ভিড়, ভক্ত, ফাংশান, উন্মাদনা! উত্তমকুমারকে যেভাবে আগলে রাখতেন এই মস্তানরা
Uttam Kumar Mastan: সুপার সেলিব্রিটি হওয়ার পর উত্তমকুমারের ড্রাইভার এবং নিরাপত্তা রক্ষীর দায়িত্ব পালন করতেন ন্যাপা।
মস্তান আর মহানায়ক? এও কি সম্ভব? কোথায় রুপোলি পর্দা আর কোথায় পাতালপুরী! শিরোনাম দেখে যদি এসব ভাবনাই আপনার মাথায় ঘোরে, যদি ভাবেন এসব বাস্তব নয়, নেহাত জল্পনা বা রটনা বা নির্লজ্জ মিথ্যাচার— তাহলে উত্তরে বলি, এ বাস্তব! ঘোর বাস্তব!
আসলে একটা কথা বুঝে নিতে হবে! ১৯৫০, ৬০ কিম্বা ৭০-এর দশকে কলকাতার সামাজিক জীবনে মস্তান এক অত্যাবশকীয় উপস্থিতি। সমাজ, রাজনীতি, খেলার মাঠ, ফাংশন, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি! সর্বত্র জড়িয়ে মস্তানরা। উত্তম কুমারও এর ব্যতিক্রম নন, তাঁর জীবনেরও নানা পর্যায়ে এসেছে বিভিন্ন মস্তানরা। রীতিমতো পাশে দাঁড়িয়েছে মহানায়কের। আর এই আখ্যানের প্রথম চরিত্রের নাম ন্যাপা ওরফে নেপাল।
মুম্বই তখন বম্বে। আর বাংলায় চলছে উত্তমপর্ব। গুরুদেব দর্শনে অগুনতি মানুষ ভিড় করছেন ভবানীপুরে, রোজ, প্রতিদিন। পরিচিত পাড়ায় অহরহ বাইরের লোক। উদ্দ্যেশ্য একটাই। যদি একবার গুরুকে চোখে দেখা যায়। দুর্গাপুজোর পর মহানায়কের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো। ওই লক্ষ্মীপুজোই একমাত্র সুযোগ রুপোলি পর্দার স্বপ্নের নায়ককে কাছ থেকে দেখার। ব্যাস আর কী! ভবানীপুরের গিরীশ মুখার্জি রোডের ফুটপাতে ভোররাত থেকে লোকের ভিড়। ভরসন্ধ্যায় তাঁকে একটু, এক ঝলক চোখের দেখা দেখতে এটুকু কষ্ট করতে একপায়ে খাড়া উত্তমপ্রেমীরা। কিন্তু এই ভিড় সামলানো তো চারটিখানি কথা নয়! তার উপর প্রডিউসার, জলসার কর্তারা তো রয়েইছে। তারপর ধরুন, মহানায়ক কোনও পাবলিক ফাংশনে উঠেছেন। ভিড়ে ছয়লাপ চত্বর। পদপিষ্ট হওয়ার উপক্রম। এই সব পরিস্থিতিতে কে আগলে রাখবে মহানায়ককে? পুলিশ, ক্লাবকর্তাদের উপর তো আর মহানায়কের নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়া যায় না! তবে? এই সময়গুলিতে কে হবেন ছায়াসঙ্গী? মহানায়ক উত্তমকুমারের জীবনের এরকম হাজার প্রশ্নের একটাই সহজ উত্তর ছিল, ন্যাপা। নেপাল।
আরও পড়ুন- ধোঁয়াটে ক্রিক রো-র ঝলমলে জলসা! কলকাতা কাঁপাত মস্তান ভানু বোসের কালীপুজো
