আপনার দেহেই তৈরি হয় 'গাঁজা'! গবেষকদের এই আশ্চর্য আবিষ্কার চমকে গিয়েছে বিশ্ব

Body Produces Cannabis : বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রজাতিই নিজের দেহে 'গাঁজা' উত্পাদন করে।

মন অস্থির, মানসিক চাপ পিষে ফেলছে প্রতিনিয়ত, বাস্তবে পালাবার কোনও পথ নেই, অথচ এই মুহূর্তেই কিঞ্চিৎ শান্তি না পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে? অনেকেই এই অবস্থায় চূড়ান্ত আস্থা রাখেন নেশায়! পানীয়ের থেকেও বেশি শুষ্ক নেশায়। ক্ষণিকের জন্য হলেও এই বাস্তবে থেকেও এক অন্য জগতে থাকতে চান মানুষ, চাপহীন। তবে এই ক্ষণিকের শান্তি পেতে গিয়ে ভোগান্তিও কম নয়। মদ হোক বা গাঁজা, নেশা মানুষকে মুক্তি দিতে গিয়ে বাঁধনে ফেলে। তবে একটা আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাইরে থেকে গাঁজা খেলেই যে আপনার জীবন চাপমুক্ত হবে এমন নয়। আপনার শরীর কিন্তু নিজস্ব গাঁজা উৎপাদন করে, শরীরের মধ্যেই! আমাদের শরীর নিজে থেকেই ক্যানাবিনয়েড যৌগ উৎপাদন করে আমাদের চাপ থেকে সরিয়ে রাখে! কীভাবে?

মানবদেহ স্বাভাবিকভাবেই একটি রাসায়নিক তৈরি করে যা ডেল্টা-৯-টেট্রাহাইড্রোকানাবিনল বা THC নামে বেশি পরিচিত। এটির গঠন গাঁজার সাইকোঅ্যাকটিভ যৌগ এবং ক্যানাবিডিওলের (CBD) মতোই। এন্ডোক্যানাবিনয়েডস হিসাবে পরিচিত এই যৌগগুলি ১৯৯২ সালে শনাক্ত করা হয় প্রথম। তবে ব্যাপারটা যে আসলে কী তা বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারেননি তেমন। তবে ধীরে ধীরে নানা গবেষণায় প্রমাণ মেলে যে, এই যৌগগুলি শারীরিক নানা ক্রিয়াকলাপে অদ্ভুত ভূমিকা পালন করে। শেখা, স্মৃতিতে ধরে রাখা, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে এই যৌগগুলি নাকি ব্যাপক কাজ করে।

শুধু মানুষই এন্ডোক্যানাবিনয়েড তৈরি করে এমন না। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রজাতিই নিজের দেহে 'গাঁজা' উত্পাদন করে। সম্ভবত ক্যানাবিস স্যাটিভা উদ্ভিদ থেকে উত্পাদিত ক্যানাবিনয়েডের আবির্ভাবের লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকেই মানুষ ও মেরুদণ্ডীদের শরীরে গাঁজা উৎপাদিত হয়।

আরও পড়ুন- ভরপুর গাঁজা খেলেই পকেটে ঢুকবে প্রায় ৮৮ লাখ টাকা! কোথায় রয়েছে এমন ‘স্বপ্নের’ চাকরি?

একটি নতুন গবেষণায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রবল চাপে থাকা ইঁদুর মস্তিষ্ক অ্যামিগডালায় এন্ডোক্যানাবিনয়েড উৎপাদন করে। এই যৌগগুলি মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস, মানে যে অঞ্চলটি স্মৃতি ও আবেগের সঙ্গে যুক্ত, থেকে আসা মানসিক চাপের সংকেতগুলিকে দমন করে।

বিজ্ঞানীরা তখন ইঁদুরের মস্তিষ্কে ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর (CB1) বন্ধ করে দেন করে। দেখা যায় চাপের সঙ্গে যুঝতে পারার ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে যায় ওই ইঁদুরদের। চাপে থাকায় চিনিযুক্ত তরল খাবার একেবারেই পছন্দ করত না ওই ইঁদুররা। গবেষকরা বলছেন, স্ট্রেস-সম্পর্কিত সমস্যাযুক্ত মানুষদের মধ্যেও প্রায়ই এমনটা দেখা যায়। তবে একথা ঠিক, বিষয়টি এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ইঁদুরের মধ্যেই দেখা গিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, সম্ভবত একই ঘটনা মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি তাই হয় তবে এটি স্ট্রেস-সম্পর্কিত মানসিক রোগের চিকিত্সার নতুন পথ দেখাতে পারে।

মস্তিষ্ক চাপের মধ্যে দিয়ে গেলে কীভাবে দেহে নিজে থেকেই ক্যানাবিনয়েড তৈরি হচ্ছে, এই বিষয়টি মানসিক রোগের কিছু থেরাপিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ট্রেস-সম্পর্কিত রোগগুলির চিকিৎসায় দেহের ভেতরে উৎপাদিত ক্যানাবিনয়েডকে ব্যবহার করা যেতে পারে কিনা তা নির্ধারণ করা এই গবেষণার মূল লক্ষ্য। আপাতত গোটা বিষয়টিই রয়েছে পরীক্ষার স্তরে। তবে, যদি সত্যিই দেহ নিজে থেকে গাঁজা উৎপাদন করে চাপ কমায়, এ মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য বাঁকবদল, নির্দ্বিধায় বলা যায়।

 

More Articles