বিজেপির প্রার্থী হবেন কারা? গভীর রাতের বৈঠকে যা ঠিক করলেন মোদি-শাহ
BJP Candidates 2024 Lok Sabha Election : ২০১৯ সালের নির্বাচনে যে আসনগুলিতে লড়েও জিততে পারেনি বিজেপি সেই আসনগুলিতে নিজেদের অবস্থানের উন্নতির দিকে চেষ্টা করছে বিজেপি।
২০২৪ পাখির চোখ। বিজেপির, বিরোধীদেরও। বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই সংসদে দাবি করেছেন যে, বিজেপি একাই লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ টি আসন পাবে। এতটা আশাকে বাস্তবে পরিণত করতে গেলে দরকার যোগ্য সৈনিক। বিজেপির হয়ে লড়ে আসন ছিনিয়ে আনতে পারবেন যে সৈনিক। ভারতীয় জনতা পার্টি তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিচিত মুখ বা দীর্ঘদিনের নেতা হলেই যে টিকিট মিলবে, এমনটা ২০২৪ সালের নির্বাচনের ক্ষেত্রে নাও খাটতে পারে। প্রার্থীদের তালিকা শিগগিরই ঘোষণা করতে চলেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের মতে, বিজেপি আসন্ন নির্বাচনী লড়াইয়ে দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রার্থী বাছাই করতে জনসাধারণের কথা শুনছে, সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মাথায় রাখছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রার্থীদের বাছাই করতেই বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা সহ উচ্চস্তরের নেতারা। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই ৫৪৩টি লোকসভা আসনের কে কে বিজেপির প্রার্থী হবে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন মোদি-শাহরা। নির্বাচন কমিশন তারিখ ঘোষণা না করলেও, আশা করা হচ্ছে এপ্রিল-মে মাসেই নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন- ২০২৪ ভোটে শিকে ছিঁড়বে? কতগুলি আসনে জিততে পারে কংগ্রেস ও জোট ‘ইন্ডিয়া’?
বিজেপি প্রার্থীদের বিষয়ে তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিক্রিয়া চাওয়ার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। নমো অ্যাপ ব্যবহার করে, জনসাধারণকে বর্তমান সাংসদদের সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। চিরাচরিত তথা প্রচলিত পদ্ধতি থেকে সরে এসে এবার মানুষের মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। ভোটারদের, তাঁদের এলাকায় তিনজন জনপ্রিয় নেতার বিষয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। দলের মতে, এই তৃণমূল স্তর থেকে খোঁজ খবর করা মূল লক্ষ্যই হচ্ছে প্রার্থীরা যাতে স্থানীয় জনগণের আবেগকে বুঝতে পারেন। স্থানীয় মানুষ যাতে নিজের প্রার্থীকে চেনেন, প্রার্থীকে ভরসা করেন। সবটা খতিয়ে দেখতেই তাই এই বিশেষ কর্মকাণ্ড।
গত দুই বছরে, বিজেপি ক্রমাগত দলের সাংসদদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া চেয়েছে, সাংসদদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করেছে, সমস্যার সমাধান করেছে। প্রার্থী বাছাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটিকে আরও উন্নত করতে, বিজেপি প্রতিটি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা নিয়ে খুঁটিনাটি প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য সমীক্ষক সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়েছে।
মন্ত্রীদের লোকসভা আসন পরিদর্শন, প্রতিবেদনগুলি সংকলন করা, বর্তমান সাংসদদের কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী এবং সাংগঠনিক সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য নিয়ে রাজ্য-স্তরের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে তা একত্রিত করা হয়। প্রতিটি রাজ্যের বিজেপির অভ্যন্তরীণ কমিটি জেপি নাড্ডা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষের মতো শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
অন্যান্য দলের প্রার্থীদেরও আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়েছে, যে সাংসদের 'পারফর্ম্যান্স' খারাপ, তাঁদের টিকিট অবিলম্বে বাতিল করা হবে। এর ফলে অন্তত ৬০-৭০ জন বর্তমান সাংসদের টিকিট বাতিল হতে পারে। এই আসনগুলিতে ঠাঁই হতে পারে নতুন মুখের।
আরও পড়ুন- শাহজাহানকে হারিয়ে জিতে গেল তৃণমূল? লোকসভায় আসন বাড়বে শাসকের?
বিজেপি বলছে, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি অর্থাৎ ওবিসি সম্প্রদায়ের অনেক সাংসদই আবার এই লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে, বিজেপির সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিলেন এই ওবিসি নেতারাই। সেবার ৮৫ জন ওবিসি সাংসদ জিতেছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাত্রি ১১ টা নাগাদ এই বৈঠক শুরু হয়, চলে প্রায় রাত্র ৩ টে অবধি। বিজেপি জানাচ্ছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে যে আসনগুলিতে লড়েও জিততে পারেনি বিজেপি সেই আসনগুলিতে নিজেদের অবস্থানের উন্নতির দিকে চেষ্টা করছে বিজেপি। ভূপেন্দ্র যাদব, ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং মনসুখ মাণ্ডব্য সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধারণ নির্বাচনে এবার মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিজেপি সংসদের উচ্চকক্ষে সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় এই মন্ত্রীদের রাজ্যসভার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে।