ইডি-র হাতে গ্রেফতার হেমন্ত সোরেন, কোন পথে এবার ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি?

Hemant Soren: অবিজেপি রাজ্যগুলির গদি দখলে বিজেপির যে সব কৌশল নিয়ে থাকে, তা কারওরই অজানিত নয়। ঝাড়খণ্ডেও ক্ষেত্রেও তেমন কিছুই ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এত কিছুর পরেও শেষরক্ষা হল না। অর্থ তছরুপ মামলায় শেষপর্যন্ত গ্রেফতার হলেনই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এমন একটা আশঙ্কা ছিলই। দিল্লি ও ঝাড়খণ্ডের মধ্যে চরম টানাপড়েনও চলছিল হেমন্তকে নিয়ে। ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে আঁচ করেই বেপাত্তা হয়ে যান ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো হেমন্ত সোরেন। তবে সেই নাটকে শেষমেশ পর্দা পড়ল। বুধবার রাতেই হেমন্তকে গ্রেফতার করল ইডি। জেএএম সাংসদ মহুয়া মাজি এই খবরে সিলমোহর দিয়েছেন।

হেমন্ত গ্রেফতার হলে কে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সে নিয়ে জল্পনা চলেছে দিনভর। শোনা যায়, হেমন্তের স্ত্রী কল্পনা সোরেনই হতে পারেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। তার জন্য জেএমএমের তরফে রাজ্যপালের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে। আপাতত ইডি হেফাজতেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইডি টিমের সঙ্গে গিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিয়ে এসেছেন হেমন্ত।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী মিসিং! ফোন অফ, প্লেন বিমানবন্দরে, বিএমডব্লিউ বাজেয়াপ্ত! কোথায় গেলেন হেমন্ত সোরেন?

জমি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলার তদন্তে বুধবার দুপুরেই তাঁর রাঁচীর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডির তদন্তকারী দল। বিকেলে জানা যায়, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন তফসিলি জাতি ও জনজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে কেন্দ্রীয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। ভারতীয় সংবিধানের ১৫ নম্বর তফসিলের অন্তর্গত তফসিলি জাতি ও জনজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন অনুযায়ী তফসিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত কোনও ব্যক্তির উপরে অবমাননা, অত্যাচার বা হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা যাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, জনজাতি জনগোষ্ঠীর নেতা হেমন্ত ইডির উপর চাপ বৃদ্ধি করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন।

হেমন্তকে জমি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় জি়জ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যেই ইডির তদন্তকারী দল তাঁর রাঁচীর বাসভবনে গিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে, ২০১৮ সালে তফসিলি জাতি-উপজাতিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা রুখতে সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হয়েছিল। ওই সংশোধনী অনুযায়ী, এই সমস্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে বিনা তদন্তে এফআইআর নিতে হবে। অভিযুক্তের আগাম জামিনেরও কোনও সংস্থানও নেই সেই আইনে।

বুধবার দুপুরে হেমন্তের বাড়িতে ইডির হাজির হওয়ার খবর পেয়েই জেএমএম সমর্থকেরা রাঁচীতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঝাড়খণ্ডের মু্খ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ইডি তল্লাশির প্রতিবাদে রাজভবন পর্যন্ত মিছিল করে যাওয়ার কথাও জানানো হয় জেএমএমের তরফে। বিশৃঙ্খলার আঁচ পেয়ে ঝাড়খণ্ডের সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তার আর্জি জানায় ইডি। ঝাড়খণ্ড প্রশাসন সূত্রে খবর, পরিস্থিতি সামলাতে তিন সদস্যের একটি প্রশাসনিক দল গঠন করা হয়েছে। সেই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ঝাড়খণ্ডের অর্থ দফতরের সচিব। রাঁচীর কাঁকে রোডে হেমন্তের বাড়ির চারপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারাও।

ঝাড়খণ্ডের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ফাল হয়ে বেরোতে পারে বিজেপি! এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। তবে জেএমএম সূত্রের খবর, সেই পরিস্থিতি হতে পারে আন্দাজ করে আগে থেকেই নিজেদের সংখ্যায় জোর দিয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। ইতিমধ্যেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা-ও স্থির হয়ে গিয়েছে। জেএএম সাংসদ মহুয়া মাজি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে যথেষ্ট সংখ্যা রয়েছে। ফলে ঝাড়খণ্ড হাত থেকে ফস্কানোর ঝুঁকি নেই। তবে তাঁরা যা-ই বলুক না কেন, মাথার উপর যে সংক্রান্তির মেঘ ঘনিয়েছে হেমন্তের গ্রেফতারিতে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

দুদিন আগেই পড়শি রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ভোল বদলে ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ফলে দুর্বল হয়েছে জোট 'ইন্ডিয়া'-র ভবিষ্যৎ। এবার ফের পড়ল আরও একটি উইকেট। অবিজেপি রাজ্যগুলির গদি দখলে বিজেপির যে সব কৌশল নিয়ে থাকে, তা কারওরই অজানিত নয়। ঝাড়খণ্ডেও ক্ষেত্রেও তেমন কিছুই ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। নীতীশের পাল্টির সঙ্গেও এর একটা সূত্র খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, বিহারেও ঝাড়খণ্ডের মতো পরিস্থিতি হতে পারে আঁচ করেই রাতারাতি দল বদলেছেন নীতীশ কুমার। রাহুল থেকে শুরু করে কংগ্রেসের বহু নেতাই কিন্তু মেনে নিয়েছেন, নীতীশের উপরে অনেক রকম চাপ ছিল। হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে সেই চাপের সাযুজ্য খুঁজতে চেয়েছেন সমালোচকদের অনেকেই।

আরও পড়ুন:দেশের ‘এক্স-রে’ চাইছে কংগ্রেস! নীতীশের ডিগবাজি নিয়ে কী বললেন রাহুল?

শোনা গিয়েছে, ইডির হাত থেকে বাঁচতে নাকি ঝাড়খণ্ড থেকে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন হেমন্ত। ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরু করেছে কংগ্রেস। মণিপুর থেকে শুরু করে অসম বাংলা ঘুরে বিহার হয়ে ফের বাংলায় এসেছেন রাহুল। নীতীশ কুমারের পাল্টি, সেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই বিহারে ঢোকেন তিনি। বাংলায় দ্বিতীয় পর্বের যাত্রা শেষ করে এখান থেকে ঝাড়খণ্ড যাওয়ার কথা কংগ্রেস নেতার। এরই মধ্যে সেখানেও শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক অস্থিরতা। সামনেই ২০২৪ লোকসভা ভোট। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি ঠিক কোন খাতে প্রবাহিত হয়, সেদিকেই চোখ গোটা দেশের।

 

More Articles