নেপালের পদবি কারও মনে নেই। তবে দীর্ঘ পেশিবহুল চেহারার ন্যাপাকে দিব্যি মনে করতে পারেন উত্তমের পাড়ার বাসিন্দারা। ন্যাপার স্থানীয় স্তরে পরিচিতি ছিল ডাকাবুকো মস্তান হিসেবেই। রীতিমতো ডাম্বেল ভাঁজা শরীর। ভিড়ের মাঝে বাজপাখির মতো দু'হাতে আগলে রাখতেন প্রিয় উত্তমকে। ন্যাপার আরেকটা পরিচয় ছিল, তিনি ছিলেন উত্তমকুমারের ড্রাইভারও। আদতে হাজরা রোডের বাসিন্দা ন্যাপাকে অল্প বয়স থেকেই চিনতেন উত্তমকুমার। সেই সূত্রেই সম্পর্ক। সুপার সেলিব্রিটি হওয়ার পর উত্তমকুমারের ড্রাইভার এবং নিরাপত্তা রক্ষীর দায়িত্ব পালন করতেন ন্যাপা। উত্তমের বাসভবনের ভিড় আর ইন্ডাস্ট্রির নানাজনের নানা আবদারের 'হুজ্জুতি' সামলাতেন দীর্ঘ চেহারার তরুণ কুমার। দরজায় সদা সতর্ক ন্যাপা। আর বাড়ির বাইরে ন্যাপা একাই বাজপাখি।
হাজরার মোড়ে সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়িয়েছে উত্তমকুমারের। কালো সানগ্লাস পরে বসে আছেন উত্তম। কী মনে করে একটু গাড়ির কাঁচটা নামিয়েছেন। মুহূর্তে, কিছু বুঝে ওঠবার আগেই গাড়ি ঘিরে ফেলেছে ভক্তরা। এই অবস্থায় ভরসা আর কে হবে ন্যাপা ছাড়া! ভক্তদেরও অক্ষত রাখতে হবে আবার গুরুর গায়েও যেন আঁচ না পড়ে। বহু কষ্টে ভিড় থেকে গাড়ি বের করে ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর দিকে ছোটালেন ন্যাপা। এই ঘটনা একদিনের নয়। প্রায়শই ভক্তের ভালোবাসার অত্যাচার থেকে বাঁচাতে মহানায়কের ত্রাতা হতেন ন্যাপা।
তবে ডাকাবুকো হলেও ন্যাপাকে গুন্ডা-মস্তান বলতে নারাজ সচ্চিদানন্দ ব্যানার্জি। উত্তমকুমারের বাড়ির তিনটি বাড়ির পরই তাঁর ঘর। উত্তমের সময়টাকে নিজের যুবক বয়সে দেখেছেন সচ্চিদানন্দ। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এই নিপাট ভদ্রলোকের মতে, "ন্যাপাদাকে কোনও ক্রিমিনাল বা গুন্ডা-মস্তান বলা যাবে না। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। লোকে খুব ভালোবাসতো।" উত্তম জমানায় ভবানীপুর বা দক্ষিণ কলকাতার পাতালপুরী কাঁপাচ্ছে কালীঘোষ, বুলু মজুমদার, টুলু মুখার্জিরা। ন্যাপা বা নেপাল মস্তানিতে সেই কৌলীন্য কোনওকালেই অর্জন করেননি হয়তো। তবে এলাকায় ডাকসাইটে মস্তান ন্যাপা পেয়েছিলেন উত্তম সান্নিধ্য। এই তাঁর জীবনের চরম সার্থকতা।
১৯৬১ সালে মুক্তি পেল 'সপ্তপদী', ১৯৬৩-তে 'দেয়া নেয়া', ১৯৬৫ সালের 'সূর্যতপা' এবং 'থানা থেকে আসছি'। উত্তমকুমারের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। এই সোনায় মোড়ানো ষাটের দশকের শুরুতেই ঘটেছিল একটি অপ্রীতিকর ঘটনা। 'শাপ মোচন', 'বরযাত্রী'-র প্রযোজক পরিচালক সুধীর মুখার্জি উত্তমকে দিয়ে একটি ছবি করাতে চাইলেন। ছবির নাম 'শেষ পর্যন্ত'। