শ্মশান থেকে উৎপত্তি এই চিত্রশিল্পের! রহস্যময় পুজোর আড়ালে লুকিয়ে আছে যে লোকশিল্প

Masan Painting: চিন থেকে ভারতে এই পথে রেশমের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যায় একসময়। সিল্ক রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, মাসান দেবতাদের অবয়ব সৃষ্টির জন্য অন্য পটভূমির খোঁজ চলতে থাকে।

চারুকলা আর কারুকার্যের জগতে বাংলার লোকশিল্পের অবস্থান ঠিক কোথায়? যেকোনও বাঙালি শিল্পপ্রেমীকে প্রশ্ন করলে চোখ বন্ধ করে বলে দেবেন পটচিত্রের নাম। অনেকেই যোগ করবে পুরুলিয়ার ছৌ নাচের মুখোশ শিল্প, দিনাজপুরের গম্ভীরা মুখোশ, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার কাজ, টেরাকোটার পুতুল, বীরভূমের নকশীকাঁথা; বাঁকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুরের ডোকরা শিল্পসহ আরও বহু কাঠ, বাঁশ বা মৃত্তিকানির্মিত হস্তশিল্পের কথা। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও কিছু কিছু নাম সত্যিই রয়ে যায় জানার পরিধির বাইরে। অখ্যাতির অতলান্তিকে ডুবে থাকা এমন শিল্পের পরিচয় জানতে অনুসন্ধিৎসু মন সবসময় থাকে শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায়। হতেই তো পারে প্রকৃতিগতভাবে সেই শিল্প অনেক বেশি মৌলিক; অতীব সুপ্রাচীন আর রহস্যময় তার ঐতিহাসিক পরিচয়।এমনই এক শিল্প 'মাসান চিত্রকলা'।

সুদীর্ঘকাল ধরে এই শিল্পকে বংশানুক্রমে ধারণ আর বহন করে চলেছেন উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। তবে মাসান'কে নেহাতই চিত্রশিল্প বা কারুকার্যের পর্যায়ে ফেলে দিলে মস্ত বড় ভুল হবে। কেননা এর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে এ অঞ্চলে হাজার বছর ধরে চলতে থাকা রীতিনীতি আর ধর্মীয় আচারের অনুশীলন। স্পষ্টতই বোঝা যায়, 'শ্মশান' থেকেই 'মাসান' শব্দের উৎপত্তি। উত্তরবঙ্গের বহু অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এখনও মাসান ঠাকুরের প্রতি আস্থা অবিচল। মাসান পুজোর রীতি অনেকটা কমে এলেও এখনও পুরোপুরি মিটে যায়নি উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ জীবন থেকে। লোকবিশ্বাস, মাসান দেবতা এই অঞ্চলে রুদ্ররূপে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন রোগ শোক, শারীরিক দুরবস্থার কারণ হিসেবে তারা বিশ্বাস করে এসেছেন মাসান দেবতার কুদৃষ্টির প্রভাবের কথা। সেই কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পেতেই দেবতাকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টা, আর সেই প্রচেষ্টা থেকেই পুজো। মাসান শিল্পের বহিঃপ্রকাশ এই উপাসনা রীতিরই অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে। এই শিল্পের কারিগর সম্প্রদায়, যারা 'মালাকার' বলে পরিচিত, শুধুমাত্র শোলা আর প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহারে এমন বৈচিত্র্য এনেছেন এই শিল্পে, যে অন্য সমস্ত প্রাচীন ভারতীয় লোকশিল্প থেকে 'মাসান' পেয়েছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী, স্বতন্ত্র এক রূপ।

আরও পড়ুন- ঘুঁটের আগুন থেকে এলইডি ল্যাম্প, জগদ্ধাত্রী পুজো পাল্টে দিল চন্দননগরের চালচিত্র

