থলিতে ভরে দিতেন।
আপনি গর্ভবতী কিনা তা পরীক্ষা করা এখন খানিক ইনস্ট্যান্ট নুডল তৈরির মতোই সহজ। বাথরুমে মিনিট ২ থেকে ৩ অপেক্ষা করলেই দুইখানি গোলাপি দাগের যন্ত্র বলে দেবে আপনার গর্ভধারণ হয়েছে নাকি হয়নি। পরীক্ষাটি এখন এতই দ্রুত এবং সহজবোধ্য যে বাজারে ছোট্ট ডিসপোজেবল ডিভাইসগুলির জনপ্রিয়তাও বেড়েছে হুহু করে। কিন্তু কয়েক যুগ আগেও বিষয়টা এত সোজা ছিল না। আমাদেরই মা-ঠাকুমাদের যুগে গর্ভধারণ হয়েছে কিনা জানার জন্য এত সোজা, প্রকাশ্য কোনও পদ্ধতি ছিল না। তবে তারও আগে? ধরা যাক মধ্যযুগে? কীভাবে মহিলারা পরীক্ষা করতেন যে তারা গর্ভবতী কিনা? পদ্ধতি জানলে চোখ কপাল ছাড়িয়ে মহাকাশেও উঠে যেতে পারে।
প্রাচীন যুগে গর্ভাবস্থা নির্ধারণের জন্য অনেক বেশি প্রাকৃতিক বিষয়ের উপর নির্ভর করতে হতো। জানলে অবাক হবেন, আফ্রিকার এক নখযুক্ত ব্যাঙ ধরে জানতে হতো বাড়ির মহিলাটি গর্ভবতী কিনা। খুব বেশি আগেও নয়, ১৯৩০ থেকে ১৯৬০-এর দশকেও, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় গর্ভাবস্থা পরীক্ষাটি করা হতো এই ব্যাঙের মাধ্যমেই। আফ্রিকান এই ব্যাঙের ডোরসাল লিম্ফ থলিতে সম্ভাব্য গর্ভবতী মহিলার প্রস্রাব ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো।
আরও পড়ুন- কেবল মহিলা নয়, পুরুষদের জন্যও জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি! সুরক্ষিত যৌনসুখের যে উপায় আনলেন ডাক্তাররা
শুনে খানিক তুকতাক মনে হলেও এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আজকের বাড়িতে সহজে গোলাপি দাগের পরীক্ষাটির জন্ম হয়েছে। নিষিক্ত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরে, একজন গর্ভবতী মহিলার শরীর হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রফিন বা hCG নামে একটি হরমোন তৈরি করতে শুরু করে। এটি সদ্য তৈরি হওয়া প্লাসেন্টা থেকে জন্মায় এবং এটি ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে।
গর্ভধারণ হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করার এক নিখুঁত উপাদান এটি। কারণ এটি তুলনামূলকভাবে দ্রুত দেখা দেয় এবং এর ঘনত্ব মোটামুটিভাবে বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই শুধু আপনি গর্ভবতী কিনা তাই নয়, ইদানীং আরও কিছু পরীক্ষা পদ্ধতি নিমেষে আপনাকে জানিয়ে দেবে কতদিনের গর্ভাবস্থা আপনার। যেহেতু এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়, তাই পরিমাপ করাও অত্যন্ত সহজ। হয়তো সেই যুগে এর নেপথ্যে থাকা বিজ্ঞান মানুষ জানতেন না, তবে এটা বুঝতেন প্রস্রাব দিয়েই সহজে গর্ভাবস্থা চিহ্নিত করা সম্ভব।
আরও পড়ুন- নেই নির্দিষ্ট চিকিৎসা, অধিকাংশ মহিলাকেই পোহাতে হচ্ছে এই নরক যন্ত্রণা! উপসর্গ কী?
আধুনিক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় পজিটিভ ফল তখন দেখা দেয় যখন প্রস্রাবের নমুনায় পর্যাপ্ত এইচসিজি থাকে যা পরীক্ষার স্ট্রিপে থাকা অ্যান্টিবডিগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ উৎসেচকগুলিও হরমোনের সঙ্গে জুড়ে যায় এবং ওই স্ট্রিপে নির্দেশক লাইনের রঙ পরিবর্তন করে। তখনই ওই মহিলা জানতে পারেন তিনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা।
ব্যাঙকে ঠিক কীভাবে ব্যবহার করা হতো এই গর্ভধারণের পরীক্ষায়? মানুষের প্রস্রাবে ব্যাঙ নিজে সত্যিই দ্রুত ডিম্বস্ফোটন করতে পারত। ১৯৪০ বা ৫০ এর দশকে কোনও হাসপাতালে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার জন্য গেলে চিকিৎসক ব্যাঙ রাখার বিশেষ ঘরটিতে চলে যেতেন। শুনতে অবাক লাগলেও, তখন এই ব্যাঙের পরীক্ষাগুলি এতই জনপ্রিয় এবং সহজবোধ্য ছিল যে বিভিন্ন হাসপাতালে এই ব্যাঙ আলাদা করে একটি ঘরে রাখা হতো। চিকিৎসকরা সম্ভাব্য গর্ভবতী মহিলাদের প্রস্রাব একটি সিরিঞ্জে ভরে ব্যাঙের পিঠে থাকা একটি থলিতে ভরে দিতেন। আট থেকে বারো ঘণ্টা পরে মিলত উত্তর। যদি ওই ব্যাঙ ডিম পাড়ে তার মানে আপনি গর্ভবতী, না পাড়লে আপনার গর্ভধারণ হয়নি। এই বিষয়টি জানতে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগত, এখন লাগে ৩ থেকে ৪ মিনিট। গর্ভাবস্থার পরীক্ষা হিসাবে ব্যাঙ ব্যবহারের অভ্যাস এতটাই ব্যাপক ছিল যে সাম্প্রতিক দশকগুলিতে এই ব্যাঙের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী হ্রাস পেয়েছে।