রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছে বুথফেরত সমীক্ষা! ভারতে বুথফেরত সমীক্ষার ইতিহাস কী?

History of Exit Polls: ভারতের মতো দেশে, কিছু জেলার কিছু আসনের মানুষের সঙ্গে কথা বলেই আসন সংখ্যা বের করার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করা ঠিক নয়।

১ জুন সন্ধ্যা ৬ টায় শেষ হলো দেশের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন। আর তার পর থেকেই রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছে বুথফেরত সমীক্ষা। অধিকাংশ সমীক্ষক সংস্থার দাবি, রাজ্যে ও কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া জোট টিভি চ্যানেলগুলিতে বুথফেরত সমীক্ষা সংক্রান্ত বিতর্কে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছিল। জোটের বৈঠকের পর বুথফেরত সমীক্ষার তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করে কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের দিল্লির বাড়িতে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি দাবি করেন, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া কম করে ২৯৫টি আসনে জিতবে। বিরোধী জোট ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরেই সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলেছিল। তার জন্য ১৪ জন টেলিভিশন সঞ্চালককে বয়কটও করেছিল তারা। বিরোধীরা মনে করছেন, সিংহভাগ সমীক্ষাতেই বিজেপি এগিয়ে কারণ, গণনার আগেই যদি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা যায় তবে গণনায় বিশেষ মনযোগ দিতে পারবে না বিরোধী দলের কর্মীরা। তাই পক্ষপাতদুষ্ট সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, বুথফেরত সমীক্ষার নিরপেক্ষতা নিয়ে। রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়িতে জানতেই হয়, বুথফেরত সমীক্ষা কবে, কারা শুরু করেছিল?

বহুবারই যেমন বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলেছে, আবার অনেকক্ষেত্রে সমীক্ষার ফল একেবারে ভুলও প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রের জনগণের ভোট দেওয়ার পর, ভোটারদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। গণনার আগেই কোন দল কতগুলি আসনে জয় পাবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী চলে বুথফেরত সমীক্ষায়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রথমত, সব বুথফেরত সমীক্ষা সঠিক অনুমান করতে পারে তা নয়। দ্বিতীয়ত, অতীতের তথ্য ঘাঁটলেই দেখা যাবে, বুথফেরত সমীক্ষা সবসময় মেলেনি। ভারতে ১৯৫৭ সালে ইন্ডিয়ান ইনিস্টিটিউট অফ পাবলিক ওপিনিয়ন প্রথমবার বুথফেরত সমীক্ষা করেছিল। ১৯৬০ সালে দিল্লির স্টাডি অফ ডেভলপিং সোসাইটিস (সিএসডিএস) বুথফেরত সমীক্ষার উন্নত পথ দেখিয়েছিল। ১৯৬১ সালে দূরদর্শন দেশ জুড়ে বুথফেরত সমীক্ষা চালাতে সিডিএস-এর সাহায্য নিয়েছিল।

আরও পড়ুন- মনস্তত্ত্বের খেলা? ভরসা রাখা যায় এই এক্সিট পোলে?

'মিন্ট'-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সে সময় কিছু রাজনৈতিক দল টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রেখেছিল। ১৯৮০ সাল অবধিও সংবাদমাধ্যমগুলির সমীক্ষা তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। রবীশ কুমার তাঁর ইউটিউব ভিডিওতে দাবি করেছেন, বুথফেরত সমীক্ষা দিয়ে ভোট শতাংশের ট্রেন্ডও আন্দাজ করা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, ভারতের মতো দেশে, কিছু জেলার কিছু আসনের মানুষের সঙ্গে কথা বলেই আসন সংখ্যা বের করার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করা ঠিক নয়। তিনি এও দাবি করেন, সংবাদমাধ্যমগুলি বরাবরই বুথফেরত সমীক্ষাকে অত্যন্ত উত্তেজনার সঙ্গে সম্প্রচার করলেও, এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কতজন মানুষের মতামতের ভিত্তিতে গবেষণা করা হচ্ছে , বয়সসীমা কী, তাঁরা কোন সম্প্রদায়ের, ক'টি গ্রাম এবং শহর নেওয়া হয়েছে এই সকল কিছু জেনেই সমীক্ষার ফলে ভরসা করা উচিত বলে তাঁর মত। সিংহভাগ সংবাদমাধ্যম বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে মাতামাতি করলেও, গবেষণা প্রক্রিয়ার তথ্য তারা জানায় না। যার জন্য এই সমীক্ষাগুলিতে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে।

উল্লেখ্য, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৩০৩ টি আসন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এবার আর বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না অর্থাৎ ২৭২টি আসনে জয় পাচ্ছে না। সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ যোগেন্দ্র যাদব এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের স্বামী তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পরাকলা প্রভাকর লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন স্পষ্ট এ কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি ভারতের সাট্টা বাজারের অনুমানগুলিও তাই বলছে। সাট্টা বাজারের অনুমানও একই, বহুক্ষেত্রে মেলে আবার মেলেও না। আগের দুই লোকসভা ভোটে সাট্টা বাজারের অনুমান ফলে গিয়েছিল। অনুমান করা হয়েছিল, কংগ্রেস ৭০ আসনের বেশি পাবে না, তাই হয়েছিল। তেমনই ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রায় সব বুথফেরত সমীক্ষা মিলেছিল। আবার বঙ্গের শেষ বিধানসভা নির্বাচনের বুথফেরত সমীক্ষা কিন্তু মেলেনি। সমীক্ষার ফলের সঙ্গে গণনার ফলের ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখন দেখার তৃতীয়বার নরেন্দ্র মোদিই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নাকি বুথফেরত সমীক্ষা গুলি একেবারেই নিরপেক্ষ নয়। তাদের এই সমীক্ষার দামামা বাজানো আসনে নির্দিষ্ট দলের কাছে মাথা বিক্রিরই ফল!

More Articles