কুখ্যাত ২২ অক্টোবরের স্মৃতি আজও দগদগে! কোনও দিন কি ফুরোবে কাশ্মীরের 'কালো অধ্যায়'?
Black Day of Jammu and Kashmir: মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার পক্ষপাতী হলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে।
কাশ্মীর উপত্যকায় মানুষের সভ্যতার ইতিহাস অন্তত পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। কিন্তু বিগত পঁচাত্তর বছরের ইতিহাসে কাশ্মীরের মাটি ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের কাছেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও যে পরিমাণ বিতর্ক নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, তার অন্য কোনও তুলনা পাওয়া যাবে না। কাশ্মীরকে ভূ-স্বর্গ বলা হয়। কিন্তু আবার কাশ্মীর বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অন্য এক ছবি। সেই কাশ্মীর লাশের মিছিল নিয়ে আর্তনাদ করা এক ভয়ঙ্কর ভূ-স্বর্গ, যেখানে মানুষের প্রতিটি সেকেন্ড কাটে অনিরাপত্তার চাদরে। কেন কাশ্মীরের এই করুণ পরিণতি? কেনই বা কাশ্মীর নিয়ে চর্চা আজও ‘সেনসিটিভ ইস্যু’ হয়ে দাঁড়ায়? কী হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর যার কারণে আজও কাশ্মীরের কাছে তা এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে?
কাশ্মীরের করুণ পরিণতির ইতিহাস
১৮৪৫ সালে প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের পর থেকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। ব্রিটিশ আনুগত্য বজায় রাখা কাশ্মীরে গুলাব সিং ও তাঁর উত্তরাধিকারী ডোগরা রাজাদের শাসন শুরু হয়। গুলাব সিংয়ের মৃত্যুর পর জম্মু কাশ্মীরের মহারাজা হন রণবীর সিং। এই রণবীর সিংয়ের নাতি ছিলেন মহারাজা হরি সিং, যিনি ১৯২৫ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন। দেশভাগ ও ব্রিটিশদের দেশত্যাগের সময় তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের সিংহাসনে।
১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশরা যখন ভারত থেকে বিদায় নেয় তখন তারা ৫৬২ টি প্রিন্সলি স্টেটকে হয় ভারত নয় পাকিস্তানে যোগ দিতে বলে। ভারতের স্টেটগুলি ভারতে এবং পাকিস্তানের গুলি পাকিস্তানে যোগ দেয়। কিন্তু ৩ টি স্টেট স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল। হায়দরাবাদ, জুনগড় এবং জম্মু ও কাশ্মীর। এদের মধ্যে হায়দরাবাদ এবং জুনগড় ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু তাদের রাজা ছিল মুসলিম। অপরদিকে, জম্মু এবং কাশ্মীরের জনসংখ্যা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু রাজা ছিলেন হরি সিং। হরি সিং শুরুতে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন এবং কাশ্মীরকে ‘এশিয়ার সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লর্ড মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরের শাসক মহারাজা হরি সিংকে ভারত বা পাকিস্তান- এর মধ্যে যেকোনও একটি রাষ্ট্রে যোগদানের আহ্বান জানান। কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’-এর সভাপতি শেখ আবদুল্লা ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পক্ষে জনমত গঠন করেন। ভারত কাশ্মীরে গণভোটের প্রস্তাব দিলে পাকিস্তান এর বিরোধিতা করে। এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার পক্ষপাতী হলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেও কালো চামড়ার সঙ্গে বৈষম্য! দায় আসলে কার?
কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরকে নিরপেক্ষ রাজ্য হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পাকিস্তানের মতামত ছিল ভিন্ন। পাকিস্তান কাশ্মীর দখলের জন্য নৃশংসতার চরম সীমা অতিক্রম করতেও পিছপা হয়নি। সময় ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর। স্বাধীন রাজ্য কাশ্মীরের দখল নেওয়ার জন্য মেজর জেনারেল আকবর খানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন গুলমার্গ’ নামে নৃশংস অভিযান পরিচালনা করে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে উপজাতীয় জঙ্গিদের সেই আগ্রাসনের সময় কাশ্মীরের লাখ লাখ হিন্দু-মুসলিম-শিখ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, হত্যা-ধর্ষণ আর বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছিলেন। জীবন দিয়ে যারা সেই আগ্রাসন ব্যর্থ করে দেন, তাঁদের স্মরণে কালো দিবস পালিত হয় কাশ্মীরে। ঠিক কী হয়েছিল সেইদিন?
