জেলেও রুটিন মানা মাপা জীবন, তিহাড়ে কেমন আছেন কেজরিওয়াল?
Arvind Kejriwal: ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, রাতারাতি পৌঁছে গেলেন জেলে। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলে তাঁকে কোনও রকম আলাদা খাতির করছে না জেল কর্তৃপক্ষ। বরং কেজরিওয়ালকে অন্য যে কোনও সাধারণ বন্দির মতোই রাখার নির্দেশ পেয়েছে তারা
আবগারি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এতদিন পর্যন্ত ইডি হেফাজতে ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁকে দু'সপ্তাহের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। আপাতত তাঁর ঠিকানা তিহাড় জেলের একটি সেল। আগামী ২ সপ্তাহের জন্য সেটাই হতে চলেছে কেজরির ঘরবাড়ি।
ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, রাতারাতি পৌঁছে গেলেন জেলে। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলে তাঁকে কোনও রকম আলাদা খাতির করছে না জেল কর্তৃপক্ষ। বরং কেজরিওয়ালকে অন্য যে কোনও সাধারণ বন্দির মতোই রাখার নির্দেশ পেয়েছে তারা। যদিও জেলে বসেই রাজ্যপাঠ সামলানোর কথা জানিয়েছেন কেজরি। যতদিন না অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে, পদত্যাগ করার কোনও প্রশ্নই নেই, জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত দায়িত্ব-কর্তব্যই জেল থেকে পালনের কথা বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ইডি হেফাজতে থেকেই রাজ্যের নিকাশি ব্যবস্থা ও জল সরবরাহ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন কেজরিওয়াল। আপ-এর তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে জেলেই কেজরির জন্য দফতর তৈরি করা হবে।
তবে সেসব কবে হবে, আদৌ হবে কিনা জানা নেই। আপাতত জেলে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভির আওতায় থাকবেন দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী। তবে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই কেজরির। প্রতিদিন ফোনে পাঁচ মিনিট করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন তিনি। তবে সেই সমস্ত কলই রেকর্ড করা হবে জেলের নিয়মানুসারেই।
আরও পড়ুন: কেজরিওয়ালই শেষ নয়, আপকে শেষ বিজেপির যে ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস করলেন অতিশী
তবে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা। সে জন্য সপ্তাহে দু'বার করে পরিবারের কোনও একজন সদস্যের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পাবেন কেজরি। তবে কার সঙ্গে তিনি কথা বলতে চাইছেন, তা আগেভাগে জেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে তাঁকে। কেজরিওয়াল নিজে ডায়েবিটিক। ফলে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাঁর। আদালত তাঁকে ঘরে তৈরি খাবারদাবার খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। সেই মতোই বাড়ি থেকেই কেজরির খাবারদাবার আসছে বলে খবর।
গত অক্টোবর মাসে একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ। তাঁকে এতদিন তিহাড়েরই জেল নম্বর টু-তে রাখা হয়েছিল। এখন যেখানে রাখা হয়েছে কেজরিকে। তবে সম্প্রতি সঞ্জয়কে পাঁচ নম্বর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মঞ্জুর হয়েছে তাঁর জামিনের আবেদন। তাতে আপত্তি নেই ইডিরও। কেজরির প্রাক্তন ডেপুটি মণীশ সিসৌদিয়া রয়েছেন এক নম্বর জেলে। অন্য়দিকে, বিআরএস নেতা কে কবিতা রয়েছেন ৬ নম্বর জেলে। কেজরির দলের অন্যান্য সদস্যরাও একই জেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন, অথচ কারওর সঙ্গেই কারওর যোগাযোগের রাস্তা নেই।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। রাজ্যের সর্বময় কর্তা। আর সেই তিনিই আবগারি মামলায় আজ জেলের অন্ধকারে। তিহাড় জেলে তাঁর দিন শুরু হচ্ছে এখন ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ, অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গেই। এর পরে জলখাবারে চা আর কয়েকটা পাউরুটি পান কেজরি। সেই দিয়েই প্রাতঃরাশ সারেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এরপর সকাল সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয় জেলে। কী থাকে সেই খাবারের তালিকায়। থাকে ডাল, আর সবজি। আর সঙ্গে পাঁচটা রুটি কিংবা ভাত।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ হওয়ার পর অন্যান্য বন্দিদের মতোই দুপুর তিনটে পর্যন্ত নিজের সেলে বন্দি থাকেন কেজরিওয়াল। সাড়ে তিনটে নাগাদ এক কাপ চা আর দু'টো বিস্কুট আসে তাঁর কাছে। বিকেল চারটে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সময়। সে সময়টা চাইলে নিজের আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন কেজরি।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় কেজরিবালকে নৈশভোজ দিয়ে দেওয়া হয়। ডিনারেও দুপুরের মতোই ডাল, সবজি সঙ্গে পাঁচটা রুটি বা ভাত দেওয়া হয় তিহাড় জেলেষ এর পর সাতটা পর্যন্ত ফের নিজের লক আপে বন্দি অবস্থায় থাকা, এই রুটিন। অবশ্য বিকেল পাঁচটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত চাইলে অন্যান্য় বন্দিদের মতোই জেলের মধ্যে বসে দূরদর্শন দেখতে পারেন কেজরিওয়াল। তবে সমস্ত রকম মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির জন্য ২৪ ঘণ্টা সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে তিহাড় জেলের ভিতরে। শুধু তা-ই নয়, নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থাও রয়েছে জেলে। তিহাড় জেলে থাকাকালীন গোটা সময়টাই নিয়মিত চেকআপেই রাখা হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে।
আরও পড়ুন: আবগারি দুর্নীতির টাকা কোথায়? আদালতে হাঁড়ি ভাঙবেন কেজরি?
সামনেই ভোট। প্রায় সমস্ত দলই শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত। কিন্তু এই সময়েই জেলে বন্দি আম আদমী পার্টির প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি কবে ছাড়া পাবেন, তা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। শুধু কেজরিই নয়, দলের অন্য বহু হেভিওয়েট নেতাই জেলে। এই পরিস্থতিতে আপের আত্মবিশ্বাস যে ভোটবাজারে খানিকটা হলেও চিড় খাবে, তাতে সন্দেহ নেই। সেই ফাঁকে কি দিল্লির দখল নেওয়া সুবিধার হতে চলেছে বিজেপির জন্য? আপাতত সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সেটাই।