প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও আগুন! কীভাবে পুড়ে ছাই হলো জ্যোতি বসুর স্মৃতিধন্য হলং বাংলো?

Hollong Bungalow Fire: আগুন লেগেই বাংলোতে থাকা একটি এসিতে বিস্ফোরণ হয়। কাঠের বাংলো হওয়াতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত।

উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি প্রবল। তবু, সেই প্রাবল্য আগুন নেভাতে পারল না। পুড়ে ছাই হয়ে গেল বাংলার এক ঐতিহ্য। আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের হলং বাংলোতে বীভৎস আগুন। দাউদাউ করে জ্বলেছে উত্তরবাংলার হেরিটেজ এই বাংলো। আটটি ঘর পুড়ে ছাই। এমন বৃষ্টির আবহাওয়ার মধ্যে আগুন লাগল কীভাবে?

প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ডটি ঘটেছে। রাত ৯টা নাগাদ আগুন লাগার ঘটনা প্রথম নজরে আসে। আগুন লেগেই বাংলোতে থাকা একটি এসিতে বিস্ফোরণ হয়। কাঠের বাংলো হওয়াতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। জলদাপাড়া ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের ডিএফও পারভিন কাসওয়াঁ জানিয়েছেন, হাসিমারা এবং ফালাকাটায় দমকলকে খবর দেওয়া হয়। জঙ্গলের ভিতরে গাড়ি নিয়ে দমকলকর্মীরা ঘণ্টাখানেক পরে ঢোকেন। তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে সমস্তটাই ছাই। তবে জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকায় বাংলোতে কোনও পর্যটক ছিলেন না।

১৯৬৭ সালে তৈরি হয় এই বনবাংলোটি। বছরখানেক আগেই বাংলোটির সংস্কার করা হয়। রাজ্য সরকারের বন দফতরের অন্যতম মূল্যবান সম্পত্তি ছিল হলং বাংলো। জলদাপাড়ার জঙ্গল ঘেরা এই সুদৃশ্য বনবাংলোয় রাজ্যের ভিভিআইপি থেকে আমলারা যেমন থাকতেন, দেশ-বিদেশের পর্যটকদরাও আসতেন নিয়মিত। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অত্যন্ত পছন্দের ছিল এই বাংলো। প্রতি গ্রীষ্মে নিয়মিতই আসতেন তিনি।

আরও পড়ুন- রিল তৈরিতেই ব্যস্ত! রেলের কবচের ব্যবস্থা কেন করতে পারলেন না রেলমন্ত্রী অশ্বিনী?

পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের অধীনে রয়েছে এই বন বাংলো। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৭-৮ কিমি পথ পেরিয়ে এই বাংলোর অবস্থান। যাতায়াতের ঘন সবুজ পথে হাতি, গণ্ডারের আনাগোনা। বর্ষার কারণে ১৫ জুন থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বাংলা বন্ধ রাখা হয়। নৈসর্গিক পরিবেশই এই বাংলোর প্রতি আকর্ষণের মূল কারণ। তবে হলং বাংলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখান থেকে সহজেই জলদাপাড়া এলিফ্যান্ট সাফারি করা যায়। এই ভয়াবহ আগুনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হাজারও মানুষ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। বহু মানুষেরই এই বাংলোতে কাটানো পুরনো স্মৃতি উস্কে দিয়ে ধ্বংস হয়ে গেল হলং বাংলো। ২০১০ সালের জুন মাসেই এমনই এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে গিয়েছিল বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পের অন্তর্গত জয়ন্তী বনবাংলো।

তবে এই বৃষ্টির মধ্যে, বাংলোর আগুনে পুড়ে যাওয়াকে নিছকই দুর্ঘটনা বলেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শর্ট সার্কিট ঘটেছে না ঘটানো হয়েছে এই প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন এই ঐতিহ্যবাহী বাংলোকে পুড়িয়ে দিয়ে এখানে কোনও অন্য সংস্থার বিলাসবহুল হোটেল তৈরিও হতে পারে। সেই আশঙ্কা একেবারেই যে অমূলক তা বলা যাচ্ছে না এখনই।

More Articles