ভয়াল স্মৃতি উস্কে ফের ফুঁসছে তিস্তা! যে ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে সিকিম
Sikkim Flood: বুধবার রাত থেকেই তিস্তার জল বাড়তে শুরু করে। যেভাবে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে, তাতে তিস্তা বাজার-সহ কালিম্পঙের একাধিক এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে।
ফের ফিরতে চলেছে অক্টোবরের স্মৃতি? ফুঁসছে তিস্তা। ফের ভয়াবহ বিপদের মুখে সিকিম। দিন কয়েক ধরেই উত্তর সিকিমে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ও হড়পা বানে ইতিমধ্যেই কোথাও ভেসে গিয়েছে রাস্তা, কোথাও বাড়িঘর। ইতিমধ্যেই প্লাবিত কালিম্পংয়ের তিস্তা বাজার এলাকা। কালিম্পং হয়ে দার্জিলিগামী রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বুধবার রাত থেকেই তিস্তার জল বাড়তে শুরু করে। যেভাবে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে, তাতে তিস্তা বাজার-সহ কালিম্পঙের একাধিক এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে। চিন্তায় রয়েছেন তিস্তা বাজার এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাও। আতঙ্কে অনেকেই দোকান খোলেননি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। ধস,দুর্যোগে ইতিমধ্যেই নিখোঁজ বেশ কয়েক জন। দু'জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে এর মধ্যেই। মৃতদের পরিবার প্রতি ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং।
তিস্তার জল উঠে পড়েছে রাস্তায়। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার বাসিন্দা যাঁরা, আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদেরও। যে কোনও সময় নামতে পারে ধ্বস। রাগী তিস্তা ফুঁসতে ফুঁসতে এসে যে কোনও সময় গ্রাস করতে পারে লোকালয়। সেই ভয়ে এলাকা ছাড়ছেন তাঁরাও। বৃহস্পতিবারও উত্তর সিকিমে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। ইতিমধ্যেই আকাশভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়েছে একাধিক এলাকায়। উত্তর সিকিমের মঙ্গন, চুংথাং, লাচুং, লাচেন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। বুধবার রাতে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন করে বিপর্যয় নেমে আসে উত্তর সিকিমে। রিম্ভিকখোলার কাছেও একই পরিস্থিতি। যার ফলে বিশেষ ভাবে সমস্যায় পড়েছেন মঙ্গন জেলার বাসিন্দারা। প্রশাসন কোমর বেঁধে উদ্ধার এবং ত্রাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। সেনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও উত্তর সিকিমে মোতায়েন করা হয়েছে। তারা একযোগে কাজও শুরু করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: আটকে আছে দু’হাজার বাঙালি, ত্রাসের নাম সিকিম
দক্ষিণ সিকিমের মল্লি স্টেডিয়ামের উপর দিয়ে জল বয়ে চলেছে। বৃষ্টির জেরে সিকিমের একাধিক এলাকায় পাহাড় থেকে ধস নেমেছে। উত্তর সিকিমে মঙ্গন-এর রাস্তা ধসে গিয়েছে। ডিজঙ্গু এলাকায় যাওয়ার রাস্তা কার্যত নেই। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০টিরও বেশি বাড়ি। প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গনের কাছে পাকশেপ বলে এলাকায় দু’জন এখনও নিখোঁজ একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে, আম্বিথাং এলাকায় তিন জন এখনও নিখোঁজ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংকলাং ব্রিজও। ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য মংশিলা ডিগ্রি কলেজের কাছে জাতীয় সড়কে একটি সিবি মেশিন ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে। দ্রুত ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে একাধিক জায়গায় কাদা, পলি জমেছে। কোনও দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেই কারণে গাড়িগুলিকে ধীরে যেতে বলা হচ্ছে। সকাল থেকেই রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কালিম্পং থেকে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা এই মুহূর্তে জলের তলায়। সেখান দিয়ে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফুঁসে ওঠা তিস্তা নদীর রণমূর্তির জেরে দার্জিলিং থেকে কালেবুং যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তিস্তার জল রাস্তায় এসে পড়ায় বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাও। এ বছর নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ষা প্রবেশ করে কেরলে। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গে বর্ষাও ঢুকে পড়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। তার পর থেকেই বৃষ্টি লেগে রয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। বৃষ্টির জেরে একাধিক এলাকায় হিমালয় পাহাড় থেকে ধস নেমেছে। এদিকে ফুঁসে ওঠা তিস্তা নদীর জেরে যে সব রাস্তা খারাপ হয়ে গিয়েছে, সেগুলি মেরামতের জন্য প্রশাসন উঠে পড়ে লেগেছে। তবে অতিভারী বৃষ্টি জারি থাকায় সেই কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: সেতুর পর সেতু, বাড়িঘর ভাসিয়েও ফুঁসছে তিস্তা! কোন ভুলের মাশুল দিচ্ছে সিকিম?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পঙে অতিভারী বৃষ্টি (৭০ থেকে ২০০ মিলিমিটার) হতে পারে। এর জেরে এই দুই পার্বত্য জেলায় জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে অতিভারী থেকে অত্যধিক ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ১৪ জুন অর্থাৎ শুক্রবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে। দুই পার্বত্য জেলাতেই জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা। শুক্রবার অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে। এই তিন জেলায় জারি থাকবে কমলা সতর্কতা। ১৫ জুন, শনিবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে অতিভারী বৃষ্টি চলতে পারে। সঙ্গে কালিম্পঙে ভারী বৃষ্টি হতে পারে সেদিন। এরপর ১৬ এবং ১৭ জুন আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে অতিভারী বৃষ্টি জারি থাকতে পারে। এই দু'দিন জলপাইগুড়িতে ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা জারি থাকতে পারে। আগামী ৩ দিনে উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তবে এত তাড়াতাড়ি বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবে না উত্তরঙ্গের জেলাগুলি। আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি জারি থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।