২০০ পলিথিন ব্যাগ দিয়ে পোশাক! অসম্ভবকে যেভাবে সম্ভব করলেন ২২ বছরের যুবতী
Garments Made From Recycled Plastic Bags: একটি কাঁথায় নকশা করতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগে এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম হাতের কাজের প্রয়োজন পড়ে৷
ভারতের ২৫টি রাজ্যে একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। তবে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার পরেও, ব্যাপক পরিমাণে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার চলছে দেশজুড়ে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (CPCP) প্রতিবেদন অনুসারে ৩৪,৬৯,৭৮০ টন প্লাস্টিক উত্পাদন হচ্ছে এই দেশে। আগামী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলেই আশঙ্কা। এই এত এত প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথিবীর টুঁটি টিপে ধরবে তা তো জানা কথাই, কিন্তু সমাধানের পথ কী? প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে বহু কিছুই তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহার করে নানা কিছু তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন বহু মানুষ। তাবলে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কাপড়! কীভাবে সম্ভব?
প্লাস্টিক দূষণ রুখতে, তার পুনর্ব্যবহারের এক অভাবনীয় পন্থা আবিষ্কার করেছেন ২২ বছর বয়সী সারা লাখানি। গাদচিরোলিতে জন্ম সারার। প্লাস্টিক দিয়ে অভূতপূর্ব সূচিকর্মের জন্ম দিয়েছেন সারা। সুতো তৈরির জন্য পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করেন সারা। প্লাস্টিকের তৈরি সেই সুতো দিয়ে বিভিন্ন নকশা বোনেন শিল্পীরা।
সারা লাখানি তাঁর তৈরি পোশাকের সংগ্রহের নামই দিয়েছেন 'ট্র্যাশ অর ট্রেজার'। ২০২২ সালে ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে প্রদর্শিত হয় তাঁর এই সংগ্রহ৷ ২০০ টিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করেছিলেন সারা, তাঁর এই পোশাক নির্মাণে৷
আরও পড়ুন- মোদির পরনে প্লাস্টিক বোতলের তৈরি জ্যাকেট! বিচিত্র পোশাকের নেপথ্যে রয়েছে যে কাহিনি
মহারাষ্ট্রের ছোট্ট শহরেই বেড়ে ওঠা সারার। সবসময়ই গাছ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকর্ষণ করত সারাকে। পাশাপাশি আরও একটি গুরুতর বিষয়ে সচেতন ছিলেন সারা। সারার বাবা কাজ করতেন ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগে। প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর বিবিধ ঘটনা দেখে ছোট থেকেই সারা বুঝেছিলেন পরিবেশের উপর এই প্লাস্টিক বর্জ্যের বিধ্বংসী প্রভাব ঠিক কতখানি ভয়াবহ।
আরও পড়ুন- মাতৃদুগ্ধেও প্লাস্টিক! রোজ যাচ্ছে শিশুর পেটে! ভয়াবহ তথ্য এবার সামনে
তাই যখন ঠিক করলেন ডিজাইনার হবেন, পোশাকের সংগ্রহের নকশা ভাবার সময়ই ঠিক করে নিয়েছিলেন কী করতে চান। সারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে কাজ শুরু করার সময় থেকেই তিনি জানতেন যে নকশাই করবেন না কেন তাতে টেকসই উপকরণ ব্যবহার করতে হবে৷
সূচিকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন সারা। সবটার পরে কাঁথাকেই এই নকশা প্রয়োগের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী বলে মনে হয় তাঁর। একমাত্র কাঁথায় নকশা করতেই সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এমব্রয়ডারদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করেন তিনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই প্লাস্টিকের সুতো দিয়ে নকশা সেলাইয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন, হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখেন। একটি কাঁথায় নকশা করতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগে এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম হাতের কাজের প্রয়োজন পড়ে৷
সারার মতে নতুন প্রজন্মের মানুষ জানেন টেকসই হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তারা এও জানেন, কীভাবে আমাদেরই বিভিন্ন কার্যকলাপ পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছে। কিন্তু সমাধানের পথটি অনেকেরই অজানা। তাই সৃজনশীলতা আর সচেতনতাকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছেন সারা। প্লাস্টিকের বর্জ্যকে করে তুলতে চেয়েছেন নান্দনিক, নরম এবং সর্বোপরি, পরিবেশ বান্ধব।