শিল্পের উৎস সন্ধানে

লোকশিল্পের উৎস খুঁজতে হলে, তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ধর্মীয় বিশ্বাসের ইতিহাস অনুসন্ধান করাও আবশ্যক হয়ে পড়ে। বলা হচ্ছে, মধ্যযুগের অনেক আগে থেকেই তিব্বতের বিস্তৃত অংশে যে ধর্মবিশ্বাস প্রচলিত ছিল, তার নাম বন ধর্ম। এই ধর্মকে বৌদ্ধ-পূর্ববর্তী ধর্মীয় দর্শন হিসেবে মানা যেতে পারে। বন ধর্মমতের সঙ্গে একদা ভারতে উদ্ভূত শূন্যবাদের কিন্তু অসম্ভব মিল রয়েছে। কেননা শূন্যবাদের মতো এই ধর্মমতেও বলা হয়, পৃথিবীতে প্রাপ্তির যোগ্য আর কিছুই নেই, পরম শূন্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার মধ্যেই আছে পরম প্রাপ্তি, যা মানবজন্মের প্রধান উদ্দেশ্য। এই বন ধর্ম যখন মধ্যযুগে বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে একীভূত হয়, তখন সেই বন-বৌদ্ধ ধর্ম দর্শন এক ভিন্ন মাত্রা পায়। এই ধর্মকে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে বন ধর্ম মিলিত হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে এর এক প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। কারও কারও মতে, মাসান তাদের অনুসৃত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যেই একটি। পরবর্তীতে তিব্বতি লামা এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বহুবার যাতায়াতের মাধ্যমে এই ধর্ম-দর্শন উত্তরবঙ্গে একপ্রকার স্থায়িত্ব লাভ করে। আসলে, তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের উপাসনা পদ্ধতি থেকেই মাসান পুজো রীতির সূচনা বলে মনে হয়। পরবর্তীতে এই জনপদে বৌদ্ধধর্মের অস্তিত্ব না থাকলেও সংস্কৃতিতে তান্ত্রিক ভাবধারার প্রভাব রয়েই যায় কারণ, তন্ত্রসাধনা মতে শ্মশানভূমিতেই এসমস্ত অপদেবতাদের তুষ্ট করার বিধান। যদিও 'অপদেবতা' পরিভাষা তারা কখনই ব্যবহার করেন না, তারা অভিহিত করেন 'মাসান' নামেই। এখনও পর্যন্ত ১৮ প্রকার মাসানের উপাসনার নিদর্শন পাওয়া গেছে এই অঞ্চলে।

এ বিষয়ে আরও বহু তথ্য বিশদে জানিয়েছেন গবেষক বিমলেন্দু মজুমদার। তাঁর মতে, মাসান পুজোর বিধান এবং একইসঙ্গে এই শিল্পরীতির আগমন চিন থেকে উত্তরবঙ্গের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা সিল্করুটের মাধ্যমে। তিব্বতি ধ্যানধারণা অনুযায়ী রেশম এবং রেশম সম্পর্কিত যেকোনও বিষয় বা বস্তুকে অত্যন্ত পবিত্র মানা হতো। বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন উপকথামূলক এবং পৌরাণিক কাহিনি যে থাঙ্কার মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হতো, সেই থাঙ্কার কাপড় রেশম থেকেই তৈরি হতো। তিনি আরও জানাচ্ছেন, শুরুতে থাঙ্কার মতোই রেশমের কাপড়েই মাসান দেবতাদের প্রতিকৃতি আঁকা হতো। রেশম কাপড়ে আঁকা মাসান চিত্রকলার অল্পসংখ্যক নিদর্শনও আছে পাহাড়ি অঞ্চলে।

তিব্বতে অঙ্কিত থাঙ্কার দৃষ্টান্ত

কিন্তু কী এমন হলো যার জন্য উপাসনা-নির্ভর এই শিল্পকলার প্রয়োগ মাধ্যমে এতটা পরিবর্তন? রেশম থেকে শোলায় আগমন কীভাবে? এরও ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন গবেষক বিমলেন্দু মজুমদার। তাঁর মতে, চিন থেকে ভারতে এই পথে রেশমের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যায় একসময়। সিল্ক রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, মাসান দেবতাদের অবয়ব সৃষ্টির জন্য অন্য পটভূমির খোঁজ চলতে থাকে। তুলার কাপড়ের পটভূমিতেও অনেক মাসান অঙ্কিত হওয়ার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই শৈলীতে আঁকা সমস্ত চিত্রশিল্পের মধ্যে এক বিচিত্র রহস্যময়তা রয়েছে। খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, কোনও দেবতার প্রতিমূর্তিই যেন ঠিক বিগ্রহের মতো পরিপূর্ণ নয়। ভীতি উদ্রেককারী প্রতিকৃতি, অদ্ভুত এক আলো-আঁধারি ভাব প্রকাশ করার জন্য যেকোনও প্রয়োগ মাধ্যম কার্যকরী হতে পারে না। সেসময়ে ভূ প্রাকৃতিক ভাবেই এই অঞ্চলে জলাভূমির প্রাচুর্য থাকায় প্রচুর পরিমাণে শোলা উৎপাদিত হতো। প্রাকৃতিকভাবে সহজলভ্য আর রঙ প্রয়োগের উপযুক্ত মাধ্যম এই শোলা তাই সহজেই রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আদর্শ পটভূমি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যারা শোলার কাজ করেন, তাঁরা পরিচিত মালি বা ফুলমালি হিসেবে।