১৯৪৭ সালের ২০-২১ অক্টোবরে, প্রায় ২০,০০০ উপজাতি মুজফফরাবাদ এবং অ্যাবোটাবাদের (বর্তমান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর) নীলম নদীর উপর থাকা সেতু দখল করে এবং ২১ অক্টোবরের মধ্যে মুজাফফরাবাদ শহর দখল করে নেয়। এরপর রাষ্ট্রীয় অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে, বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “সেই সময় যেন ধ্বংস যজ্ঞের ছবি এঁকেছিল তারা। রাস্তাঘাট ভাঙা আসবাবপত্র, পোড়া জিনিসপত্রের ছাই এবং মৃতদেহতে ভরে উঠেছিল। নদীতে শত শত লাশ ভাসছিল।” হামলাকারীরা তারপর উরি এবং বারামুল্লায় নেমে যায় যেখানে মৃত্যু এবং ধ্বংসের আরেকটি পর্ব চালানো হয়। বারামুল্লায় এই ঘটনা অনেকেই মনে রেখেছেন। তাঁদের কথায়, বারামুল্লায় হাসপাতাল ও চার্চকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাকিস্তানি বাহিনী। ৩৫০ জন স্থানীয় হিন্দুকে একটি ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। বারামুল্লা আক্রান্তের ২৪ ঘণ্টা পরই ভারতীয় সেনা পৌঁছয় শহরে। কিন্তু তার আগেই শহরটির ১৪ হাজারের জনবসতি কমে দাঁড়ায় ১ হাজারে। পাকিস্তানি হামলাকারীরা শহরটিকেই জনমানবশূন্য করে দিয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মহারাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্য চান এবং শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী গিয়ে কাশ্মীরকে হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে। এই ঘটনা প্রক্রিয়ার মধ্যেই ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য মহারাজা হরি সিং একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে হরি সিং কাশ্মীরে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন চেয়ে নেন এবং শেখ আবদুল্লাহকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ঘোষণা করেন। এই চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত হয় ৩৭০ ধারা।
পাকিস্তান এই চুক্তিকে মেনে নেয়নি, তারা দাবি করেছিল চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে হরি সিংকে বাধ্য করা হয়েছে চুক্তি করতে। চুক্তির পর দিন ভারত তার সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করে এবং নন স্টেট বাহিনীকে হটিয়ে কাশ্মীরের দখল নেয়। একই সময় পাকিস্তানও তাদের সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। ফলে স্বাধীন হওয়ার প্রথম বছরের মধ্যেই যুদ্ধ বেঁধে যায় দু’টি নতুন দেশের মধ্যে। এই যুদ্ধের ফলে কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক অংশ চলে যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে। যার নাম হয় জম্মু এবং কাশ্মীর আর পাকিস্তানের অংশের নাম হয় আজাদ কাশ্মীর।
কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার সেকাল একাল
স্বাধীনতার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরে লাগু থাকা ৩৭০ ধারা ভারতীয় রাজনীতিতে বারবার প্রশ্নের দাবিদার। এই ৩৭০ ধারাকে রদ করার পক্ষে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। আবার অনেকেই জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। আসলে এই ৩৭০ ধারা কী? কী কারণে এই ধারা কেবলমাত্র ভারতের জম্মু-কাশ্মীরেই লাগু করা রয়েছে? হাজার হাজার প্রশ্ন লুকিয়ে রয়েছে এই ৩৭০ ধারার মধ্যে।
আরও পড়ুন- হেমন্তে ছিল আলো তৈরির পাঠশালা! কালীপুজোর প্রদীপ যেভাবে তৈরি হত হাতে হাতে
১৯৪৭ সালে এই ৩৭০ ধারার খসড়া প্রস্তুত করেন শেখ আবদুল্লা। জম্মু কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী মহারাজা হরি সিং এবং জওহরলাল নেহরু তাঁকে নিয়োগ করেন। তবে শেখ আবদুল্লা অস্থায়ী ভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না, বরং স্থায়ী ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষপাতী ছিলেন। যদিও কেন্দ্র তাঁর সেই দাবি মেনে নেয়নি। ফলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও ৩৭০ ধারা বলে জম্মু-কাশ্মীর ছিল আলাদা স্বায়ত্ত্বশাসিত রাজ্য, যদিও সেই স্বায়ত্ত্বশাসন ছিল ‘অস্থায়ী’।
সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সংবিধানের ধারাগুলি অন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও জম্মু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকী, কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্ৰ বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের মত নিতে হত।
কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ঘটনা সংক্ষিপ্ত ও মোটামুটি সবারই জানা। শেষ অবধি মূলত কাশ্মীরের সাধারণ জনতার চাপেই মহারাজা হরি সিং ভারতভুক্তি মেনে নিলেন। ৩৭০ ধারা আর কিছুই না, এই ভারতভুক্তির এক ধরনের চুক্তি যা কাশ্মীরকে কিছু রক্ষাকবচ দিয়েছিল। আগে পরে আরও কিছু চুক্তি হয়েছে। তা অবশ্যই রাজ্যের নির্বাচিত বিধানসভার ক্ষমতা যাঁদের হাতে তাঁদের সঙ্গে। যেমন ৩৭০ ধারার সঙ্গে ৩৫-কেও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে মূলত জমি কেনাবেচা ও নাগরিকত্ব বিষয় সংযোজিত করা হয়েছে। এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভারতের সংসদ রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে ৩৭০ ও ৩৫ দু’টি ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে চলেছেন।
এখন থেকে কাশ্মীরে বাইরের প্রদেশের যে কেউ বাস করতে পারবেন। জমিজমা কিনে বসত নির্মাণ, এমনকী কারখানাও বানাতে পারবেন। সমস্যা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে যে প্রচার তীব্র হচ্ছে তা আধা সত্যি। ভাবখানা এমন যেন একমাত্র কাশ্মীরই অন্য রাজ্যের কাউকে জমি কিনতে দেয় না। এই আইন কিন্তু কোনও মুসলিম শাসক করেনি। দীর্ঘদিন আগে ডোগরা রাজারা এই আইন করেছিলেন। আসলে তাঁরা এর মধ্যে দিয়ে নিজেদের বিপুল ভূসম্পত্তি রক্ষা করতে সক্রিয় ছিলেন। এটা একটা দিক। আধা সত্য কারণ, এই মুহূর্তে ভারতীয় জনগণের বড় অংশ বিশ্বাস করেন ৩৭০ বাতিলের মধ্যে দিয়ে দেশের সব মানুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। এটা ভুল। ভারতের বহু রাজ্য আছে যেখানে এই ধরনের বিশেষ রক্ষাকবচ আজও রয়ে গিয়েছে স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য। উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে অন্য প্রদেশের মানুষের কাছে জমি কেনাবেচা বেআইনি।
কাশ্মীরের মানবাধিকারের প্রশ্ন
“দুধ মাঙ্গো তো ক্ষীর দেঙ্গে /
কাশ্মীর মাঙ্গো তো চির দেঙ্গে।”
এই স্লোগানে বেড়ে ওঠা মানুষ যে উগ্র জাতীয়তাবাদীর ভাষণ শুনে কাশ্মীর ভারতের ‘অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ বলে চিৎকার করেন ও ভিন্নমতের মানুষেদের শাপান্ত করে দেশপ্রেমের নানা নমুনা পেশ করেন, তাঁদের কাছে যদি প্রশ্ন করা যায় যে, অবিচ্ছেদ্য কাশ্মীরের মানুষরা আমাদের সহ-নাগরিক তো? তাঁদেরও ভারতীয় সংবিধান বর্ণিত অধিকার ভোগ করার কথা- এ কথা আমরা বিশ্বাস করি তো? উত্তরটা সহজ হবে না।
কাশ্মীরে মানবাধিকারের প্রশ্নটা অনেকটা সোনার পাথরবাটির মতো। কারণ, শাসকদের সৌজন্যে, সিনেমার কুশলীদের কারণে আমরা সেখানকার মানুষদের সহনাগরিক ভাবি না বরং শত্রু শিবিরের লোক বলে দেগে দেওয়াতেই বেশি নিশ্চিন্ত বোধ করি। কখনও প্রশ্ন করি না যে, কাশ্মীর যদি আমাদের দেশ হয়, তবে সেখানকার মানুষরাও আমাদের সহনাগরিক হবেন না কেন? আমরা চিৎকার করে বলতে পারি না যে, রাষ্ট্র তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না।
কাশ্মীরে শুধুমাত্র হত্যা বা দৈহিক আক্রমণই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একমাত্র চিত্র নয়। প্রত্যেক দিন সেখানে মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, ধর্মাচরণের অধিকার, সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকারকে লুণ্ঠন করা হয়। গণতন্ত্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ বলে বিজ্ঞাপিত সংবাদমাধ্যমের উপর অহরহ আক্রমণ ঘটে। সুজাত বুখারির মৃত্যু তার তরতাজা উদাহরণ। ২০১৮ তে একাধিক সাংবাদিক রাষ্ট্রের রোষানলে পড়েছেন যেমন কামরান ইউসুফ (ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার), আকিব জাভেদ (কাশ্মীর অবজারভার), ফারুক শাহ (রাইজিং কাশ্মীর), অ্যানি গোয়েন (ওয়াশিংটন পোস্ট), ক্যাথাল ম্যাকনাটন (রয়টার্স)। মতপ্রকাশ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আজ সারা পৃথিবীতে এক বহুল প্রচারিত মাধ্যম। তাই ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বন্ধ করার অর্থ মত প্রকাশের অধিকারকে লঙ্ঘন করা। শুধু জেলাস্তরে নয়, সমগ্র কাশ্মীর জুড়ে বহুবার ইন্টারনেট ব্লক করার ঘটনা ঘটেছে।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, কাশ্মীরের কালো অধ্যায় কি আদৌ শেষ হবে? কাশ্মীর কি কোনওদিন নিজেকে নিরপেক্ষ রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে? রাজা হরি সিং যে স্বাধীন রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন যার ফলে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের নৃশংসতার শিকার হতে হল সেই স্বপ্ন কি কখনও বাস্তবায়িত হবে? প্রশ্ন অনেক। উত্তরের অপেক্ষা অনন্ত।