বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট যান জেটে চড়ে, জেনে নিন গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ
ভারত তথা এশিয়ার ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় মুকেশ আম্বানির পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন গৌতম আদানি। বছরভর দুই শিল্পপতির মধ্যে টক্কর চলে জোরদার। তবে গত সপ্তাহের শেয়ারসূচক বলছে, এই মুহুর্তে আম্বানিকে টপকে শীর্ষে পৌঁছে গেছেন গৌতম আদানি। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরেও আদানির সম্পত্তির মূল্য হয়েছিল আম্বানিদের। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ' রিয়েলটাইম ডেটা নেটওয়ার্থ' - এর হিসেব বলছে বিশ্বের ১১তম ধনী ব্যক্তির জায়গাটি বর্তমানে আদানির দখলে। সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যমের সুবাদে মুকেশ আম্বানী ও তাঁর পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই জানা। কিন্তু খানিক অজানাই রয়ে গিয়েছে গৌতম আদানির জীবনযাত্রা। চলুন জেনে নি তাঁর ব্যাপারে খুঁটিনাটি তথ্য--
আদানির আয়ের পরিমাণ
গুজরাটকেন্দ্রিক আদানি গ্রুপ মূলত বন্দর সংক্রান্ত ব্যবসার সাথে যুক্ত হলেও আরও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন,রসদ, কৃষিক্ষেত্র, রিয়েল এস্টেট, অর্থিক পরিষেবা, গ্যাস বিতরণ, প্রতিরক্ষা ব্যবসা ও বিমানবন্দরের মত একাধিক ব্যবসার মালিক গৌতম আদানি।সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী আদানির সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৮৯.৫ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬.৭২ লাখ কোটি টাকা)। সেখানে অম্বানীর ৮৯.৪ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬.৭১ লাখ কোটি টাকা)। গত বছরে আম্বানির তুলনায় কয়েকগুন সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে আদানির। সম্পত্তি বৃদ্ধির হার ছাপিয়ে গিয়েছে জেফ বেজোস ও এলন মাস্ককেও। করোনা আবহেও শিল্পপতি গৌতম আদানি ও তাঁর পরিবার দৈনিক আয় করেছেন ১০০২ কোটি টাকা। তাঁর মাসিক আয় ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।গত এক বছরে, আদানি টোটাল গ্যাসের ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৬ শতাংশ। মূল সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজের বৃদ্ধি ৯০ শতাংশ, আদানি ট্রান্সমিশনের বৃদ্ধি ৭৯ শতাংশ, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জোন লিমিটেডের বৃদ্ধির পরিমাণ ৫২ শতাংশ। আদানি গ্রিন এনার্জির বৃদ্ধির পরিমাণ ১২ শতাংশ। তবে, গত বছর এই সংস্থা বৃদ্ধি পেয়েছিল ৫০০ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুন-রেলের ঘোষক থেকে বলিউডের ভয়েস আর্টিস্ট! অপমানের যোগ্য জবাব দিয়ে সাফল্যের শিখরে এক ‘মহিলাকণ্ঠী’
তবে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আদানির সাথে আম্বানির মূল চারিত্রিক পার্থক্যটি হল রিলায়েন্স প্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানি যার বর্তমান দায়িত্বে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি। কিন্তু আদানি গ্রুপ নিজে হাতেই প্রতিষ্ঠা করেছেন গৌতম আদানি। শূন্য থেকে গগণচুম্বী সাফল্য এসেছে তাঁর হাত ধরেই। আদ্যোপান্ত মৃদুভাষী আদানি ধনপতি হওয়া সত্ত্বেও ছিমছাম জীবনযাপন করতেই পছন্দ করেন। তবে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ও জীবনযাত্রাও সাধারণ মানুষকে হতবাক করবে।
বিভিন্ন বাড়ির খুঁটিনাটি
গুজরাট, ব্যাঙ্গালোর, মুম্বই সহ বিশ্বের একাধিক জায়গায় বাড়ি রয়েছে গৌতম আদানির। ২০২০ সালে গুরুগ্রামে ৪০০ কোটি টাকার ‘শান্তিবন’ নামক বাড়ি কিনেছেন তিনি। সব রকমের অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে শান্তিবন বাসভবনে। ১৫৪ টির বেশি সোলার প্যানেল রয়েছে এই বাড়িতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতশক্তি সরবরাহের জন্য। গুজরাটের গান্ধীনগরে পাটিয়াল বাংলো নামক আরও একটি বাসভবন রয়েছে তাঁর। তবে তিনি এখন গুরুগ্রামের বাড়িতেই থাকেন।
আদানির গাড়ি ও প্রাইভেট জেটের সম্ভার
আদানির সংগ্রহে থাকা গাড়ির সম্ভারও যথেষ্ট চোখ ধাঁধানো। ৭৩ লক্ষ টাকা বাজার মূল্যের অডি কিউ সেভেন, আড়াই কোটি টাকার বিএমডাবলু সেভেন সিরিজ রয়েছে তাঁর। এখানেই শেষ নয় ফেরারি ক্যালিফোর্নিয়া, রোলস রয়েস ঘোস্ট ইত্যাদি বহু নামিদামী একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন তিনি।
দুনিয়ার অন্যান্য বিলিয়নারের মতোই বেশ কয়েকটি প্রাইভেট জেটও রয়েছে তাঁর। ২০০ কোটি টাকারও বেশি ২০০৯ বোমবারডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৫ , এম্ব্রায়ার লেগাসি ৬৫০ এবং ২০০৭ হকার ৮৫০ এক্সপির মত বহুমূল্যের জেট রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। এছাড়া নিজস্ব হেলিকপ্টারও রয়েছে তাঁর যা মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ তাঁর ক্যাবিনেটের একাধিক মন্ত্রীও ব্যবহার করেন।
শোনা যায় তিনি বাড়ি থেকে এয়ায়পোর্টে যেতেও নিজের হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। প্রতিদিন যে স্যুট পরেন তার প্রতিটির মূল্যও লক্ষাধিক। ২০১৩ সালে ছেলে করণ আদানির বিয়ের অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিলেন তা এখনও পর্যন্ত ভারতের হেভিওয়েট বিয়েগুলির মধ্যে অন্যতম।