বন্দি ইহুদিদের ছাড়তে নতুন শর্ত হামাসের, ইজরায়েলের গাজা-দখলের দাবি আদতে কতখানি সত্যি?
Israel-Hamas War: একদিকে যখন গাজাকে হামাসশূন্য বলে ঘোষণা করছে ইজরায়েল, সেখানে ৭০ জন অপহৃত ইজরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে যুদ্ধশান্তির শর্ত রাখতে চাইছে হামাস।
একদিকে গাজা দখলের আনন্দে আত্মহারা নেতানিয়াহু সেনা। দীর্ঘ ষোলো বছর পর ফের গাজা দখল করেছে ইজরায়েল, তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যোয়াভ গ্যালান্টের তরফে। তাদের দাবি, এত দিনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে হামাস। অরক্ষিত তাঁদের ঘাঁটি। গাজা ছেড়ে পালাচ্ছে জঙ্গিরা। অন্য দিকে, ইজরায়েল থেকে অপহৃত বন্দিদের ছাড়ার ব্যাপারে ইজরায়েলের দিকে নতুন করে শর্ত ছুড়ে দিল হামাসরা। আসলে চলছেটা কী গাজায়?
গোটা বিশ্বের যুদ্ধবিরতির আহ্বান কার্যত অগ্রাহ্য করে গাজায় আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। হাসপাতাল থেকে শহরের প্রাচীনতম গির্জা, শরণার্থী শিবির- কোনও কিছুকেই ছাড়েনি নেচানিয়াহু বাহিনী। একের পর এক হাসপাতালকে নিশানা করা হয়েছে। চালানো হয়েছে রকেট হামলা। লাগাতার হামলা ও হিংসার দাপটে এখনও পর্যন্ত ১১ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে কেবল শিশু। শহর জুড়ে লাশের পাহাড়। গত আটত্রিশ দিনে এত মৃত্যু দেখেছে প্যালেস্টাইন, যে তাদের জন্য ছোট পড়ছে সমস্ত গণকবরই।
আরও পড়ুন: ইহুদি আগ্রাসনের মুখে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’! কেন নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই প্যালেস্টাইনের?
হামলার পর হামলায় ক্রমশ কোণঠাসা গাজা। তবে কি প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন হামাসও নতিস্বীকারও মুখে। একদিকে যখন গাজাকে হামাসশূন্য বলে ঘোষণা করছে ইজরায়েল, সেখানে ৭০ জন অপহৃত ইজরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে যুদ্ধশান্তির শর্ত রাখতে চাইছে হামাস। তা-ও বরাবরের নয়। মাত্র পাঁচ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির শর্ত রেখেছে হামাস। যাতে ওই ৫ দিনে মানুষ অন্তত নিজের জন্য একচিলতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে পারে গাজার মানুষ।
সেই ৭ অক্টোবর অতর্কিতে ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল হামাস বাহিনী। তার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধঘোষণা করে দেয় নেতানিয়াহু সরকার। তার পর থেকেই লাগাতার ভয়ঙ্কর সব হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গাজার সাধারণ নিরপরাধ মানুষের, শিশুদের। ১১ হাজার মানুষ সেখানে মারা গিয়েছে ইতিমধ্য়েই। দিন কয়েক আগেই চার ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেছিল ইজরায়েল। তবে সেই ফাঁকে হামলার প্রাবাল্য বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল কমপ্লেক্স আল শিফা কার্যত ঘিরে রেখেছিল ইজরায়েলি সেনা। কোনও মতে প্রাণ হাতে করে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তার মধ্যে যেমন অসুস্থ রোগীরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন হাসপাতালকে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলি।
গত কয়েক দিনে হামলার মাত্রা দফায় দফায় বাড়িয়েছে ইজরায়েলি সেনা। এই পরিস্থিতিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে হামাস সেনা। যে কোনও ভাবে হামলার এই ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের হাত থেকে দেশভূমিকে বাঁচাতে ইজরায়েলের সামনে শেষ তুরুপের তাসটাই রাখতে চাইছে হামাস বাহিনী। ইজরায়েলি ফৌজের সঙ্গে সাময়িক সমঝোতার বার্তা দিয়েছে। অন্তত ৫ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে তারা ইজরায়েলকে। তার পরিবর্তে হামাসের কবলে থাকা ৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার শর্ত দিয়েছে তারা। প্রয়োজনে বন্দির সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৭০-ও করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে হামাসের তরফে।
বহু দিন ধরে ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে চলেছে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কাতার। যাবতীয় কথাবার্তা, নেগোশিয়েশন চলে তাদের মাধ্যমেই। সম্প্রতি নাকি ইজরায়েলের সঙ্গে কাতারের মাধ্যমেই কথা বলেছে হামাসরা। দেওয়া হয়েছে নতুন বার্তা। হামাসের অভ্যন্তরীণ আল কাসাম ব্রিগেডের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আনা হয়েছে ওই প্রস্তাব। যেখানে বলা হয়েছে, ওই ৭০ জন পণবন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি তারা। যাদের ছাড়া হবে, তাঁদের মধ্য মহিলা ও শিশু। ইতিমধ্যেই ইজরায়ালের কাছে কাতারের মাধ্যমে এই খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
হামাসের এই প্রস্তাব যদি ইজরায়েল মেনে নেয়, তাহলে ওই পাঁচদিন গাজায় সম্পূর্ণ রকম যুদ্ধ বন্ধ রাখতে হবে। ওই পাঁচটা দিন ইহুদি আগ্রাসনে আহত গাজাবাসীর চিকিৎসা করা হবে। ত্রাণও বিতরণ করা হবে গাজা শহরে। যদি যতদূর জানা যাচ্ছে, হামাসের দেওয়া সত্তর জনের প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নয় ইজরায়েল। ন্যূনতম ১০০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার।
আরও পড়ুন:সন্তানের মৃতদেহও আসবে যে কোনওদিন! রোজ ২০০ লাশকে কাফন পরাচ্ছেন গাজার এই বৃদ্ধ
যুদ্ধবিরতির অনুরোধ তো দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের কাছে করে আসছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আরব দেশগুলি ইজরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। আমেরিকা পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক দিনে নাকি যুদ্ধে হামলার আঁচ কমানোর আর্জি জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এতশত অনুরোধ-উপরোধেও নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি ইজরায়েল। হামাসের এই প্রস্তাবও কি আদৌ মেনে নিতে চাইবে ইজরায়েল সরকার? আদৌ কি পাঁচদিন সময় দেবে তাঁরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজাবাসীকে, সেটাই দেখার।