ইলেকট্রিক শক, সাদা কাগজে সই! ভয়াবহ অত্যাচারের অভিযোগ পার্লামেন্ট কাণ্ডের অভিযুক্তদের
Parliament Security Breach Case: সম্প্রতি পাঁচ অভিযুক্তকে পাটিয়ালা হাউজ কোর্টে তোলা হয়। বিচারবিভাগীয় হেফাজতে তাঁদের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে বলেও নালিশ জানিয়েছেন তাঁরা।
সাংসদভবনে নিরাপত্তা ভেঙে অনুপ্রবেশের মামলায় এবার হাতে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযুক্তদের সঙ্গে বিরোধী দলের যোগ প্রমাণ করার বিপুল চেষ্টা চলছে প্রতিমুহূর্তে। আদালতে দাঁড়িয়ে এবার তেমনই অভিযোগ জানিয়ে বসলেন অভিযুক্তেরা। ধৃতরা জানিয়েছে, বিচারবিভাগীয় হেফাজতে নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের। ডিসেম্বর মাসের ওই ঘটনায় মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলায় দায়ের করা হয়েছিল মামলাও। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকে আদালতে তোলা হলে সেখানে উঠে আসে বিস্ফোরক অভিযোগ। আদালতে বিচারকের সামনে তারা জানিয়েছে, তাদের দিয়ে অপরাধ স্বীকার করার জন্য নানা ধরনের অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছে তাঁদের উপর। এমনকী দেওয়া হয়েছে ইলেকট্রিক শকও।
গত ডিসেম্বর মাসে ১৩ তারিখ, শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন হঠাৎ করেই সংসদভবনের নিরাপত্তা ভেঙে সংসদের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল একদল দুষ্কৃতি। গ্যালারি থেকে সোজা ঝাঁপ দেয় দু'জন সাংসদদের দিকে। হাতে ছিল হলুদ ধোঁয়া ছড়ানো বোমার ক্যানিস্টার। বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন। সেই ঘটনায় অন্তত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে আনলফুল অ্যাক্টিভিটি প্রিভেনশন অ্যাক্ট (UAPA) এর আওতায় মামলা করা হয়। সম্প্রতি পাঁচ অভিযুক্তকে পাটিয়ালা হাউজ কোর্টে তোলা হয়। সেখানে অভিযুক্তরা জানিয়েছেন, তাঁদের দিয়ে জোরজাবস্তি করে অভিযোগ স্বীকার করানো হয়েছে। বিচারবিভাগীয় হেফাজতে তাঁদের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে বলেও নালিশ জানিয়েছেন তাঁরা। মারধর, নির্যাতনের পাশাপাশি তাঁদের ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। জোর করে সাদা কাগজে সই করিয়ে তাঁদের দিয়ে অপরাধ স্বীকার করানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: লোকসভা হামলার ঘটনায় এবার গ্রেফতার পুলিশ-পুত্র, কোথায় দাঁড়িয়ে তদন্ত?
ওই পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছে মনোরঞ্জন ডি, সাগর শর্মা, ললিত ঝাঁ, অমোল শিন্ডে ও মহেশ কুমাবাত। ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত দায়রা বিচারক হরদীপ কৌরের কাছে আবেদন জানিয়েছে তাঁরা। যেখানে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের পলিগ্রাফ, নারকো ও ব্রেন ম্যাপিং পরীক্ষার কথা। যার মাধ্যমে তাঁদের বারংবার চাপ দেওয়া হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগের কথা তাঁরা যাতে স্বীকার করে নেন। শুধু কি তাই, তাঁদের জোর করে অন্তত ৭০টি সাদা পাতার বিভিন্ন জায়গায় সই করানো হয়েছে। অপরাধ স্বীকার করার জন্য ইলেকট্রিক শক দেওয়া ও নানা ধরনের নির্যাতন চলেছে তাঁদের উপর বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। আবেদনে অভিযুক্তরা এ-ও জানান যে, তাঁদের প্রত্যেককে বর্তমান ও পুরনো মোবাইল নম্বরগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনকী বর্তমান নম্বরের সিম কার্ড ইস্যুর জন্য প্রত্যেককে বিভিন্ন টেলিকম পরিষেবা সরবরাহকারী অফিসে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী জোরজাবস্তি করে তাঁদের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের লগইন ও পাসওয়ার্ড জেনে নিয়েছে পুলিশ। দিতে বলা হয়েছে ফোনের পাসওয়ার্ডও।
সাম্প্রতিক এই শুনানির পর বিচারক কৌর ৬ অভিযুক্তের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ আরও খানিকটা বাড়িয়েছে। আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে তাঁদের ফের। আগামী ১৭ জানুয়ারি ওই পাঁচ অভিযুক্তের আবেদন শোনা হবে বলে জানিয়েছে আদালত। দিল্লি পুলিশের কাছে ইতিমধ্যেই তলব করা হয়েছে জবাবও। কিছুদিন আগেই শোনা যায়, অভিযুক্তদের পাঁচজন পলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য সম্মতি দিয়েছেন। তার পর অভিযুক্ত সাগর শর্মা ও মনোরঞ্জনও নারকো বিশ্লেষণ ও ব্রেন ম্যাপিং পরীক্ষায় সম্মতি দেন বলেও জানা যায়। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে নীলম আজাদ এই সমস্ত পরীক্ষা দিতেই আপত্তি জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন:ভগৎ সিংয়ের ভক্ত! সংসদে ধোঁয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড কে এই কলকাতার শিক্ষক?
গত ১৩ ডিসেম্বর, সংসদভবনের নিরাপত্তা বলয় ডিঙিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেখানে এসে তাঁরা হাঙ্গামা শুরু করে দেন। পরে তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে ধরা হয়। গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসে দিল্লির পুলিশ। একে একে ওই মামলায় জড়িত সন্দেহে অন্তত ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় নাম জড়ায় কর্ণাটকের মাইসুরুর বিজেপি বিধায়ক প্রতাপ সিমহার। জানা যায়, তাঁর ডিউটি পাস ব্যবহার করেই সংসদের ভিতরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। অনেকেই এই ঘটনাটিকে 'সুপরিকল্পিত' ষড়যন্ত্র বলে চিহ্নিত করে। তবে সেই ঘটনায় এবার বড়সড় অভিযোগের মুখে পড়ল দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্তদের আদালতের বলা কথা অনুযায়ী, সত্যিই কি এই ঘটনাকে বিরোধীদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। সেই জন্যই অভিযুক্তদের কাছ থেকে রাতারাতি স্বীকারোক্তি বের করার ধূম। অভিযুক্তরা যা বলছে, তা-ই বা আসলে কতটা সত্যি! একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সাম্প্রতিক এই ঘটনা।