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে ছবির গান রেকর্ডিং সম্পন্ন হলো। উত্তমের বিপরীতে নায়িকা বাছা হলো সুলতা চৌধুরীকে। এদিকে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বেঁকে বসলেন উত্তমকুমার। প্রোডিউসারের মাথায় হাত! এই সময়ই একটা ঘটনা ঘটেছিল বলে জনশ্রুতি। সুধীরবাবুর ভাই নাকি উত্তমকুমারকে 'থ্রেট' দেওয়ার জন্য মস্তান নিয়োগ করেছিলেন। যে-সে মস্তান নয়, খোদ রাম চ্যাটার্জির দলের রইস মস্তান। শোনা যায়, কোনও এক দ্বিপ্রহরে স্টুডিওর মেকআপ রুমে বসে খোদ উত্তমকুমারকেই ঠান্ডা গলায় কিছু বলেছিল ওই মস্তান। তাতেও মত বদলাননি মহানায়ক। তবে সুর নরম করে অন্য একটি ছবি করে দিয়েছিলেন একই ব্যানারে। ছবির নাম 'দুই ভাই'। আর উত্তমকে নিয়ে ভাবা 'শেষ পর্যন্ত' ছবিটি শেষমেশ করেন বিশ্বজিৎ। সমস্যা সেই সময়ের মতো মিটল।
আরও পড়ুন- ‘চাকরি দিলাম, মা-কে খাওয়াবি’! জ্যোতি বসুকেও থামিয়ে দিতেন মস্তান-মন্ত্রী রাম চ্যাটার্জি
এই ষাটের দশকেই কলকাতার সেরা মস্তান ভানু বোসের সঙ্গে উত্তমকুমারের বন্ধুত্ব চর্চায় আসে। সৌজন্যে, ক্রিক রো-র কালীপুজোর জলসা। শহরের এই সেরা মস্তানের সঙ্গে নৈকট্য কি রাম চ্যাটার্জির সঙ্গী-সাথীদের কাছ থেকে পাওয়া অনভিপ্রেত ঘটনার কারণেই? এতদিন পরে সেটা বলা আজ মুশকিল। তবে ভানু বোসের সঙ্গে ওই ষাটের দশকেই উত্তমকুমারের বন্ধুত্ব। সাংবাদিক শংকর লাল ভট্টাচার্যের ছোটবেলার স্মৃতিটা একটু শোনা যাক, যাদের বাড়ির গ্যারাজ ঘরেই ভানু বোসের জলসায় আসা অতিথিদের আপ্যায়ন করা হতো । শংকর লালের জবানিতে, "উত্তম বাবু ভানুদাকে খুবই সমীহ করতেন। একবার কী হলো, টালিগঞ্জে শুটিং শেষ করেই জলসায় চলে এলেন উত্তমবাবু। অনুনকরণীয় ভঙ্গিতে মাইক টেনে নিয়ে বললেন দু-চার কথা। সঙ্গে এ-ও জানালেন বাড়ি ফিরে জামা কাপড় বদলে আবার আসছেন তিনি। এলেনও তাই। গভীর রাতে পাজামা-পাঞ্জাবি, শাল গায়ে মঞ্চে আবির্ভূত হলেন মহানায়ক। তাঁকে কাছ থেকে দেখে আবেগতাড়িত মধ্যবিত্ত। কোনও ফিল্মি ডায়লগ নয় বরং পরিচিত নাটকের কোনও অংশ পাঠ করে শোনালেন উত্তম।" ভানু বোসের সঙ্গে এমনই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল উত্তমকুমারের। সত্যিই আন্তরিক। কারণ এই অনুষ্ঠানে কোনও সাম্মানিকের বিষয় ছিল না। ভানু বোসের সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থায়ী হয়েছিল উত্তমকুমারের। বসুশ্রী র মালিক মন্টু বোস আয়োজিত তারকা আড্ডায় উত্তমকুমারের সঙ্গেই দেখা যেত ভানু বোসকেও।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার রাজনীতি গড়াচ্ছিল অন্য খাতে। ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট। ১৯৬৯ সালে নকশালবাড়ির অভ্যুদয়। দক্ষিণে দাপট বাড়ছিল নকশালপন্থীদের। টালিগঞ্জ, কুঁদঘাট যেন নকশালদের গেরিলা জোন হয়ে দাঁড়াল। প্রায় ঝড়ের মতো সত্তরের দশক শুরু হলো। ১৯৭১ সালে উত্তমের জীবনে ঘটে গেল সেই বিতর্কিত অধ্যায়। তুঙ্গে নকশালপন্থী আন্দোলন। ১৯৭১-এর ৫ অগাস্ট। ময়দানে পুলিশের এনকাউন্টারে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন সরোজ দত্ত। অনেকের মতে, উত্তমকুমার মর্নিং ওয়াকে গিয়ে এই এনকাউন্টার দেখেন। তবে উত্তমপ্রেমীদের অনেকের দাবি, একটা এনকাউন্টার উত্তম দেখেছিলেন ঠিকই কিন্তু সেটা যে সরোজ দত্তেরই তা নিশ্চিত না। যাই হোক, এই ঘটনা জানাজানি হতে উত্তমকুমারের জীবনে সংকট ঘনাল। কুঁদঘাটে তখন প্রবল দাপট নকশাল নেতা ননী আইচ এবং তাঁর সশস্ত্র বাহিনীর। শোনা যায়, সরোজ দত্তের মৃত্যুর পর উত্তমকুমারের উপর পাল্টা চাপ শুরু হয় নকশালদের তরফে। কানাঘুষো চলতে থাকে, উত্তমকুমারকে 'সাউথের নকশালরা' বুঝে নেবে। ওই বছরই কলকাতা ছাড়েন উত্তম। পাড়ি দেন বোম্বেতে।
বাংলায় নকশালদের পাল্টা রাষ্ট্রবাদী ছাত্র সংগঠন গড়ে উঠল, ছাত্র পরিষদ। জন্ম নিলেন দুই তারকা ছাত্রনেতা, প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং সুব্রত মুখার্জি। ১৯৭২ সালের 'বিতর্কিত' বিধানসভা ভোটে জয়ী হয় কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন সিদ্ধার্থ শংকর রায়। মন্ত্রিসভার কনিষ্ঠতম সদস্য হন ছাত্রনেতা সুব্রত মুখার্জি । ১৯৭২-এই কলকাতায় ফিরে আসেন উত্তমকুমার কিন্তু তখনও বেশ উত্তেজনা চলছে। কাজের জন্য নকশাল অধ্যুষিত টালিগঞ্জে যেতে হয় উত্তমকুমারকে। কিছু একটা ঘটতেই পারে। পুরনো বন্ধু-মস্তানদের আর আগের মতো দাপট নেই। তাহলে সমাধান? বসুশ্রীর আড্ডায় বসে তরুণ মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি বললেন, "উত্তমবাবু আপনি শ্যুটিং বন্ধ করবেন না। আপনাকে প্রটেকশন দেবে কেষ্ট দত্ত ওরফে ফাটা কেষ্ট।"
এভাবেই উত্তমকুমারকে নিরাপত্তা দিতে টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়ায় পা রাখেন শিয়ালদার বিখ্যাত ফাটাকেষ্ট। এই ফাটাকেষ্ট-র সঙ্গে আজীবন বন্ধুত্ব ছিল উত্তমকুমারের। ফাটাকেষ্টর কালীপুজোয় নিয়মিত অতিথি হতেন উত্তমকুমার। ফাটাকেষ্টর কালীপুজোর বর্তমান মুখ্য সংগঠক প্রবন্ধ রায় স্মৃতি খুঁড়ে জানালেন, "শুধু উত্তমবাবু নিজে না, সুপ্রিয়া দেবী, কন্যা সোমাকে নিয়েও আসতেন কেষ্টদার জলসায়। আমরা দেখতাম। আমরা তখন অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক।"
আরও পড়ুন- গালে ছুরি থেকেই নাম ফাটাকেষ্ট! এই কালীপুজোয় আসতেন বচ্চনও