ঐতিহ্যের বাহক যখন বিশ্বাস

শিল্পের সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাসের যোগসূত্র ব্যতিক্রমী বিষয় নয়, সহস্রাধিক বছর ধরে মানবসভ্যতা এর সাক্ষী থেকেছে। তা সে গির্জার দেয়ালে অঙ্কিত ফ্রেস্কোই হোক কিংবা কোনার্কের সূর্যমন্দিরে অঙ্কিত পৌরাণিক কাহিনিচিত্র, নটরাজের মূর্তি হোক কিংবা তিরুপতির বিগ্রহ– উপাসনার মাধ্যম হিসেবে শিল্পের প্রয়োগ আর শিল্পীর উপর নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছে আবহমান কাল ধরে।

বাংলার প্রাচীন লোকশিল্পও যে তার ব্যতিক্রম নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় পটচিত্রের মতো শিল্পকর্মে। যদিও শুধু উপাসনার নিমিত্তে আবদ্ধ করে রাখা যায় না শিল্পকে। ক্রমশ তার ব্যাপ্তি সম্প্রসারিত হয়ে আরও সার্বজনীন হয়ে ওঠে। পটচিত্রের বিষয়বস্তুও তাই মঙ্গলকাব্য থেকে জাতকের গল্প হয়ে আজ আত্মস্থ করেছে বিভিন্ন সমসাময়িক সামাজিক ঘটনাবলীকে।

তবে মাসান চিত্রের উপলক্ষ্য যে মাসান-পুজোর রীতি, তাকে আর পাঁচটা প্রচলিত উপাসনা রীতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যায় না। প্রকৃতপক্ষে এ কোনও আদিরূপাত্মক মৌলিক আরাধনাই নয়। এই পুজোয় যতটা ভক্তিভাব আছে, তার চেয়েও বেশি আছে ভীতি, রক্ষা পাওয়ার বাসনা আর অভিসম্পাতের আশঙ্কা। শোলার উপরে প্রাকৃতিক রঙে আঁকা মাসানেও সেই ভীতি-ভক্তির দ্বন্দ্ব প্রতিফলিত হয়।

যেহেতু শ্মশানে অপদেবতার পূজিত হওয়াই প্রধান রীতি, তাই বসত বাড়ির মূল ভিটেতে কখনই জায়গা পাননি মাসান ঠাকুর। বাড়ির আশেপাশে পরিত্যক্ত, জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় মাসান পুজো করাই নিয়ম। স্থানীয় মানুষের কথায়, কাউকে মাসানে ধরলে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ ওঝা ডেকে পুজোর সমস্ত বন্দোবস্ত শুরু করে দিতে হয়। ১৮ মাসানের পুজোর বিধিতে পার্থক্য বেশ সুস্পষ্ট। যারা পুজো করেন, তারা মাসানের ওঝা নামে পরিচিত। এই ওঝারা হিন্দু বা মুসলিম সম্প্রদায়ের হতে পারেন। যারা মালাকার, তারা বিশ্বাস করেন, মাসান তৈরির সময় মনঃসংযোগ সামান্য বিচ্যুত হলেও তাদের উপর নেমে আসতে পারে ঘোর অভিশাপ। আবার উপযুক্ত মাসান অঙ্কিত নাহলে পুজোয় বসতে পারেন না ওঝারাও। কালো, সাদা, লাল- প্রত্যেক রঙের ব্যবহারের পেছনে আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।

নব্যধারার সংযোজন

সুদীর্ঘকাল ধরে হাতে গোনা কিছু বিষয়বস্তু আর নির্দিষ্ট কিছু কারিগর পরিবারের দ্বারা পরিচালিত এই শিল্প যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন, সময়োপযোগী হয়ে উঠতে পারেনি কিছুতেই। এই প্রথাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠে সম্ভাবনার নতুন দিশা দেখাতে যে শিল্পীরা এগিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য শিল্পী নীহার মজুমদার।

শিল্পী নীহার মজুমদার

দীর্ঘদিন ধরে শুধু দেবদেবী এবং পৌরাণিক কাহিনির উপর ভিত্তি করে ছবিগুলো অঙ্কিত হচ্ছিল মাসান শিল্পে, তার থেকে অনেকটা বেরিয়ে এসে স্থানীয় মানুষের প্রাত্যহিক জীবন সংগ্রামকে এই শিল্পের আধেয় হিসেবে ঠাঁই করে দেওয়ার কৃতিত্ব নীহারবাবুকেই দিতে হয়। একাকী নিভৃত জীবনধারী শিল্পী বাস করছেন জলপাইগুড়ি শহরেই ম্যাকেঞ্জি সাহেবের স্মৃতি বিজড়িত, বহু ইতিহাস আর কিংবদন্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ইউরোপিয়ান ক্লাবে। এই ক্লাবেরই এক নির্দিষ্ট কক্ষে তিনি নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন তাঁর শিল্পচর্চার ক্ষেত্র। মাসান শিল্পের সঙ্গে মডার্নিজমকে একীভূত করে অনন্য মাত্রা দিয়েছেন এই শিল্পকে।

