মাদ্রাসা ভাঙা নিয়ে তুঙ্গে অশান্তি! যেভাবে উত্তাপ বাড়ছে দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে
Haldwani Violence, Uttarakhand: বৃহস্পতিবার বুলডোজার দিয়ে ওই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মহিলা-সহ এলাকার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।
সরকারি জমির উপর থেকে বেআইনি জবরদখলকারীদের উৎখাত করা নিয়ে অশান্তি। আর সেই অশান্তি হিংসার ঘটনার রূপ নিতে দেরি হল না দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছলো, যে হিংসায় মদত দিতে দেখা গেলেই শুট অ্যাড সাইটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানে। এখনও পর্যন্ত হিংসার ঘটনায় মোট পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। শতাধিক পুলিশ-সহ জখম অন্তত ২৫০।
দিন কয়েক আগেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পাশ হয়েছে উত্তরাখণ্ডের বিধানসভায়। অখণ্ড দেশে অভিন্ন বিধি আনতে চায় বিজেপি। আর তাতে প্রথম উত্তরাখণ্ড। রামমন্দির তৈরির কাজ শেষ। সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে অখণ্ড দেশ, অভিন্ন বিধির মতো একাধিক ভোটমুখী পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির সামনে। এর মধ্যেই বিরাট অশান্তি লেগে গেল দেবভূমিতে।
হলদওয়ানির বনভুলপুরা এলাকার একটি নাজুল জমির উপরে অবস্থিত একটি অবৈধ মাদ্রাসা ও তার সংলগ্ন মসজিদ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। সেগুলির অবস্থাও বিশেষ ভালো ছিল না বলেই খবর। তবে বৃহস্পতিবার বুলডোজার দিয়ে ওই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মহিলা-সহ এলাকার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় তাদের। পুলিশ, পৌরসভার কর্মী ও সাংবাদিকদের দিকে ঢিল ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। কুড়িটির বেশি মোটরসাইকেল ও পুলিশের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা।
আরও পড়ুন: বল্লভভাই বড় না অম্বেদকর! সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে যে অশান্তি দেখছে দেশ
ক্রমে রণক্ষেত্রের রূপ নেয় পরিস্থিতি। স্থানীয় থানা ঘেরাও করে শুরু হয় ভাঙচুর। এমনকী থানার ভিতরে পুলিশদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। ক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া পাথরে অসংখ্য মানুষ জখম হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। ইতিমধ্যেই এলাকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে কার্ফু। শুক্রবার বন্ধ রাখা হয় স্থানীয় সমস্ত স্কুল ও কলেজ। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপত্তরগুলিও বন্ধ। যারা হিংসা ছড়িয়েছে, তাদের দেখলেই গুলি চালানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
হঠাৎ করেই যে ওই মাদ্রাসা-মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়, তেমনটা কিন্তু নয়। আগেই জারি করা হয়েছিল নোটিস। যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিক রিচা সিং জানিয়েছেন যে হলদোয়ানিতে সরকারি জমিতে বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছিল মাদ্রাসা। সেইসঙ্গে আরও একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। যে কাঠামো দেখতে অনেকটা মসজিদের মতো। শনিবার রাতেই সেগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি ভাঙতে বৃহস্পতিবার আসে হলদোয়ানি পুরনিগম, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের যৌথ দল। তিনি জানিয়েছেন, যখন বেআইনি কাঠামো ভাঙতে যায় যৌথ দল, তখন হাঙ্গামা শুরু করে একদল উত্তেজিত জনতা।
সেই অশান্তি মুহূর্তে বিরাট আকার নেয়। ঘটনার জেরে ওইদিন সন্ধেতেই জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এলাকার শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রশাসনকে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অতিরিক্ত পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। ধামি জনসাধারণের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, যারা হিংসা ছড়াবে, তাদের দেখলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকার। নৈনিতালের জেলাশাসক বন্দনা সিং জানান, এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব রাস্তা।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট সম্পত্তি ধ্বংস করার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং আদালতের নির্দেশ মেনেই ওই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা নিয়ে প্রতিরোধ জানিয়ে এসেছেন উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দারা। তবে তার পরোয়া না করেই রাজ্যের বিধানসভায় ওই আইন পাশ করে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। প্রাচীন ইসলামিক নিদর্শনের ভিতর থেকে হিন্দুত্বের অস্থিত্ব খোঁজার যে চেষ্টা, তা অনেকদিন ধরেই শুরু হয়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে। জ্ঞানবাপী থেকে তাজমহল বাদ পড়েনি কিছুই। বহু ইসলামগন্ধী জায়গার নাম বদলে ফেলা হয়ে রাতারাতি। ইলাহাবাদ থেকে আলিগড়, নাম বদলেছে বহু প্রাচীন ঐতিহ্যশালী শহর, নগর, রেলস্টেশনের নাম। অসমে সমস্ত মাদ্রাসা-র নামই বদলে ফেলা হয়েছে একেবারে।
আরও পড়ুন: আবারও যুদ্ধের ছায়া? জাপানের এই দ্বীপে কেন ঘনিয়ে উঠছে অশান্তির মেঘ?
উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতায় বিজেপি সরকার। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী পুষ্করের রাজনৈতিক জীবনের শুরু অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের হাত ধরে। বারবারই নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমস্ত হিন্দুত্ববাদী সিদ্ধান্তের অন্ধ সমর্থক হিসেবে দেখা গিয়েছে পুষ্করকে। ফলে সেই পুষ্করের রাজ্যে মাদ্রাসা ও মসজিদ ভাঙার ঘটনায় অনেকেই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি খুঁজে পেয়েছেন। যদিও প্রশাসনের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও বিশেষ গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক দায়দায়িত্বের জায়গা থেকেই ওই নির্মাণ দুটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল আদালতের নির্দেশে।