হাজতবাস থেকে আমেরিকা, আরিয়ানের সাদা-কালো দিনগুলি

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় একাধিকবার সাংবাদিকদের সামনে এলেও আরিয়ানকে নিজের মুখে একটিবারের জন্যও কোন কথা বলতে শোনা যায়নি। কিছুদিন আগে অবশেষে নীরবতা ভেঙে তিনি বলেছেন, যা কিছু তাঁর সঙ্গে হয়েছে, তা কি আদৌ তাঁর প্রাপ্...

 

বিগত বছর শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খানের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে কার্যত সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল, ইতিমধ্যেই সেই মামলায় ক্লিনচিট পেয়েছেন ‘বাদশা’ পুত্র। শাহরুখ খানের পিতৃত্বের ব্যর্থতা থেকে শুরু করে আরিয়ানের শিক্ষা, কোনওকিছুই বাদ পড়েনি সেই সমালোচনায়। ক্লিনচিট পাওয়ার পরেও আটকে রাখা হয়েছিল আরিয়ানের পাসপোর্ট, যা চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় তিনি ফেরত পান। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় একাধিকবার সাংবাদিকদের সামনে এলেও আরিয়ানকে নিজের মুখে একটিবারের জন্যও কোন কথা বলতে শোনা যায়নি। কিছুদিন আগে অবশেষে নীরবতা ভেঙে তিনি বলেছেন, যা কিছু তাঁর সঙ্গে হয়েছে, তা কি আদৌ তাঁর প্রাপ্য ছিল! মুম্বইয়ের ক্রুজে যেদিন মাদককাণ্ডের অভিযান চালানো হয়, সেদিনও আরিয়ানের কাছে থেকে কিছু পাওয়া যায়নি, তবে কেন শুধুমাত্র সন্দেহের বশে আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রান্তের মতো এক জঘন‍্য কাজের সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নাম যুক্ত করা হল, সেই নিয়েও প্রশ্ন করেছেন তারকা পুত্র। বিনা অপরাধে দিনের পর দিন জেল হেফাজতের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাঁর সেই মন্তব্যে।

মুম্বই ক্রুজ অভিযান
২০২০ সালের জুন মাসে সুশান্ত সিং রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই মুম্বইয়ের তাবড় তাবড় সব ব্যক্তির নামের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে থাকে মাদক পাচারের বিষয়টি। সেইসময় সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের প্রসঙ্গ সামনে আসতেই, একের পর এক বলিউডের তারকাদের জেরা করা শুরু করে এনসিবি দপ্তরের অধিকারিকরা। হোয়্যাটসঅ্যাপ চ্যাটে ‘মাল’ শব্দটির উল্লেখ থাকায় তদন্তের জন্য ডেকে পাঠানো হয় দীপিকা পাড়ুকোনকেও, আবার অন্যদিকে ব্যাংককে ঘুরতে গিয়ে সুশান্তের সঙ্গে গঞ্জিকা সেবনের অভিযোগে ডাক পরে সইফ-কন্যা সারা আলি খানের।

এইসব ঘটনার অঙ্গ হিসেবেই ২০২১ সালের ২ অক্টোবর মুম্বইয়ের বিলাসবহুল কর্ডেলিয়া ক্রুজে অভিযান চালান নার্কোটিক্স কন্টোল ব্যুরোর আধিকারিকরা এবং সেই সময় ওই ক্রুজে পার্টি করার কারণে গ্রেফতারির হাত থেকে নিস্তার পান না আরিয়ান খানও। এনসিবি-র তৎকালীন মুম্বই প্রধান অফিসার সমীর ওয়াংখেড়ের নেতৃত্বে সম্পন্ন হওয়া এই অভিযানে, মাদক সেবন করার অভিযোগে আরিয়ানের সঙ্গে আরও ১৯ জনকে সেই ক্রুজ থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তারপরেই এনসিবি-র মুম্বই জোনাল ডিরেক্টয়েড দ্বারা প্রস্তুত করা হয় মামলাটি। মামলাটি পরবর্তী সময় কোর্টে উঠলে এনসিবির পক্ষ থেকে এও দাবি করা হয়, তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই নাকি অবৈধ প্রচুর মাদক দ্রব্য পাওয়া গেছে এবং আরিয়ান খানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ড্রাগ সিন্ডিকেটের যোগাযোগ রয়েছে। অক্টোবরের ৮ তারিখ থেকে আরিয়ানের আইনজীবী সতীশ মানেশিণ্ডে একাধিকবার তাঁর জামিনের জন্য আবেদন জানালেও, তা খারিজ করে দেয় কোর্ট। অবশেষে, মামলাটি মুম্বই হাই কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন কিং খান। ২৬ অক্টোবর থেকে সেখানেই শুরু হয় শুনানি এবং তিনদিন পর, অর্থাৎ ২৯ তারিখে কোর্ট আরিয়ান-সহ আরবাজ এবং মুনমুন ধামেচাকে জামিন দেয়। অবশেষে, ৩০ অক্টোবর মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেল থেকে নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় আরিয়ানকে। এরপর এই বছরের ২৭ মে তারিখে মাদক পাচার এবং সেবনের অভিযোগে ক্লিনচিট পান এই স্টারকিড।