আসলে মস্তান মানে শুধু ত্রাস নয়, বহুক্ষেত্রেই মস্তানরা ত্রাতা। তারা পাশে থাকলে বহু 'টেনশন' দূর হতো কারও কারও জীবন থেকে। প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, "পক্ষে থাকলে মস্তানরা খুব ভালো বন্ধু হয়। যা অন্য কারও কাছে প্রত্যাশা করা যায় না।" কথাটা উত্তমকুমারের জন্যও প্রযোজ্য। এই যে মহানায়ককে নিরাপত্তা দিতেন মস্তানরা, তার জন্য নগদ অর্থের বিনিময় ছিল কি? বোধহয় না। মস্তানদের কাছে উত্তমকুমারের সান্নিধ্য ছিল বড় বিষয়। 'স্টেটাস সিম্বল'। বিনিময়ে একটা আবদার থাকত তাদের গুরুর কাছে। তাদের বাৎসরিক কালীপুজোর জলসায় গুরুকে আসতে হবে। কথা রাখতেন উত্তমকুমার। মধ্য কলকাতার মস্তানদের কালীপুজোর জলসায় শুধু যেতেন তাই না, নিজের অনুষ্ঠান বলেই মনে করতেন। যেমন একবার, ফাটাকেষ্ট উত্তমকে বললেন, "দাদা আমার অনুষ্ঠানে প্রতিবছর জহরদা (জহর রায়) আসেন। একবারও ভানুবাবু (ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়) আসেন না। আপনি একটু বলবেন?" প্রিয় কেষ্টর অনুরোধ কি ফেলতে পারেন উত্তমকুমার? সেই রাতেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির টেলিফোন বেজে উঠল। ভানু পুত্র গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন সেদিনের কথা, "ওই দিন ফোন করলেন উত্তমকাকু। বাবা ফোন ধরতেই বলেছিলেন, 'কী ব্যাপার ভানুদা, শুনলাম তুমি নাকি ফাটাকেষ্টর পুজোয় যাও না। শোনো, এবছর তুমি যাবে। আমি কথা দিয়ে এসেছি'।" ভানু বাবু আর কী বলবেন! সেবছর ফাটাকেষ্টর পুজোর জলসা যেন অন্য মাত্রা পেল কৌতুক সম্রাট ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে। শিয়ালদা মাতোয়ারা বাঙাল সংলাপের জাদুতে।
ফাটাকেষ্টর সঙ্গে উত্তমকুমারের বন্ধুত্ব গভীর ছিলই বলা যায়। কলেজস্ট্রিট বাটার কাছে উত্তম পুত্র গৌতম একটা ওষুধের দোকান করেছিলেন। মেডিক্যাল কলেজের কাছেই এই বড় ওষুধের দোকানের নেপথ্যে ছিলেন ফাটাকেষ্ট, তাই সহজ হয়েছিল এমন মহার্ঘ্য জায়গা পাওয়া। কিন্তু ফাটাকেষ্টর সাহায্য নিয়ে বিপদেও পড়তে হল উত্তম পুত্রকে। ফাটাকেষ্টর প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী সোমেন-জীবন-পল্টুরা মাঝে মধ্যেই দোকানের সামনে রাস্তায় বোমাবাজি শুরু করল। শিয়ালদা অঞ্চলে তখন মস্তানদের বোমাবাজি একটা ট্রেডমার্কের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শোনা যায়, ওই দোকানের সামনেই দিনের পর দিন বোমাবাজির জেরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা। পরে সম্ভবত দোকানটা উঠে যায়। সে যাই হোক, ফাটাকেষ্ট আর উত্তমকুমারের অতি উত্তম যোগ মৃত্যুর দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মহানায়ককে ঘিরে গল্প যেন ফুরোয় না। মরে গিয়েও কালীপুজো আর জলসা অমর করেছে 'মস্তান' ফাটাকেষ্টকেও। এই হারিয়ে যাওয়া জলসা আর জৌলুসের স্মৃতিতে আজও মূর্ত উত্তমকুমার। সবার উত্তম। চিরকালের মহানায়ক।