শুরু থেকেই শিল্পীর প্রচেষ্টা ছিল মাসান শিল্পকে কিভাবে প্রাচীন লোককথার বন্ধন থেকে মুক্ত করে মানুষের ড্রইংরুমে পৌঁছে দেওয়া যায়। আর সেই আগ্রহ থেকেই শুরু হয় যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার। শোলার পরিবর্তে পটভূমি হিসেবে বেছে নেন নেপালি হ্যান্ডমেড পেপার। শিল্পীর কথায়, “এই কাগজে কাজ করতে গিয়ে যেন স্থানীয় শিল্পীদের জীবন কষ্টই বারবার উঠে আসতে লাগল তুলির প্রতি আঁচড়ে। বোঝা যাচ্ছিল, কাগজের ওপর জোরালো রঙের অভাব"। আসলে দীর্ঘদিন সেই কারিগরদের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করে নীহার যেন তাদেরই একজন হয়ে উঠেছিলেন।

আরও পড়ুন- ম্রিয়মান পটুয়া গান! লোকসংস্কৃতির অন্তর্জলিযাত্রায় লক্ষ্মীর পট, পাঁচালির গান

অন্যদিকে আরেক শিল্পী মধুসূদন দাসের ক্ষেত্রে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্যানভাসে আঁকা; ভিন্নমুখী মাসান শিল্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ঘটনাপ্রবাহ। বিশ্বভারতী থেকে ললিত কলায় স্নাতকোত্তর মধুসূদন দাস বলছেন, “বাড়ি থেকে পাঁচ ছয় কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাজারে যেতাম মাসান চিত্র দেখার জন্য। খুব কম বয়স থেকেই ওই চিত্রকলা আমাকে দারুণ টানত। আমার শুরুর দিকের কাজগুলোও মাসান থেকে ভীষণভাবে প্রভাবিত। ছেলেবেলা থেকে প্রিয় তো ছিলই, কিন্তু বড় হয়ে যখন কোলাজধর্মী আঁকার সঙ্গে পরিচিত হলাম, এই চিত্রকলার গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখলাম।”

নীহার মজুমদার আর মধুসূদন দাসের মতো শিল্পীদের যাত্রাপথ, অঙ্কনশৈলী যতই ভিন্ন হোক না কেন, তাদের সকলেরই উদ্দেশ্য কিন্তু এক, এই লোকশিল্পকে আরও সর্বজনীন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের উপযুক্ত করে তোলা।

কঠিন বাস্তবে দাঁড়িয়ে শিল্পের ভবিষ্যৎ

হাজার আশঙ্কা, দোলাচল আর প্রশ্নের মাঝেও একথা পরম সত্য, যেকোনও লোকশিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সেই শিল্পের ধারক ও বাহক– কারিগর সম্প্রদায়। মাসান শিল্পের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই মোটেই। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর পেশাদার শিল্পীদের চরম দারিদ্র্য এই শিল্পের অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলপাইগুড়ির মালাকার শ্রেণির মানুষদের চারণভূমি মালকালি গ্রামে গেলে এই চিত্র সহজেই চোখে পড়ে। রাজকুমার মালাকার, ফণী মালাকারের মতো বহু মানুষের পরিবার যেখানে বংশপরম্পরায় করে আসছেন মাসানের কাজ কিন্তু শিল্পের উপযুক্ত মূল্য জোটে না। নীহার, মধুসূদন কিংবা কবিতা হারকূটের মতো শিল্পীরা এই শৈলীর চর্চার মাধ্যমে আশার আলো দেখাচ্ছেন ঠিকই, তবে সর্বস্তরে সচেতনতা না দেখা দিলে এই শিল্পের জীবাশ্মে পরিণত হতে হয়তো বেশিদিন লাগবে না।

 

কৃতজ্ঞতা:
১. ড. বিমলেন্দু মজুমদার, প্রাক্তন শিক্ষক ও গবেষক
২. নীহার মজুমদার, শিল্পী
তথ্যঋণ ও চিত্রসূত্র:
১. Eastern Zonal Cultural Centre
২. Indianfolkart.org
৩. https://www.observerbd.com/news.php?id=261216
৪. https://m.theindependentbd.com//post/250507#:~:text=Masan%20painting%20is%20one%20of,word%20of%20Hindu%20crimination%20ground).
৫. http://mniharartist.blogspot.com/?m=1

 

More Articles