গ্রামে প্রথমবার ভোটগ্রহণ, উৎসবের মেজাজে গুজরাতের 'মিনি আফ্রিকা'

Gujarat Election 2022: ভারতের বুকে এক টুকরো আফ্রিকা! গুজরাতের ভোটে সেই গ্রামের বাসিন্দারাই আনন্দে মেতে...

মাথার চুল কোঁকড়ানো, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। বাঘছাল রঙের পোশাক, মাথায় পট্টি, হরেক রকম জারিজুরি। কারও কারও চোখে-মুখে সাদা রঙ করা, যেন মুখোশ পরে আছেন। এমন সাজেই মানুষগুলো ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এসেছেন। হাসিমুখে ইভিএমের বোতাম টিপলেন, সই করলেন, প্রত্যেকের আঙুলে কালিও পরানো হল। হিংসা, আগুন, বোমাবাজির কোনও জায়গা নেই, মানুষগুলো হাসছেন মহানন্দে। বৃহস্পতিবার গুজরাতের জাম্বুর গ্রামে এমন ছবিই দেখা গেল দিনভর। সেখানকার মানুষরা ভারতীয় হলেও প্রথমে খানিক খটকা লাগবে। এরকম সুঠাম গঠন, এমন চেহারা তো ভারতীয়দের থেকে খানিক আলাদাই। জাম্বুরে পা দিলেই আমার আপনার আফ্রিকাকে মনে পড়তে বাধ্য। এবার মানুষগুলোকে চেনা চেনা লাগছে।

আরও পড়ুন : আবারও নির্বাচনের দামামা, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেমন লড়ছে বিজেপি থেকে বিরোধীরা 

গুজরাতের এই ‘মিনি আফ্রিকা’ গ্রামটি প্রথমবার ভোটগ্রহণ পর্বে মেতে উঠল। জাম্বুরবাসীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা তৈরি করেছিল নির্বাচন কমিশন। প্রথমবার ভোট দেওয়ার মুহূর্ত স্মরণীয় করার জন্য আগের রাত থেকেই জাম্বুরে শুরু হয় উন্মাদনা। গান, নাচের সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে সংবাদ সংস্থা এএনআই। আগুন সেখানেও জ্বলছে বটে, সেটা হিংসার নয়। আনন্দের। উল্লাসের। গণতন্ত্র নামক উৎসবের।

জুনাগড় জেলায়, গির অভয়ারণ্যের কাছেই অবস্থিত এই জাম্বুর গ্রাম। এখানেই বসবাস সিদ্দি প্রজাতির মানুষদের। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মুসলিমপ্রধান এই জাতির উৎসস্থল ভারতে নয়। এদের পূর্বপুরুষের বসতি ছিল আফ্রিকা। এই সম্পর্কে কথা বলতে গেলে ঐতিহাসিকরা আমাদের নিয়ে যান আজ থেকে বেশ কয়েকশো বছর আগে। আফ্রিকা থেকে কালো চামড়ার মানুষদের দাস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। মনে করা হয়, পর্তুগিজরা সেরকমই আফ্রিকানদের দাস বানিয়ে ভারতে নিয়ে আসে। তখন থেকেই এই সম্প্রদায়ের মানুষদের যাত্রা শুরু। ভারতে গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োগ শুরু করেছিলেন যিনি, সেই মালিক অম্বরও এই সিদ্দি প্রজাতির মানুষ ছিলেন। তাঁদেরই একটি অংশকে পাঠানো হয় গুজরাতের জুনাগড়ে। সেখানকার নবাবের দেহরক্ষী হিসেবে, প্রাসাদের কাজকর্ম করতেন এই সিদ্দিরা। পরবর্তীকালে তাঁরাই একটু একটু করে আশেপাশের অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। জাম্বুরের সিদ্দিরা সেই বিগত দিনের সাক্ষ্যই বহন করে আনছেন।

আরও পড়ুন : আবারও গেরুয়া ঝড় দেখা যাবে রাজ্যে? প্রথম দফার পর অপেক্ষায় গুজরাতবাসী

ঠিক কবে আফ্রিকা থেকে ভারতে এসেছেন তাঁরা? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না গুজরাতের সিদ্দি প্রজাতির মানুষেরা। চেহারা বাদ দিয়ে, আফ্রিকার সঙ্গে আর কোনও যোগসূত্র নেই। গড়গড় করে গুজরাতি বলেন সবাই। ভারতীয় আদবকায়দা একেবারে মনের মধ্যে বসে গিয়েছে। বুক চিতিয়ে বলেন, “আমরা ভারতীয়।” তবে পূর্বপুরুষের মর্যাদা রাখতে কিছু প্রথা এখনও মেনে চলেন তাঁরা। নিজেদের গোষ্ঠীর বাইরে কাউকে বিয়ে করা তাঁদের মানা। পাশাপাশি আছে সিদ্দিদের নিজস্ব লোকনৃত্য ধামাল। যার সঙ্গে আফ্রিকার কোনও অখ্যাত গ্রামের লোকনৃত্যের মিল পেলেও পেতে পারেন। এসব বাদ দিয়ে, দারিদ্র্যে, আনন্দে, কান্নায়, ভারতীয়ত্ব বজায় রেখে দিন কাটছে জাম্বুরের সিদ্দিদের।

সেই সিদ্দিদের গ্রাম জাম্বুরে প্রথমবার বিশেষ বুথের আয়োজন করল নির্বাচন কমিশন। তাই সকাল থেকেই ভোট উৎসবে মেতে উঠলেন আট থেকে আশি। নিজেদের চিরাচরিত ‘আফ্রিকান’ পোশাকে সম্পন্ন করলেন ভোটদান পর্ব। সব মিলিয়ে অখ্যাত এই গ্রামটির মধ্যে এখন খুশির হাওয়া।

More Articles