আরও পড়ুন: দুই দশক ধরে বিতর্কে সরগরম ‘কফি উইথ করণ’, আজও অটুট জনপ্রিয়তা

এই মামলায় সমীর ওয়াংখেড়ের ভূমিকা
আরিয়ানের এই মাদক মামলায়, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তৎকালীন এনসিবি-র জোনাল ডিরেক্টর সমীর ওয়াংখেড়ে। একসময় তাঁর নেতৃত্বেই মুম্বইয়ের মাদক পাচারকারী এবং মাদক সেবনকারী বড় বড় ব্যক্তির নাম সামনে আসে। আরিয়ান খান এবং তাঁর পাঁচজন বন্ধুর বিরুদ্ধে তদন্ত করার প্রয়োজনে সিটও (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী সময় তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে আরিয়ান খানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ সামনে আসতে এবং সর্বপোরি ক্রুজ মামলায় একমাত্র সাক্ষীর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটলে তাঁকে এই মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সিট-এর রিপোর্ট এবং আরিয়ানের মুক্তি
চলতি বছরের ২৭ মে, এনসিবি এনডিপিএস কোর্টে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে। এই ছ’হাজার পৃষ্ঠায় কোথাও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাবে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করে আদালত। আরিয়ান খান মুক্তি পেলেও এনসিবি, সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে একাধিক প্রশ্ন দায়ের করে। তাঁরা বলেন, ক্রুজ অভিযানের দিন কেন কোনও ছবি কি‌ংবা ভিডিও রেকর্ড করা হয়নি? অভিযুক্তদের মেডিক্যাল চেক আপ না করিয়েই কীভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের মামলা দায়ের করা যেতে পারে? আরিয়ানের মোবাইল জোর করে কেড়ে নেওয়া এবং তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে এভিডেন্স খোঁজার বিষয়টি নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন তাঁরা, যদিও সেই চ্যাট থেকেও কিছুই প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁরা আরও জানান, আরিয়ান নিজেই বলেছিলেন, তিনি জীবনে একবারমাত্র ইউনাইটেড কিংডমে থাকাকালীন মারিজুয়ানা সেবন করেছিলেন, তবে এই সামান্য বিষয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে মাদক দ্রব্য পাচার করার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। এছাড়াও সমীর ওয়াংখেড়ের আওতায় মামলা চলাকালীন আরিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়েও কোনও ভিডিও রেকর্ড করা হয়নি, যা কার্যত আইন অমান্য করার সমান। এছাড়াও আরবাজ নিজের বয়ানে ক্রমাগত একই কথা বলেছিলেন, আরিয়ান নির্দোষ।

অবশেষে পাসপোর্ট ফিরে পাওয়া
মাদক মামলায় সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হলেও, হাতে মিলছিল না পাসপোর্ট। সেই কারণেই ৩০ জুন, পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার আবেদন করার জন্য আবারও একবার কোর্টের চক্কর কাটতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত ১৩ জুলাই তিনি ভিভি পাটিলের রায়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফিরে পান। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, এরপরেই নাকি তিনি পাড়ি দেবেন আমেরিকায়। ছোটবেলা থেকেই কিং খানের এই পুত্র অভিনেতা নয়, বরং পরিচালক হতে চেয়েছিলেন। এইবার নাকি সেই স্বপ্নপূরণের আশায় তাঁর গন্তব্য হবে সুদূর আমেরিকা।

 

More Articles