প্রকাশ্যে জুয়া খেলেন মহিলারাও, বাংলার বিচিত্র এই মেলার সঙ্গে জুড়ে আছেন বেহুলা-লখিন্দর!

Malda Juari Mela: প্রতিবছর মুলো ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে মালদহের মোকাতিপুরে বেহুলা নদীর তীরে এই মেলার আয়োজন করা হয়

শান্ত নিবিড় নদীতীর, তীরপ্রান্তে আমগাছের ছায়ামাখা মাঠ। দান পড়ছে, ভাগ্য খুলছে, দান পড়ছে হা-হুতাশ ভেসে আসছে। শয়ে শয়ে বৃত্তে মানুষ বসে জুয়া খেলছেন একনিষ্ঠভাবে। রয়েছে কিশোর, যুবতী, সদ্য তিরিশের গৃহবধূ, তাঁর স্বামী, তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি, প্রেমিক-প্রেমিকা, পাড়ার মাস্টার, কলেজের ছাত্র, সবার ধ্যান জ্ঞান জুয়া। আর এই বিশাল গ্রাম্য ক্যাসিনোর পাহারায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ। চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়, আটপৌরে বাংলার এক মেলার স্বাভাবিক, চিরাচরিত দৃশ্য। এই মেলায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলেন আট থেকে আশি সকলেই। মহিলারাও অবাধে জুয়া খেলেন এখানে। নির্বিবাদে যাতে জুয়া খেলা যায় সেই নিরাপত্তা দিতে হাজির থাকেন পুলিশ কর্মীরাও। বাংলার এমন অদ্ভুতুড়ে মেলার কথা জানেন না অনেকেই, তবে মালদহের এই মেলার ইতিহাস সুপ্রাচীন।

পাল্লা দিয়ে মহিলারা জুয়ার বোর্ডে টাকা দেন। বিশাল আম বাগান জুড়ে সকাল থেকে চলে বিভিন্ন রকমের জুয়া খেলা। যার যেখানে পছন্দ নিজের ইচ্ছেমতো জুয়া খেলতে বসে যান সকলে, বাধ সাধেন না কেউই। প্রতিবছর মুলো ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে মালদহের মোকাতিপুরে বেহুলা নদীর তীরে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলাকে স্থানীয়রা ডাকেন জুয়াড়ি মেলা বা লেউড়ির মেলা নামে।

স্থানীয়দের কথায়, প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে এই জুয়াড়ি মেলা। আজও বহাল তবিয়েতে তা চলেছে। মালদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এই মেলায় আসেন। মূলো ষষ্ঠী পুজোর আয়োজন হয় মালদহের মোকাতিপু সংলগ্ন বেহুলা নদীর তীরে। আমবাগানের নীচে চলে পুজো, আর দিনভর চলে জুয়া খেলা। জমজমাট সেই মেলায় জুয়ার রমরমা দেখে তাজ্জব হতে হয়।

আরও পড়ুন- ব্রিটিশ শাসিত কলকাতাতেই প্রথম বইমেলা! পুরোভাগে ছিলেন রবি ঠাকুর, নীলরতন সরকাররা

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বহু প্রাচীনকালে যখন মহিলারা দূর থেকে এই পুজো দিতে আসতেন, তাঁদের সঙ্গে আসতেন কিছু পুরুষ। মহিলারা সারাদিন পুজোর আয়োজন করতেন, স্নান করতেন, আর এই ফাঁকা সময়টা কাটাতে পুরুষসঙ্গীরা মাততেন জুয়া খেলায়। আরেক মতে, লেউড়ির মেলার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে প্রাচীন বেহুলা নদী। মনসামঙ্গল কাব্যে বেহুলা তাঁর মৃত স্বামী লখিন্দরকে ভেলায় করে এই নদীর উপর দিয়েই নিয়ে গিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস। তাই এই নদীর নাম বেহুলা। পুরাতন মালদহের মোকাতিপুরে জুয়াড়ির ঘাট ছিল। এই ঘাটেই এক জুয়াড়িকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন বেহুলা। তখন থেকেই এখানে মুলোষষ্ঠী উপলক্ষ্যে জুয়াড়ি মেলা শুরু হয়।

এখনও প্রাচীন রীতি মেনে এই মেলায় মহিলা পুরুষ সকলেই জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন। বেহুলা নদীর তীরে লক্ষ্মী প্রতিমার পুজো করেন মহিলারা। পরিবারের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মহিলারা পুজোয় অংশ নেন। এখানের বিখ্যাত প্রসাদে দেওয়া হয় লেউড়ি মিষ্টান্ন। সকাল থেকে যে জুয়ার আসর বসে তা শেষ হয় সন্ধ্যা নামতেই।

More Articles