চেনা মুখই অচেনা! ভয়াবহ রোগের শিকার বহু কোভিড আক্রান্ত, উপসর্গ?
Long Covid Facial Blindness: মুখ চিনতে পারার অক্ষমতার এই স্নায়বিক ব্যাধি আসলে ঠিক কী? কোভিডের সঙ্গেই বা এর কী সম্পর্ক?
আত্মীয়ের মুখ চিনতে পারছেন না। যার সঙ্গে সকাল বিকেলের যোগ, সেই নিকটতম মানুষটিকেই চেনা যাচ্ছে না হঠাৎ। নাহ, মানুষটির কোনও বদল হয়নি, বদল হয়েছে আপনার। বদল বললেও ভুল, এক জটিল রোগে পড়েছেন আপনি। ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন? ভুগেছিলেন তীব্র? তাহলে এক মারাত্মক রোগ আজীবনের মতো গেঁড়ে বসতে পারে দেহে। মৌখিক অন্ধত্ব! শুনতে যতটা ভয়াবহ, লক্ষণ ততটাই গুরুতর। খুব চেনা মানুষকে দেখেও কিছুতেই চিনতে না পারা। একটি নতুন সমীক্ষা বলছে দীর্ঘ COVID-19 সংক্রমণের কারণে কিছু মানুষের প্রোসোপাগনোসিয়া দেখা দিতে পারে। সহজ কথায় যে রোগটিকেই বলে 'মৌখিক অন্ধত্ব' বা ফেসিয়াল ব্লাইন্ডনেস।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক এই মৌখিক অন্ধত্বকে একটি স্নায়বিক রোগ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। মুখ চিনতে পারার অক্ষমতার এই স্নায়বিক ব্যাধি আসলে ঠিক কী? কোভিডের সঙ্গেই বা এর কী সম্পর্ক? কর্টেক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, কোভিডে ভুগেছেন এমন অনেক ব্যক্তির দেহেই এই মৌখিক অন্ধত্ব দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘসময় কোভিডে ভোগার পরে মুখ এবং দিক চিনতে সমস্যা হচ্ছে আক্রান্তদের।
২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন অ্যানি নামে ২৮ বছর বয়সী এক মহিলা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এর আগে মুখ চিনতে কোনও সমস্যা হয়নি তাঁর। করোনাভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার মাস দুয়েক পরে, পরিবারের নিকটতম সদস্যদের চিনতে পারছিলেন না অ্যানি! বন্ধু, আত্মীয়দের মুখ দেখে বুঝতেই পারছিলেন না তিনি আসলে কে?
আরও পড়ুন- নিরীহ নয় H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা, দেশে ফিরছে কোভিডের আতঙ্ক? উপসর্গ চিনবেন যেভাবে
অ্যানি নিজেই জানিয়েছেন, এক পর্যায়ে তিনি নিজের বাবার মুখ অবধি চিনতে পারছিলেন না। বাবার সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বাবার ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে অ্যানি দেখেন বাবার গলাতে কথা বলছেন অন্য কেউ! আসলে তাঁকে কিন্তু ডেকেছিলেন তাঁর বাবাই। অথচ বাবার গলার স্বর শুনে চিনতে পারলেও মুখ চিনতে পারছিলেন না তিনি। তিনি গবেষকদের জানিয়েছেন, এখন মানুষ চেনার জন্য গলার আওয়াজের উপরই নির্ভর করেন অ্যানি।
২৮ বছর বয়সী এই যুবতী কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে দিক নির্ণয় করতেও সমস্যায় পড়েন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামান্য মুদিখানার দোকানটিতে যেতেও ডানদিক-বাঁদিক গুলিয়ে ফেলেন। পার্ক করা গাড়িটি খুঁজে পেতেও হয়রান হয়ে যান। রোজ যে যে জায়গায় যান, সেখানকার দিক মনে রাখতেও ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে তাঁর৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের গবেষকরা লং কোভিড আক্রান্ত ৫৪ জনের উপর করা সমীক্ষার প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে দেখতে পেয়েছেন, আক্রান্ত বেশিরভাগেরই মুখ চিনতে পারা এবং দিক নির্ণয় করার ক্ষমতা কমেছে। লং কোভিড বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে প্রাথমিক সংক্রমণের পরে ১২ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভাইরাসের লক্ষণগুলি বজায় থাকে।
COVID-19 যে মস্তিষ্কের ক্ষতি করেছে এ একপ্রকার প্রমাণিত। দেখেও চিনতে না পারার মতো গুরুতর নিউরোসাইকোলজিকাল বৈকল্য তৈরি করতে পারে করোনাভাইরাস। দীর্ঘ কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা আর অস্বাভাবিক বিষয় নয়, জানাচ্ছেন গবেষকরা। গবেষকরা বলেছেন, কোভিডের কারণে মুখ চিনতে না পারা এবং নেভিগেশন বা দিশা নির্ণয়ের সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে।